উপমহাদেশে বিপজ্জনক সময় চলছে, এখন দরকার সংযমৎ
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:০২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

উপমহাদেশে এখন বিপজ্জনক সময় চলছে। পাকিস্তান ও ভারত উভয়েরই সংযম দেখানো এবং পহেলগাম-পরবর্তী ঘটনাবলী বিচক্ষণতার সাথে মোকাবিলা করা প্রয়োজন। দুঃখের বিষয়, ভারত পর্যটকদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ না দিয়েই এই ট্র্যাজেডির জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করে আরও বেশি পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানের প্রভাবশালী অনলাইন ডনে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়- তাছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ’ নেয়ার তীব্র আহ্বান এসেছে, বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে। এর পাশাপাশি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির নিন্দনীয় পদক্ষেপ, যেমন সিন্ধু পানি চুক্তি ‘স্থগিত রাখা’ এবং সম্পর্ক আরও অবনমিত করা-  এক উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরি করেছে। 

পাকিস্তানও বোধগম্যভাবেই পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে, যদিও (সম্ভবত) তাদের ভারতীয়দের ভিসা বাতিল করা থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল। শুক্রবার নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে গুলিবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে- সৌভাগ্যবশত, এই গুলি বিনিময় বৃহত্তর সংঘর্ষে রূপ নেয়নি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে যখন পারস্পরিক আস্থা কম থাকে এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যে উদ্দীপ্ত আবেগ বেশি থাকে, তখন ভুল হিসাবের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এই অস্থির পরিস্থিতির কারণেই জাতিসংঘ প্রধান উভয় সরকারকে ‘সর্বোচ্চ সংযম  প্রয়োগ’ করতে বলেছেন ।

কোন দেশই আর একটি যুদ্ধের ভার বহন করতে পারবে না। স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান এবং ভারত তিনটি বড় এবং বেশ কয়েকটি ছোট যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। আবারও কূটনীতিকে সুযোগ দেয়ার সময় এসেছে। দুর্ভাগ্যবশত, নয়াদিল্লির অনেকেই পাকিস্তানের সাথে শান্তি  প্রতিষ্ঠাকে যোগ্য প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেন না। অন্যদিকে কাশ্মীরে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন সরকারের নিন্দনীয় কর্মকাণ্ড বিতর্কিত অঞ্চলে পরিবেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। যতক্ষণ না ভারত বুঝতে পারে যে, বল প্রয়োগ এবং হুমকি শান্তি আনবে না, ততক্ষণ রক্তপাতের চক্র চলতেই থাকবে।

পহেলগাম নৃশংসতার সাথে পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগের যেকোনো  প্রমাণ ‘আমাদের এবং বিশ্বের সাথে’ ভাগ করে নেয়ার জন্য ভারতের প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার যথাযথভাবে অনুরোধ করেছেন। ভারত যদি তা না করে, তাহলে মোদী সরকার তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য এই দেশটিকে বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করছে- এই মতামত আরও জোরদার হবে। এমনকি ভারতের ভেতরেও সরকারের কাছে গোয়েন্দা ব্যর্থতার তদন্তের আহ্বান জানানো হচ্ছে। যদি এই ঘটনার সাথে দুর্বৃত্ত জঙ্গি উপাদানের জড়িত থাকার কোনও নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায়, তাহলে পাকিস্তানের উচিত নিজস্ব তদন্ত চালিয়ে যাওয়া।

ভারতীয় গণমাধ্যমেরও পাকিস্তানের সকল বিষয়ের প্রতি তাদের বিদ্রুপাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। জনসাধারণের আলোচনা গঠনে গণমাধ্যম একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। দুঃখের বিষয় হল, ভারতের বেশিরভাগ মূলধারার গণমাধ্যম সাংবাদিকতার নীতিশাস্ত্রের প্রতি বিতৃষ্ণা প্রদর্শন করেছে, অতি-জাতীয়তাবাদী বক্তব্যে একে অপরকে ছাড়িয়ে গেছে। এই ঘটনাগুলো আঞ্চলিক শান্তির উপর বাস্তব বিশ্বের ক্ষতিকারক  প্রভাব ফেলতে পারে।
আগুনে জ্বালানোর পরিবর্তে উভয় পক্ষের, বিশেষ করে ভারতের উত্তপ্ত অবস্থা কমিয়ে আনা উচিত। জাতীয়তাবাদী হৈচৈ থেমে গেলে, ভারতকে এই সত্যটি মেনে নিতে হবে যে- কাশ্মীর সমস্যার ন্যায্য সমাধান ছাড়া শান্তি অসম্ভব।

এনএইচ/