গাজায় বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে উত্তাল বাংলাদেশ
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:২৪ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় দফায় দফায় হামলা করে গণহত্যা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। গত কয়েক দিন ধরে দেশটির বর্বরতার মাত্রা অতীতকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই গণহত্যা বন্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এবার বাংলাদেশেও একযোগে আন্দোলন শুরু হয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশ ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে।

সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বব্যাপী ‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এছাড়া সর্বসাধারণ গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছেন।

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। সোমবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকা যেন পরিণত হয়েছে বিক্ষোভের নগরীতে। দেশের বিভিন্ন স্থানেও একযোগে পালিত হচ্ছে অভিন্ন কর্মসূচি। যে যার মতো করে ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে অংশ নিচ্ছেন মিছিলে।

এসব কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, দ্রুত ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করা হোক। আর যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। 

বাদ জোহর ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে একাধিক ইসলামি দল ও আলেম-ওলামাদের বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদী মিছিল বের করে। মিছিল থেকে জায়নবাদী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। অবিলম্বে এই বর্বরতা বন্ধ করতে আহ্বান জানানো হয়।

সোমবার দুপুর থেকেই ইসরায়েলবিরোধী বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন ও প্লেকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ করেন সর্বস্তরের মানুষ। বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান তারা।এসময় তারা ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’ প্রভৃতি স্লোগানে মুখর করে তোলেন মসজিদের উত্তর পাদদেশ।

এর আগে সকালে বেসরকারি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্মরণকালের সেরা প্রতিবাদ মিছিল করে। বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো মিছিল অব্যাহত আছে। এতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে অংশ নেন। স্লোগান দেন দখলদার ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে।

এদিকে বিকেলে শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বড় আকারে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাদ আসর মহাখালী এলাকায় শুরু হবে প্রতিবাদ মিছিল। এছাড়া বায়তুল মোকাররম থেকেও বের হয়েছে কয়েকটি মিছিল।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সবার মুখে মুখে গাজাবাসীদের জন্য সমবেদনা ও ইসরায়েলের প্রতি ক্ষোভের স্লোগান শোনা যায়।

এর বাইরেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর জায়গায় জায়গায় কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সামনে কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গাজাবাসীর চিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে শাহবাগে চিকিৎসকরাও কর্মসূচি পালন করেছেন।

‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্ররা টিএসসির রাজু ভাস্কর্য চত্বরে দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। সকাল থেকেই তারা সেখানে অবস্থান করছে। সংগীত ও স্লোগানের মাধ্যমে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

বিশ্বব্যাপী আহুত হরতালের সমর্থনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর পল্টন জোনের সংহতি সমাবেশ হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। 

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা পৃথিবীর সমস্ত নৃশংসতার সীমা ছাড়িয়েছে। মানবাধিকারের ধ্বজাধারী আমেরিকার বিবেক গণহত্যাকারী জায়োনিস্ট ইসরায়েলের কাছে জিম্মি। আমেরিকার প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সহযোগিতায়  ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর বছরের পর বছর বর্বর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ক্যান্সার। এর মূলোৎপাটন করে ফেলতে হব। 

এদিকে যাত্রাবাড়ীতে সাধারণ আলেম সমাজের ব্যনারে মানবতাবাদি সাধারণ জনতা সমাবেশ করেছে। 

সকাল ১১ টায় ঢাকার বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিশ্বব্যাপী মজলুম গাজাবাসীদের আহুত হরতালের সমর্থনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা ইসরায়েলের নেতানিয়াহু ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবিতে জুতাপেটা ও আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ করে। 

সমাবেশে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সহ-সভাপতি মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, গাজায় ইজরাইলের নৃশংসতা  এবং বর্বরতা ইতিহাসের সকল নৃশংসতাকে হার মানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশ ঘোষণা করে ইজরাইলকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বের করে দিতে হবে।

এছাড়াও গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সকল জেলা ও উপজেলা শাখা বিশ্বব্যাপী মজলুম গাজাবাসীর আহুত হরতালের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসে। অনেক মা-বোনকে তাদের কোলের বাচ্চাদের নিয়ে প্রতিবাদে অংশ নিতে দেখা যায়। তারা এই বর্বরতার অবসান চান।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবিতে একই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ছাত্র শিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।

বিশ্বব্যাপী আহুত হরতালের সমর্থনে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল। গতকাল ছাত্রদলের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকা আজ মৃত্যু উপত্যকা। দখলদার ইসরায়েল পৃথিবীর মানচিত্র থেকে গাজার চিহ্ন মুছে ফেলতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। পরিতাপের বিষয় এই যে আন্তর্জাতিক বিশ্ব এখনো এখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের ডাকা কর্মসূচিতে একাধিক বিশ্বিবদ্যালয়, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একাত্মতাও জানানো হয়েছে। গাজাবাসীর ওপর বর্বরতার প্রতিবাদে শুক্রবার (১০এপ্রিল) বিএনপিপন্থী সংগঠন ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের কনসার্টের তারিখ একদিন পেছানো হয়েছে।