ঢাকায় কুকুর বিড়ালের বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল 
প্রকাশ: ১৩ মে, ২০২৫, ০২:১১ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

|| মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ||

শখের তোলা নাকি আশি টাকা। কিন্তু কুকুর বিড়ালের আবাসিক হোটেল ফারিঘর ঘুরে এসে যে কারও মনে হবে শখের তোলা আশি টাকা নয় এরচে বেশি।

প্রাণির প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকেই মানুষ কুকুর-বিড়াল পোষে। ধীরে ধীরে এসব প্রাণি হয়ে ওঠে পরিবারেরই একজন। তবে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব বা অন্যকোনো কারণে পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিনের জন্য বাড়ির বাইরে গেলে অবলা প্রাণিগুলোকে নিয়ে পড়তে হয় দারুণ বিপাকে। এই বিড়ম্বনার অবসানেই রাজধানীতে চালু হয়েছে পোষা প্রাণির আবাসিক হোটেল ‘ফারিঘর’।  

শুনতে আশ্চর্য লাগলেও রাজধানীর চিড়িয়াখানা রোডে ৮০ নম্বর প্লটের তিনতলায় যাত্রা শুরু করেছে এমনই এক হোটেল। এখানে দৈনিক ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকার বিনিময়ে  যে কেউ রাখতে পারবেন পোষা কুকুর-বিড়াল। দিন হিসেবে আছে বিভিন্ন প্যাকেজও। বেশি দিনের জন্য আবাসন হলে দৈনিক টাকার পরিমাণও কমতে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অনেক প্রাণি এখানে আছে ৬ মাসেরও অধিক সময়। সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করলে ফারিঘরকে পাঁচ তারকা মানের আবাসিক হোটেল বললে অত্যুক্তি হবে না। 

অভিনব এই উদ্যোগ প্রাণিপ্রেমীদের জন্য আক্ষরিক অর্থেই বেশ স্বস্তিদায়ক। ফারিঘর-এ আদরের বিড়াল বা কুকুরটিকে নিশ্চিন্তে রাখতে পারেন আপনিও। কারণ, হোটেলের কেয়ার কিপার ২৪ ঘণ্টা কুকুর-বিড়ালের খেয়াল রাখছেন। হোটেলগুলোতে মানুষের বিনোদনের জন্য যেমন বিভিন্ন সুবিধা রাখা হয়, ঠিক তেমনিভাবে ফারিঘর-এর পোষা প্রাণিদের জন্য রাখা হয়েছে গান শোনা থেকে শুরু করে টিভি দেখার ব্যবস্থাও। তবে খাবারের ব্যাপারে ফারিঘর-এর কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিতে নারাজ। তাই মালিকদের নিজেদেরই খাবার সরবরাহ করতে হয়। তবে প্রয়োজনে ভিডিও কলে প্রিয় পোষা প্রাণিটিকে দেখার সুযোগ কর্তৃপক্ষ রেখেছেন।

এই হোটেলে কুকুর, বিড়াল রাখা হয় আলাদা কেবিনে। কুকুরের জন্য তিনটি আর বিড়ালের জন্য ১৪টি কেবিন আছে। প্রতিটি কুকুরের ঘরের দৈর্ঘ্য ৯ ফুট, প্রস্থ ৫ ফুট। আর বিড়ালের জন্য থাকছে ১৬ বর্গফুটের আলাদা আলাদা কেবিন। এসব ঘরে বিছানা-বালিশ তো আছেই। সেই সাথে প্রাকৃতিক কাজের জন্য থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা। এছাড়া ক্যাট্রি, কুশন এবং লিটারের ব্যবস্থাও এখানে করা হয়েছে। 
হোটেলের শুরুতেই স্থাপন করা হয়েছে একটি রেসকিউ সেন্টার। নিচেই আছে পিপল ফর অ্যানিমেল কেয়ার ফাউন্ডেশনের (প ফাউন্ডেশন) প লাইফ কেয়ার ক্লিনিক।

সুস্থতা নিশ্চিতকরণে এখানে পোষাপ্রাণিদের দেয়া হয় সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা। এর পাশে আছে আরেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাগর মার্ট। যেখানে কুকুর–বিড়ালের খাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জরুরি পণ্য বিক্রি হয়।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এখন লাঘামছাড়া। অথচ বাড়ছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের যেখানে নাভিশ্বাস অবস্থা সেখানে কুকুর-বিড়ালের জন্য আবাসিক হোটেল বিলাসিতা কিনা এ নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। তবে পোষা প্রাণির এই আবাসিক হোটেল বিলাসিতা নয় বরং প্রয়োজনীয় বলেই দাবি করেন ফারিঘর-এর উদ্যোক্তারা।

ফারিঘর-এ পোষা প্রাণিদের জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক সব আয়োজন। কিন্তু তারপরও কি ভালো আছে অবলা প্রাণিগুলো? একাকীত্ব এবং প্রিয়জনের বিরহ ব্যথায় কাতর এই অবলা প্রাণিদের চোখে মুখে স্পষ্ট ফুটে আছে বিষন্নতার ছায়া। এখানকার প্রতিটি প্রাণিই হয়তো প্রতিক্ষণে গুণে প্রতিক্ষার প্রহর।

এসএকে/