৫ মে ২০১৩: কী ঘটেছিল সেদিন ঢাকায়?
প্রকাশ:
০৫ মে, ২০২৫, ১২:০৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
বিশেষ প্রতিনিধি রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে নৃশংস হামলার এক যুগ পূর্তি হচ্ছে আজ। ২০১৩ সালের এই দিনে (৫ মে) রাজধানী ঢাকা হয়ে পড়েছিল এক আতঙ্কের নগরী। একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণ। সে দিনের ভয়াবহ দৃশ্য আজও যেন প্রত্যক্ষদর্শীদের চোখের সামনে ভাসে। তবে প্রায় এক যুগ আগের সেই ঘটনার অনেকে সাক্ষী হতে পারেননি। অনেকের সে সময় বোঝার মতো বয়স হয়নি। কিংবা যারা প্রত্যক্ষদর্শী তাদেরও অনেকের স্মৃতির পাতা ঝাঁপসা হয়ে এসেছে। বিবিসির সাংবাদিক কাদির কল্লোলের প্রত্যক্ষদর্শী বর্ণনা এখানে তুলে ধরা হলো- ঢাকার উত্তরে গাবতলী বাস টার্মিনাল, টঙ্গী এবং দক্ষিণে সায়েদাবাদের কাছে কাঁচপুর ব্রিজসহ রাজধানীকে ঘিরে ছয়টি প্রবেশমুখেই অবরোধ তৈরি করেছিলেন হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সারাদেশ থেকে আসা হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব জাফরউল্লাহ খান জানান, অনেকটা আকস্মিকভাবেই তারা ঢাকায় প্রবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হেফাজতে ইসলামের নেতারা শাপলা চত্বরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর অনুমতির জন্য পুলিশের সাথে আলোচনা শুরু করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, শেষ পর্যন্ত পুলিশ অনুমতি দিয়েছিল শাপলা চত্বরে এসে শুধু মোনাজাত করেই কর্মসূচি শেষ করার শর্তে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং পল্টন এলাকায় সহিংসতা চলেছিল সন্ধ্যার পরও। বেলা বারটা, সংঘর্ষ হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে। সেখানে হেফাজতে ইসলামের মিছিলে আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী হামলা করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। দুপুর দেড়টা, ঢাকার প্রবেশপথগুলো থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা এসে অবস্থান নেয় শাপলা চত্বরে। দিনের এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহতও হয়। তবে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায় শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাদের বক্তব্যে সেখানে অবস্থান করার ঘোষণা আসতে থাকে। জাফরউল্লাহ খান বলেন, অবস্থানের বিষয়টাও এসেছিল পরিস্থিতির কারণে। রাত সাড়ে আটটা, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ওই বিবৃতি সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কও হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা হেফাজতের কর্মসূচির সাথে রাজনৈতিক কোনো যোগসূত্র মানতে রাজি নন। তবে তারা বিষয়টিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি। অন্যদিকে, হেফাজতের নেতাদের অনেকেই মনে করেন, সে সময় যুদ্ধাপরাধের বিচারে সর্ব্বোচ্চ সাজার দাবিতে শাহবাগে বড় ধরনের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার পাল্টা হিসেবে হেফাজতের ১৩ দফার আন্দোলনকে দাঁড় করানোর একটা চেষ্টা ছিল কোনো মহল থেকে। রাত সাড়ে দশটা, পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে হেফাজতে ইসলামের প্রধান শাহ আহমদ শফীকে লালবাগ মাদরাসা থেকে নিয়ে শাপলা চত্বরের দিকে রওনা দেয়। কিন্তু কিছুটা পথ এসেই অসুস্থ এবং নিরাপত্তার অভাবের কথা বলে শাহ আহমদ শফী ফিরে যান। তিনি আর আসেননি শাপলা চত্বরে। রাতে অবশ্য জমায়েতও অনেকটা কমে গিয়েছিল। রাত সোয়া একটা, আলোচিত সেই রাতের অভিযানের প্রস্তুতি। সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমিও (বিবিসি প্রতিবেদক) সে সময় সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলাম। পুলিশ, র্যাব, বিজিবির হাজার হাজার সদস্য তখন দৈনিক বাংলার মোড়, দিলখোশা, ফকিরাপুল এবং নটরডেম কলেজের সামনে অবস্থান নিয়েছে। অবস্থানকারীদের সরে পড়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে কমলাপুর স্টেশন যাওয়ার রাস্তা এবং বঙ্গভবনের দিকের রাস্তা খোলা রাখা হয়েছিল। অন্য তিন দিক থেকে র্যাব , বিজিবি পুলিশ সদস্যরা এগোনোর চেষ্টা করে এবং প্রথমে হাত মাইক ব্যবহার করে অবস্থানকারীদের সরে যেতে বলে। কিন্তু মঞ্চ থেকেও আসতে থাকে উত্তেজনাকর বক্তব্য। ঘণ্টা দেড়েক এভাবে চলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তিন দিক থেকে ফাঁকা গুলি আর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে। থেমে থেমে সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করা হয়। শত শত রাউন্ড গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ এবং অন্ধকার এলাকায় এসবের আলোর ঝলকানি মুহূর্তেই ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। এই অভিযানের নেতৃত্বে থাকা অন্যতম একজন পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, দশ মিনিটেই তারা পৌঁছে যান শাপলা চত্বরে। আমরা সাংবাদিকরাও সেই মৃতদেহগুলো দেখেছি। এগুলো দিনে সংঘর্ষে নিহতদের মৃতদেহ বলে পুলিশের দাবি। ভোর চারটা, তখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থেমে ফাঁকা গুলি করেছে এবং তল্লাশি চালিয়েছে আশেপাশের ভবনগুলোতে। রাতের অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দেয়। আড়াই হাজারের মতো নিহত হওয়ার অভিযোগ তুলে বিভিন্ন দল। পুলিশ বলেছিল, অভিযানের সময় আহত একজন পরে হাসপাতালে মারা গিয়েছিল। ভোর পাঁচটা, পুরো মতিঝিল এলাকার পরিবেশটা একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকার মতো মনে হয়েছিল। আগের দিনের সহিংস বিক্ষোভের অনেক চিহ্ন আশেপাশে ছড়িয়েছিল। সূত্র: বিবিসি বাংলা এসএকে/ |