পাপের চেয়ে আল্লাহর দয়া অনেক বড়
প্রকাশ:
২১ মার্চ, ২০২৫, ০৫:৫৭ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
![]()
|| নাজমুল হুদা মজনু || দুনিয়া একটা পাপাগার। এখানে সবাই পাপী। কেউ ছোট পাপ করে আবার কেউ বড় পাপ করে। তবে সেই পাপী আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়, যে পাপ করে ও মাফ চায়। অনেকে এমন আছেন যে, তার কৃত অপরাধের জন্য হতাশ হয়ে পড়েন; ক্ষমা লাভের আশা ছেড়ে দিয়ে আরো বিপথগামী হয়ে যান। তারা সত্যি বড় হতভাগা। দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দয়ার ব্যাপারে তাদের ধারণা খুবই সঙ্কীর্ণ। এক হাদিসে কুদসিতে আছে– আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তার প্রতি তেমন আচরণ করি।' তাই মানুষের উচিত অপরাধ করে তার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। মহীয়ান গরিয়ান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘যে ব্যক্তি গুনাহের কাজ করে অথবা (গুনাহ করে) নিজের ওপর অবিচার করে, অতঃপর (এ জন্য যখন) সে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, (তখন) সে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালাকে পরম ক্ষমাশীল ও অতীব দয়ালু হিসেবে পাবে।’ (আন্-নিসা :১১০) মানুষের পাপাচার যত অধিক হোক না কেন আল্লাহ জাল্লা শানুহুর দয়ার দুয়ার কখনো বন্ধ হয় না। রাহমানুর রাহিম আল্লাহ তায়ালা তার পাপী বান্দাদের মনের মণিকোঠায় লুকায়িত অনুশোচনার প্রকাশ দেখতে চান। তিনি অপেক্ষা করেন তার বান্দাদের পাপাচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার আশায়। কেননা তিনি চান বান্দা যত পাপই করুক অনুতপ্ত হয়ে তাওবাহ করে তার রহমতের কোলে ফিরে আসুক। তাই যত বড় পাপই হোক কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। মানুষ পাপাচারের প্রতি বেশি আসক্ত; কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ক্ষমা করতে বেশি পছন্দ করেন। তিনি তার হাবিব, রাহমাতুল্লিল আলামিন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ বলেন, (হে নবী,) তুমি (তাদের) বলে দিন, হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছো, তারা আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে (কখনো) নিরাশ হয়ো না; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (মানুষের) সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন, তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (আয-যুমার : ৫৩) তাওবাহ সংক্রান্ত উপরোক্ত আয়াতটির ব্যাপারে একটি হাদিস :- ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু লোক ছিল, যারা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল এবং তা অনেক করেছিল। আরো কিছু লোক ছিল, যারা ব্যভিচার করেছিল এবং তা অনেক করেছিল। তারা এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আর্জি পেশ করল– আপনি যে ধর্মের দাওয়াত দেন, তা তো খুবই উত্তম; কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো এই যে, আমরা অনেক জঘন্য পাপ করে ফেলেছি। আমরা যদি ইসলাম গ্রহণ করি, তবে আমাদের তাওবাহ কবুল হবে কি? এর পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয় (বুখারি- ৪৮১) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কত যে গর্হিত কাজ তার প্রমাণ মেলে কুরআনুল কারিমের সূরা ইউসুফের আয়াতে কারিমায়। হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ছেলে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে হারিয়ে যখন প্রায় পাগলপারা তখন তিনি তার অন্যান্য ছেলের উদ্দেশে বলেন, হে আমার ছেলেরা, তোমরা (মিসরে) যাও এবং ইউসুফ ও তার ভাইকে (আরেকবার) তালাশ করো, (তালাশ করার সময়) তোমরা আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে মোটেই নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে