রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী আরও দুই নেতা যেসব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে  ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জাগো হে কওমি তারুণ‍্য! রাতেই ঢাকাসহ তিন অঞ্চলে ঝড়ের আভাস অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হতে হবে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি: বাণিজ্য উপদেষ্টা চবির আরবি বিভাগের নতুন সভাপতি অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার ডেঙ্গুতে একদিনে ১২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৪০ সিরাতকে ধারণের মাধ্যমেই সত্যিকার পরিবর্তন সম্ভব: ধর্ম উপদেষ্টা সিরাতুন্নবী (সা.) সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার লাইভ ড্র অনুষ্ঠান ২৩ সেপ্টেম্বর

যে কারণে প্রশ্নফাঁস থামানো সম্ভব হচ্ছে না

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তুহিন খন্দকার 
সাংবাদিক

চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রত্যেকটিতেই প্রকাশ্য ঘোষনা দিয়ে ফাঁস হচ্ছে প্রশ্নপত্র যা কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না।

প্রশ্নফাঁস থামাতে সরকার থেকে শিক্ষাবোর্ড, আইনশৃংখলা বাহিনী, গোয়েন্দা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের সমন্বয়ে গৃহীত হয়েছে নানা পদক্ষেপ, এখনো পর্যন্ত যার সবকটিই বিফল। কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না এই ঘৃণ্য একটি অপকর্ম।

চলমান এসএসসি প্রশ্নফাঁসের মহড়ার টানা সাতটি পরীক্ষা গত হবার পর, গত কিছুদিন আগে ধরা পড়লো শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্র সহ ১১ জন অসাধু চক্র। এর মধ্যে রাজধানীর 'উল্লাহ' বাহিনী বোধহয় প্রধান এমনটিই গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে বলে দেখেছি। তবে এদের সবগুলোর মধ্য থেকে নজরে পড়ার মতো ছিলো রাজধানীর ধনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দুজন ছাত্র !

এটি অন্যান্য অভিযুক্তদের থেকে আলাদা কেন?  তার কারণ খুঁজতে আপনাকে খুব বেশিদূর যেতে হবে না বরং ঠিক দুমাস পেছনে তাকালেই জলের মতো স্বচ্ছ হবে কারণটি।

এইচএসসি ফরম পূরণে কলেজটির কতৃপক্ষ উন্নয়ন ফি, কোচিং ফি ও বিবিধ ফি নামে অতিরিক্ত প্রায় সাত হাজার টাকা করে প্রত্যেকটি ছাত্রদের থেকে জোরপূর্বক আদায় করে নিয়েছে যা মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ বহিঃভুত।

এই অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে কলেজটির সকল শিক্ষার্থীরা লাগাতার এক সপ্তাহব্যাপী আন্দোলন চালিয়েছে। কলেজ প্রাঙ্গণে তাদের সর্বপ্রথম মানববন্ধন কলেজ কতৃপক্ষ ছাত্রলীগ ও পুলিশ দিয়ে পণ্ড করে দিয়েছিলো - যার খবর ছবিসহ প্রায় প্রতিটি পত্রিকায় এসেছে।

কলেজে তাদের আন্দোলনে হামলা এবং ফরমপূরণ করতে দেয়া হবে না বা বোর্ডের ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেইল করানো হবে ইত্যাদি নানাবিধ হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে কলেজটির শিক্ষার্থীরা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণেও মানববন্ধন করেছে এহেন অন্যায়ের প্রতিবাদে।

তাতেও প্রশাসনের সুদৃষ্টি না পেয়ে সবশেষে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর পক্ষে এর চেয়ে বেশি আর কিই-বা করার ক্ষমতা ছিলো।

যতদূর জেনেছি শিক্ষামন্ত্রণালয় বরাবর স্বারকলিপি পর্যন্ত ওরা দিয়েছে। এসব কিছুই লাগাতার সপ্তাহব্যাপী সবকটি পত্রিকায় দেখেছি এবং তখনই খুব আফসুস করেছি একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যেখানে ছাত্রদের থেকে নানা ভূতুড়ে ফি'র নাম করে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য এবং দুর্নিতির মহড়া দিয়েছে, সেখানের ছাত্ররা বড় হলে এহেন দুর্নিতি করবে না- এমনটি কী করে বলা যায়।

এরাই তো দুদিন পর যখন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে যাবে কর্মভার নিয়ে তখন জাতি কে সহনীয় মাত্রায় ঘুষ গ্রহণের পরামর্শ দিবে। এরাই যখন সচিবের ভূমিকায় জাতির সেবক হিসেবে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসবে তখন ভক্ষকরূপে কলঙ্কিত করবে দেশের সুশাসনকে। রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে এরা অনৈতিকতার শেকড় বিছিয়ে যাবে সুদৃঢ়চিত্তে।

এতো ভবিষ্যতের কথা বলছিলাম। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতের দিকে যাবার আগেই ফলাফল দেখিয়ে দিয়েছে এই সূর্য্যসন্তানেরা। তারা তাদের শিক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছে ভয়াবহ জঘন্যতা দিয়ে। মাত্র দু'মাসের মাথায় প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অপরাধে ধরা পড়লো এই কলেজের দুজন ছাত্র।

গ্রেফতারকৃত বাকি অন্যান্যদের মধ্যে অভিভাবকও আছে কয়েকজন যাদের খোঁজ নিলে হয়ত জানা যাবে, এরাও ধনিয়া কলেজের মতো কোন না কোন প্রতিষ্ঠানের দুর্নিতিবাজ শিক্ষক বা অসাধু ব্যক্তি হয়ত হয়েও থাকবেন যা অসম্ভবের কিছু নয়।

এই অপরাধে গ্রেফতারকৃত তালিকায় আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্যতম সেরা একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাও।

নৈতিকতাবোধ যেখানে শেখানো হয় সেই শিক্ষালয়গুলোর শিক্ষকদের মধ্য থেকে যখন নৈতিকতা উঠে যায় তখন একটি রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায়। থামানো যায় না প্রশ্নফাঁসসহ নানা বড় ধরণের অপকর্ম।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