ঢাকায় আগত নতুন ছাত্রদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:১৫ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| হাবীবুল্লাহ সিরাজ ||

আপনি গ্রামীণ পরিবেশ থেকে এসেছেন, এবারই প্রথম এসেছেন। দাখেলাও পেয়েছেন। আগে কখনো স্থায়ীভাবে ঢাকাতে থাকা হয়নি। ঢাকার জীবনযাত্রা ও জীবনমান সম্পর্কে আপনি অবগত নন। তাই আপনাকে একটু সতর্ক সচেতন ও হুঁশিয়ার থাকতে হবে। 

অনেক বিষয় আছে, যা না জানার কারণে কখনও লজ্জায়  পড়তে হয়। যেমন ধরুন, আপনি বাসে উঠে মহিলা সিটে বসে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর হেলপার এসে আপনাকে উঠিয়ে দিল। আশপাশের যাত্রীরা হাসাহাসি করল। ফলে লজ্জায় কুণ্ঠিত হবেন। এমন অবস্থায় ঢাকা ছেড়ে পালাতে ইচ্ছে করে। 

এই ধরনের ছোটখাটো ভুল এড়াতে কিছু সাধারণ বিষয় জানা থাকলে খুব উপকার হয়।

প্রথমত মাদরাসার পরিবেশ পরিস্থিতি:
এখানকার অধিকাংশ মাদরাসার আয়তক্ষেত্রে সঙ্কীর্ণ-সরু, চাপা রুম, তলাতলা বাসস্থান। এক রুম বিশিষ্ট বিল্ডিং সাততলা/আটতলা হয়ে আকাশমুখী, কিংবা ভাড়া বাড়ী; যা চলাফেরার জন্য খুবই কষ্টকর-অসহ্যকর। এখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। 

ঢাকার আরেকটা সমস্যা হলো খাবার:
এখানে সুপেয় পানি পাওয়া যায় না, যা পাওয়া যায় তাতে ময়লা, কাদা, কাপড়ের টুকরা ইত্যাদি মিশ্রিত থাকে। এমনকি মাঝে মধ্যে পানি এমন দুর্গন্ধযুক্ত হয়, যা পান করার অযোগ্য। এখানে অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। মাঝে মধ্যে ৪/৫ ঘণ্টা কখনো ১/২দিন পানি থাকে না। এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

মোটকথা পানির অসুবিধার বিষয়টি সবসময় মনে রাখতে হবে। মেনে নিতে হবে। অনেক তালিবে ইলমকে শুধু পানি-অসুবিধার কারণে ঢাকা ছেড়ে চলে যায়। তবে সব মাদরাসায়, সব এলাকায় পানি বা জায়গার অসুবিধাগুলো নেই। 

ঢাকার বড় বড় মাদরাসাগুলোতে আলহামদুলিল্লাহ পানির অসুবিধাগুলো নেই। সেখানে নিজস্ব পাম্প দ্বারা সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে। 

শহরের খাবার নিয়ে দুটি কথা:
সব মাদরাসার খাবার মান একরকম নয়। আপনি হয়তো নিজ বাড়িতে থেকে-খেয়ে লেখাপড়া করেছেন বা এলাকায় লজিং কিংবা বোর্ডিংয়ে থেকেছেন। সুস্বাদু খাবার ও কয়েক রকমের তরকারি পেয়েছেন। কিন্তু ঢাকাতে মাদরাসার বোর্ডিংগুলোতে হরেক রকম তরকারি পাওয়া যাবে না। একটি তরকারি সাথে ডাল। তরকারিও আবার মাঝে মধ্যে অরুচিকর হয়। তবে হ্যাঁ, বর্তমানে অধিকাংশ মাদরাসায় ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এই ভালোটা নিজ বাড়ি বা গাঁয়ের মাদরাসার মতো নয়। 

দ্বিতীয়ত বড় মাদরাসা হলে উস্তাদদের নাগাল পাওয়া যায় না:
উস্তাদ আসবে ঘণ্টা করিয়ে রুমে কিংবা তার নিজের আবাসস্থলে চলে যাবেন। নিজ আগ্রহেই হুজুরকে খুঁজে নিতে হবে। শুরুতে নিজেকে অনুপোযোগী মনে হবে। দেখবেন- সামনের কাতারের ছাত্ররা উস্তাদকে ইশকাল করছে উস্তাদও তার আজিব উত্তর দিচ্ছেন। আপনি হতবাক হয়ে যাবেন। নিজেকে মনে হবে ঢাকাতে পড়ার যোগ্য নন। অথচ গ্রামের ওই মাদরাসায় আপনিই ছিলেন নম্বরে আউয়াল ছাত্র। এখানে এসে দেখবেন মুতালার সব কিতাব আরবি উর্দু। অথচ আপনি বাংলা ছাড়া আরবি শরাহ, উর্দূ শরাহ যে আছে তা জানতেনই না। তবে হ্যাঁ, বিপরীত দৃশ্যও দেখা যায়। কিছুই জানে না কিছুই বুঝে না, অথচ সেই ছাত্রও দম্ভভরে চলাফেরা ও ক্লাস করছে। 

তৃতীয়ত বাহিরের চলাফেরা ও লেনদেন:
রাজধানী ঢাকার চলাফেরা হতে হয় সর্তক ও সাবধানী। এখানে চারদিকে শুধু প্রতারণা আর প্রতারণা। প্রতারণার এমন সব কৌশল আছে যা আপনি ভাবতেও পারবেন না। সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলো কিংবা সাহায্য চাইলো- এতেও প্রতারণা। শান্ত পরিবেশ হঠাৎ দেখবেন গুলাগুলি কিংবা বোমার শব্দে কিয়ামতসম। 

চতুর্থত ক্রয়-বিক্রয়ে:
পুরাতন সাথি ছাড়া বাইরে যাবেনই না। এখানে ক্রয় ক্ষেত্রে যে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে, তা একমাত্র পুরাতন ও ভুক্তভোগীরাই জানে। আপনি একা যদি যান যে কাণ্ড ঘটবে তাহলো- আপনি যা কিনবেন তার আসল মূল্য যদি হয় ২০০/৩০০ টাকা। আপনার কাছে চাইবে ১২০০/১৩০০ টাকা। তখন আপনি চক্ষুলজ্জার জন্য হলেও কমপক্ষে বলবেন ৮০০ কিংবা ৬০০ টাকা। দোকানী দিতে চাইবে না। আপনি একটু বাড়াবেন কিংবা চলে আসবেন- দোকানদার ডাকবে; বলবে ভাই লাভ হয় না। তারপরও আপনি বলছেন তাই দিচ্ছি।

যদি আপনি পুরাতন সাথি ভাইকে নিয়ে যেতেন তাহলে আপনি যে ধোঁকা খেয়েছেন তা হতো না। এরকম আরো হাজারো বিষয় আছে আপনি ঢাকায় দীর্ঘ দিন অবস্থান করলে ধীরে ধীরে কেটে যাবে। পরিবেশ আপনার হবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের জন্য সহায়ক পরিবেশ, পরিস্থিতির ব্যবস্থা করে দিন।

এমএইচ/