মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫ ।। ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২২ জিলকদ ১৪৪৬


কুরবানীর গুরুত্ব ও ফযিলত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তরিকুল ইসলাম মুক্তার।।

আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিদিষ্ট দিনে, নিদিষ্ট কিছু পশু আল্লাহর নামে জবাই করার নাম কোরবানি। কোরবানি করার পর একজন মুসলমানের মন পরিষ্কার এবং সুন্দর হয়। গরিব-দুঃখী এবং আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণের ফলে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়।

একে অপরের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়। মানুষ যত বড় জন্তুই কোরবানি করুক না কেন, তার গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। বরং পৌঁছে মনের অবস্থা।

কোরবানি মুসলিম সমাজের একটি ঐতিহ্যমণ্ডিত ইবাদত। যুগ যুগ ধরে সারাবিশ্বের মুসলিম সমাজ কোরবানি দিয়ে এসেছে। ঈদের দিনগুলোতে সারাবিশ্বে লাখো-কোটি পশু কোরবানি হচ্ছে। আল্লাহপাক এর মধ্যে বরকত রেখেছেন।

কোরবানির সম্পর্কে হজরত মিখজাফ ইবনে সালিম রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে সা. আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়ে সমবেত লোকদেরকে সম্বোধন করে একথা বলতে শুনেছি, ‘হে লোক সকল! তোমরা জেনে রাখ, প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর প্রত্যেক বছরই কোরবানি করা কর্তব্য। আর যার সামর্থ্য নেই তাদের ওপর কোরবানি কর্তব্য নয়। কারণ আল্লাহ কারও ওপর এমন কোনো কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না, যা তার সাধ্যের বাইরে।’ (তিরমিজি)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ সা. মদিনার ১০ বছর জীবনের প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি : ১৫০৭)

কোরবানির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হজরত ইবরাহীম আ.-এর স্মৃতি। হজরত ইবরাহীম আ. ত্যাগের পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্বে নিজের সন্তানের গলায় ধারালো খঞ্জর চালিয়েছিলেন। তার এ আত্মত্যাগ আল্লাহর কাছে এতই প্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, কেয়ামত পর্যন্ত সব সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে। একবার সাহাবায়ে-কেরাম রা. জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোরবানির তাৎপর্য কী? রাসুল সা. বললেন, কোরবানি করা এটা তোমাদের ধর্মীয় পিতা হজরত ইবরাহীম আ.-এর সুন্নত। সাহাবায়ে-কেরাম আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? নবী করিম সা. বললেন, প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে সওয়াব হবে এবং কোরবানির দিন আল্লাহ তায়ালার নিকট পশু জবাই অপেক্ষা অন্য কোনো আমল বেশি পছন্দনীয় নয়। (মুসনাদে আহমাদ : ২৬০)

কেয়ামতের দিন কোরবানিকৃত প্রাণী ও তার লোম, খুর ও শিংহসহ উপস্থিত হবে। তার রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। কোরবানি শুধু এক আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং নৈকট্য হাসিলের জন্যই করা হয়। কেননা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি তোমার পালনকর্তার উদ্দেশ্যেই নামাজ পড় এবং কোরবানি করো।’ (সুরা কাওসার)।

আল্লাহর নিকট আমাদের কোরবানির গোশত ও রক্ত পৌঁছে না, বরং তোমাদের অন্তরের তাকওয়া ও পরহেজগারি পৌঁছে থাকে। (সুরা হজ : ৩৭)।

সুতরাং কোরবানির করার আড়ালে যদি গোশত খাওয়া, লৌকিকতা অথবা এরূপ কোনো হীন স্বার্থ জড়িত থাকে তা হলে কোরবানি হবে না। তাই এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমান সময়ে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে শুধু নিজের গৌরব বা ক্ষমতা দেখানোর মানসিকতা। কে কত বড় ও দামি গরু কিনবে এটা নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। গরুর গলায় মালা ঝুলিয়ে রাস্তায় ঘোরানো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট করার হিড়িক পড়ে যায়।

এটাকে বলে লোক দেখানো ইবাদত। ফলে কোরবানি করার পরও মানুষের মনের কোনো পরিবর্তন হয় না। বরং আগের তুলনায় হিংসা-বিদ্বেষ এবং শত্রুতা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সহি নিয়তে কুরবানী করার তাওফিক দান করুন।

লেখক: শিক্ষার্থী জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসা মিরপুর ঢাকা।

-এএ


সম্পর্কিত খবর