কারী বেলায়েত হুসাইন: আমার দাদা, আমার আদর্শ 
প্রকাশ: ২৫ মে, ২০২৫, ০৭:৫৯ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

ইবরাহিম বিন ইসমাইল বেলায়েত হুসাইন

শাইখুল কুরআন কারী বেলায়েত হুসাইন (রহ.) :

শাইখুল কুরআন কারী বেলায়েত হুসাইন (রহ.) ছিলেন আমার পরম শ্রদ্ধেয় দাদাজান। তাঁর ছেলের সন্তান হিসেবে আমি গর্ব অনুভব করি যে, আমি এমন একজন আলেম ও কুরআনের সেবকের বংশধর।

দাদাকে নিয়ে আমার উপলব্ধি :

“দাদা” নামটা তখন বুঝিনি। বুঝবার মতো বয়স ছিল না, অভিজ্ঞতাও ছিল না। এখন বুঝি—তিনি ছিলেন একজন মহান মানুষ।
শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি আমাদের ছোট ছোট চাহিদা আর আনন্দের কথা ভুলতেন না।

মানুষ হিসেবে তাঁর জীবন ছিল আল্লাহর বিধান ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দেখানো পথে পরিচালিত।
দুনিয়াবি কষ্ট থাকলেও তিনি পরিবারের জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।
যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, পরিবারের হক আদায়ে কখনো ত্রুটি করেননি।

স্মৃতির পাতায় দাদাজান :

যদি আগে জানতাম তিনি কত বড় কুরআনপ্রেমী, তাহলে তাঁর সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত লিখে রাখতাম।
তবুও যা মনে আছে, সেই অল্প কিছু স্মৃতি তুলে ধরছি।

দাদাজান ‘নূরানী তা’লীমুল কুরআন বোর্ড বাংলাদেশ’-এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন।
সারাদেশে সফরে থাকলেও আমাদের—আমি ও আমার ভাইকে—ভুলে যেতেন না কখনো।
তিনি যখন ঢাকায় আসতেন, আমাদের দেখতে কেন্দ্রীয় নূরানী তা’লীমুল কুরআন মাদ্রাসায় ছুটে আসতেন।

কখনো এমন হয়নি যে তিনি ঢাকায় এসেছেন, অথচ আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি বা আমাদের জন্য কিছু আনেননি।
ফল-ফলাদি, বিস্কুট, না হলে অন্তত খেজুর—কিছু না কিছু সঙ্গে থাকতই।

ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব :

একটি শিশুর জীবন যখন ইসলামী শিক্ষায় শুরু হয়, তখন তার পরবর্তী জীবনেও ইসলামী আদর্শ দৃঢ় থাকে।
আজকের সমাজে যারা নাস্তিক্যবাদে আক্রান্ত—
যদি তাদের শৈশবে ইসলামী শিক্ষার ছোঁয়া পেত, তাহলে তারা ইসলামবিদ্বেষী হয়ে উঠত না।

চোখের জলে ভেজা দাদার স্মৃতি :

দাদাজানের স্মৃতি মনে হলে চোখ আজও ভিজে যায়।
তিনি আমাদের ভালোবাসতেন ঠিক সেইভাবে,
যেভাবে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান ও হুসাইন (রা.)-কে ভালোবাসতেন।

আমরা দুই ভাই দাদার কাছ থেকে পেয়েছি সেই একই রকম স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা।

অশ্রুর ভাষায় দাদাজানকে বিদায় :

২৪শে জুন, শনিবার— এই দিন তিনি মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।

দাদার বিদায় আমাদের পরিবারের হৃদয় ভেঙে দেয়, কুরআনপ্রেমী সমাজে বয়ে আনে গভীর শোক। নীরব হয়ে যায় একটি দীপ্ত কণ্ঠ—
যে কণ্ঠ ছড়িয়ে দিত কুরআনের আলো সারা দেশে।

তিনি ছিলেন এক আলোকবর্তিকা, যার আলো নিভে গেল— কিন্তু রেখে গেল অসংখ্য অম্লান স্মৃতি।

দাদাজান, তিনি ভালোবাসা ও কুরআনের খেদমতের এক অনন্য উদাহরণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, লালবাগ মাদ্রাসা

এসএকে/