কালেকশন কি ভিক্ষাবৃত্তি?—দৃষ্টিভঙ্গির এক নির্মম বিকৃতি
প্রকাশ:
২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:১২ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
![]()
|| ওলিউল্লাহ্ মুহাম্মাদ || এলমে দ্বীন রক্ষার জন্য কওমী মাদ্রাসাগুলো আজ যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, তা নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ তাআলার ফজল এবং মুসলিম জনসাধারণের দান ও সহযোগিতার বরকতেই সম্ভব হয়েছে। কওমী মাদ্রাসা কোনো সরকারিভাবে পরিচালিত বা পুঁজিবাদী পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান নয়। এর প্রতিটি ইট, প্রতিটি খরচ, প্রতিটি কার্যক্রমই জনসাধারণের ঈমানী চেতনা ও সহযোগিতার ফল। আর এই সহযোগিতা পৌঁছাতে হলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিরুপায় হয়ে দ্বারে দ্বারে যেতে হয়—যার নাম আমরা “কালেকশন” বলি। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আজ অনেকেই এই পবিত্র দায়িত্বকে হেয় চোখে দেখেন, তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে ব্যঙ্গ করেন। অনেকে বলেন, “মাদ্রাসাগুলো ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিচ্ছে”, “ছাত্ররা তো ভিক্ষা করে বেড়ায়”। অথচ তারা এটাই বোঝেন না—এটা ভিক্ষা নয়, বরং এটা উম্মতের এক সম্মানজনক দায়িত্ব, যা দীনের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রাখার অংশ। প্রশ্ন হলো—একজন দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল যখন তার প্রতিষ্ঠানের চলমানতা রক্ষায় মানুষের সাহায্য চায়, সেটা কীভাবে ভিক্ষা হতে পারে? বরং এটা তো দীনের রক্ষার এক ইবাদতপূর্ণ প্রচেষ্টা। কালেকশনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করছে না, বরং সামগ্রিকভাবে দীনকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই কষ্টস্বীকার করছে। একদিকে মাদ্রাসায় পড়ছে হাদীস, ফিকহ, তাফসীর—অন্যদিকে সেই শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাল, ডাল, টাকা, চামড়া, যাকাত, ফিতরা সংগ্রহ করছে। এটা কি কোনো লজ্জার বিষয়, না গৌরবের? হ্যাঁ, আমরা অস্বীকার করি না—সমাজে কিছু মানুষ ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে রশিদ বানিয়ে কালেকশন করে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফিতা হাতে গাড়ি থামিয়ে আদায় করে, যারা প্রকৃতপক্ষে দানের এই পবিত্র ধারা ও বিশ্বাসকে কলুষিত করে তুলছে। এর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়া জরুরি। কিন্তু তাদের জন্য প্রকৃত দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের সম্মানহানী করা কখনোই ন্যায়সঙ্গত নয়। সবচেয়ে বড় বিস্ময় হলো, এমনসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী থেকে কালেকশন বিরোধী কথা আসে, যাদের নিজেদের অস্তিত্বই মূলত সমাজের বিভিন্ন অনুদান ও তহবিল নির্ভর। তারা বিভিন্ন প্রকল্প, ফান্ড, এনজিও বা দাতব্য সংস্থার অর্থে চলে, অথচ কওমী মাদ্রাসার ছাত্র বা উস্তাদদের কালেকশনকে তারা ভিক্ষাবৃত্তি বলে। আমরা মনে করি—সমাজকে এ বিষয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি দেওয়া জরুরি। ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ ও দানের এই কালেকশন পদ্ধতি হলো একান্তভাবে দীনের হেফাজতের জন্য, যা সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে চলে আসছে বিভিন্ন রূপে। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কোনো ব্যক্তিস্বার্থে নয়, বরং উম্মাহর ইমানি অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পথে নামে। তাদের এই চেষ্টাকে অবমাননা করা মানে দীনের খেদমতকে অবমাননা করা। অতএব, যারা কওমী মাদ্রাসা, শিক্ষক ও ছাত্রদের ‘কালেকশন’ নামক কার্যক্রমকে ভিক্ষাবৃত্তি বলে কটাক্ষ করেন, তাদের উচিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিশুদ্ধি করা, কারণ তারা বুঝে হোক বা না বুঝে—একটি মহৎ প্রচেষ্টাকে কলুষিত করছেন। লেখক: ফাজিলে জামি'আ রাহমানিয়া আরাবিয়া ঢাকা। এমএইচ/ |