শুধু কাফেররাই নিরাশ হতে পারে। (ইউসুফ-৮৭) যেকোনো অবস্থায় নিজের প্রতি জুলুম অর্থাৎ পাপাচার হয়ে গেলে তখনই কোনো নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধের বদলে তার সন্তুষ্টির দিকে অগ্রসর হতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর পাপী বান্দাদের প্রতি দয়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন, তুমি আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা বড় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু । (আন্-নিসা :১০৬) দয়ালু আল্লাহ তায়ালা কখনো তার বান্দার কোনো নেক উদ্যোগ ব্যর্থ হতে দেন না। আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেন, (সত্যি কথা হচ্ছে,) যে কোনো ব্যক্তিই তাকওয়া ও ধৈর্যের আচরণ করে (সে যেন জেনে রাখে), আল্লাহ তায়ালা কখনােই নেককার মানুষের পাওনা বিনষ্ট করেন না। (ইউসুফ : ৯০) মনে রাখতে হবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রেরিত রাসূল মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ওহি অবতীর্ণ করে মানবজাতির উদ্দেশে হেদায়েতের রাস্তা বাতলে দিয়েছেন। আবার তিনি অবাধ্যতার শাস্তির বিধানও জারি করেছেন। আল-কুরআনে আহকামুল হাকিমিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, (আবার) যে ব্যক্তি তার কাছে প্রকৃত সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং ঈমানদারদের পথ ছেড়ে (বেঈমান লোকদের) নিয়ম-নীতির অনুসরণ করবে, তাকে আমি সে দিকেই ধাবিত করব যে দিকে সে ধাবিত হয়েছে, (এর শাস্তি হিসেবে) তাকে আমি জাহান্নামের আগুনে পুড়িয়ে দেবো, (আর) তা কত নিকৃষ্ট আবাসস্থল! আল্লাহ তায়ালা (এ বিষয়টি) ক্ষমা করবেন না যে, তাঁর সাথে (কোনো রকম) শরিক করা হবে, এ ছাড়া অন্য সব গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন; যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সাথে (কাউকে) শরিক করল, সে (মূলত) চরমভাবে গোমরাহ হয়ে গেল। (আন্-নিসা : ১১৫-১১৬) তবে শিরকের গুনাহ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে হুঁশিয়ারি করা সত্ত্বেও এ থেকে মুক্তির পথ চিরতরে বন্ধ করে দেননি। তাওবার দরজা উন্মুক্ত রেখে বান্দাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সুযোগ অবারিত করে রেখেছেন। আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে বান্দাদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে বিরাট মহানুভবতার অনন্য পরিচয় তুলে ধরেছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কারণ পাপের চেয়ে আল্লাহর দয়া অনেক বড়। রাহমানির রাহিম আল্লাহ তায়ালা তাঁর মুমিন বান্দাদের প্রতি অপরিসীম দয়াবশত কুরআন মাজিদে বলেন, হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা (নিজেদের পাপাচারের জন্য) আল্লাহর দরবারে তাওবাহ করো; একান্ত খাঁটি তাওবাহ; আশা করা যায় এর ফলে) তােমাদের মালিক (আল্লাহ তায়ালা) তোমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন এবং এর বিনিময়ে (পরকালে) তিনি তােমাদের প্রবেশ করাবেন এমন (সুরম্য) জান্নাতে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে (সুপেয়) ঝর্ণাধারা, সে দিন আল্লাহ তায়ালা (তাঁর) নবী এবং তাঁর সাথী ঈমানদারদের অপমানিত করবেন না, (সে দিন) তাদের (ঈমানের) জ্যোতি তাদের সামনে ও তাদের ডান পাশ দিয়ে (বিচ্ছুরিত হয়ে এমনভাবে) ধাবমান হবে (যে, সবদিক থেকেই তাদের এ আলাে পর্যবেক্ষণ করা যাবে), তারা বলবে, হে আমাদের মালিক, আমাদের জন্য আমাদের (ঈমানের) জ্যোতিকে (জান্নাতের জ্যোতি দিয়ে আজ তুমি) পূর্ণ করে দাও, তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও, অবশ্যই তুমি সব কিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান। (আত-তাহরিম-৮) লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক হাআমা/ |