নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ইসলামবিরোধী ধারা, প্রতিবাদের ঝড়
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:১৪ সকাল
নিউজ ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে নারী সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ পেশ করেছে এর মধ্যে একাধিক ইসলামবিরোধী ধারা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইয়ে যাচ্ছে।

গতকাল বিকেলে এই সুপারিশ পেশ করার পর থেকেই সমালোচনা শুরু হয়। অনেকে এই ইস্যুতে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছেন। যারা এতদিন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর করা হোক বলে দাবি তুলছিলেন তাদেরও কেউ কেউ কড়া সমালোচনা করেন।

ইসলামপন্থীরা বলছেন, এটা পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রে করা হয়েছে। এই কমিশনে যাদের রাখা হয়েছিল তাদের বেশির ভাগেই এনজিও ব্যাকগ্রাউন্ডের দাবি করে নেটিজেনরা বলছেন, তারা নারীদের বিষয়ে সংস্কারে ইসলামবিরোধী ধারা ঢুকিয়ে দিয়েছে। যারা এই সরকারকে ব্যর্থ করতে চায় তারাই মূলত এই কাজটি করেছে।

একটি ধারায় বলা হয়েছে- ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদের অধীনে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্যমূলক বিধান বিদ্যমান, বিশেষ করে বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ ও ভরণপোষণের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আইন অনুসরণ বাধ্যতামূলক হওয়ায় নারীরা বৈষম্যের শিকার হন। যার ফলে পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিদ্যমান অসমতা তাদের সামাজিকভাবে পশ্চাৎপদ করে রাখছে। নারী নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতা ও অভিভাবকত্ব সম্পর্কিত আইনের বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আদালতের অপর্যাপ্ত সংখ্যা, দীর্ঘসূত্রিতা, পুরাতন অবকাঠামো এবং ন্যূনতম মৌলিক সুবিধার অভাবে নারীরা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আইন সংস্কারের পাশাপাশি সংবিধানের সংশোধনও প্রয়োজন।’ এই অংশটি নিয়ে অনেকে আপত্তি তুলেছেন। এছাড়াও বেশ কিছু পয়েন্টে ইসলামবিরোধী অবস্থান ফুটে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

টক শোর আলোচিত মুখ ড. তুহিন মালিক ফেসবুকে লিখেন: ‘আজ প্রধান উপদেষ্টার ভ্যারিফাইড পেইজ থেকে শেয়ার করে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। সেখানে দেখা যাচ্ছে- ‘ধর্মীয় আইন অনুসরণ বাধ্যতামূলক হওয়ায় নারীরা বৈষম্যের শিকার হন।’ আশ্চর্য্য, ধর্মকে সরাসরি বৈষম্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার বিস্তারিত বিবরণ এখনও জানা না গেলেও কমিশন ‘মুসলিম উত্তরাধিকার-পারিবারিক’ আইনসহ বেশকিছু সংবেদনশীল ইস্যুতে বিতর্কিত বেশকিছু প্রস্তাবনার সংবাদ ঘুরেফিরে দেখা যাচ্ছে।

ধর্মীয় আইনের বিরুদ্ধে ও সেক্যুলার আইনকে প্রাধান্য দিয়ে যেকোনো ধরনের পলিসির অপচেষ্টাকে দেশের মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে। এগুলো এখনই থামানো না গেলে, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ব্যর্থতার জন্য নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনই যথেস্ট হবে।

মাসিক মঈনুল ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমদ লিখেন- ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন নারী ও পুরুষের বৈষম্যের কারণ চিহ্নিত করার নামে ধর্মকে নিশানা করে সুস্পষ্টভাবে পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও অবমাননা করেছে। এতে সহজে বোঝা যায়, তারা সংস্কারের আড়ালে ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ থেকে ইসলাম উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমরা তাদের এই অপকর্মের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। একই সাথে এর সাথে জড়িতদেরকে কমিশন থেকে বহিষ্কারসহ কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।

নারী সংস্কার কমিশনে ইসলামবিরোধী ধারাগুলো তুলে ধরে তরুণ লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট ইফতিখার জামিল লিখেন- নারী কমিশনের কয়েকটি ইসলামবিরোধী সুপারিশ-

ক) মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিল করে নারী-পুরুষকে সমান সম্পদ প্রদান। (পৃষ্ঠা, ২৫)

খ) সকল ধর্ম-মতের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন। (পৃষ্ঠা, ৯) অর্থাৎ, হিন্দু-মুসলিম-খৃস্টান সবাইকে পারিবারিক বিষয়ে ‘আইনগতভাবে ধর্মত্যাগ’ করতে উৎসাহিত করা হবে, পরবর্তীতে একে বাধ্যতামূলক বানানো হবে।

গ) বিবাহ-শাদিসহ পারিবারিক বিষয়ে জাতিসংঘ প্রণীত আইন বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এটি মূলত CEDAW সনদ হিসেবে পরিচিত। (পৃষ্ঠা, ৯) অর্থ্যাৎ, আইনি দিক দিয়ে ‘ইসলাম ত্যাগ‘ করে পশ্চিমা নীতি মানার কথা বলা হয়েছে।

ঘ) পারিবারিক ক্ষেত্রে নারীপুরুষকে অভিন্নভাবে দেখতে বলা হয়েছে। (পৃষ্ঠা, ৯) এই সুপারিশ বাতিল করতে হবে। নতুন করে কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। যদি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে সরকার বিপদে পড়বে। সবগুলো মুসলিম-হিন্দু সংগঠন এর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। দেশের অন্তত লাখখানেক মসজিদে এসব নিয়ে বয়ান হবে। সরকার বড়রকমের ঝামেলায় পড়তে পারে।

এনএইচ/