গুলির পর আগুনে পোড়ানো হয় শহীদ বায়েজিদের লাশ
প্রকাশ:
২৭ মে, ২০২৫, ১২:৩৪ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
মাত্র ছয় মাসের ছেলে সন্তান ঘরে রেখে গত ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে কারফিউ ভেঙে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা সরকার পতনের লক্ষ্যে বন্ধুদের সাথে রাজপথে আন্দোলনে যোগ দেন বায়েজিদ বোস্তামি। সেখানেই পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি। পুলিশ তাকে খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তার লাশ। পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনদের বায়েজিদ বোস্তামির লাশ একনজর দেখারও ভাগ্য হয়নি। শহীদ বায়েজিদ বোস্তামির বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর। তার বাড়ি নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার উমার ইউনিয়নের কৈগ্রাম ফার্সিপাড়া গ্রামে। সে মৃত সাখাওয়াত হোসেনের মেঝ ছেলে। বায়েজিদ বোস্তামির বড় ভাই এর নাম কামরুল ইসলাম (২৫) ও ছোট বোনের নাম উম্মে সালমা রুমী (১৭) আর শহীদ বায়েজিদ বোস্তামির স্ত্রীর নাম রিনা আক্তার (২০)। শহীদ বায়েজিদ বোস্তামির বড় ভাই কারিমুল ইসলাম জানান, গরীব ও অসহায় পরিবারে আমাদের জন্ম। আমরা দুই ভাই এক বোন অনেক কষ্টে বড় হয়েছি। বায়েজিদ ছিল আমাদের আদরের ছোট ভাই। সে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকত। তবে সে তার সাধ্যমতো পরিবারকে টাকা পাঠাতো। তিনি বলেন, ভাই মারা যাবার পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠন আমাদের পরিবারকে সহযোগিতা করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভাই হারানোর বেদনা সবাই বুঝতে পারবে না। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই। শহীদ বায়েজিদ বোস্তামির মা বেনু আরা বাসসকে বলেন, 'আন্দোলন শেষে হয়তো অনেকেই যে যার মতো করে বাবা-মায়ের কাছে ফিরেছে কিন্তু আমার ছেলে আর কোনদিন ফিরে আসবে না। আমার ছেলেসহ সকল শহীদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই।' শহীদ বায়েজিদের স্ত্রী রিনা আক্তার বাসসকে বলেন, তারা বিয়ে করেছেন প্রেম করে। দীর্ঘ ২ বছরের প্রেম ছিল তাদের। একই জায়গায় চাকরি করার সুবাদে তাদের প্রেম হয়। এরপর পরিবারের সম্পতিতে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের ঘরে আসে রাফি আব্দুল্লাহ। বর্তমানে তার বয়স ১৩ মাস। ছোট্র শিশু রাফি আব্দুল্লাহ এখনও বুঝতে শিখেনি তার বাবা বেঁচে নেই। তিনি আরও বলেন, 'গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় বন্ধুদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেয় বায়েজিদ। ঘটনার দিন দুপুরে 'ভারতীয়' পুলিশ বায়েজিদসহ ১৩জনকে এক সাথে আশুলিয়া এলাকায় গুলি করে হত্যা করে। তারপরে সেখান থেকে তাদের ১৩জনকে একটি গাড়িতে করে নিয়ে রাস্তার পাশে আগুন লাগিয়ে লাশগুলো জ্বালিয়ে দেয় 'ভারতীয়' পুলিশ।' পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে শহীদি জানাজা শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে ধামইরহাটের কৈগ্রাম ফার্সিপাড়া গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শহীদ বায়েজিদের স্ত্রী রিনা আক্তার তার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন। ধামইরহাট এমএম ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শহীদ বায়োজিদ বোস্তামীর বড় ভাই কারিমুল ইসলামকে অত্র কলেজে সকলের সাথে পরামর্শক্রমে মাস্টার রোলে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তার বোন এসএসসি পাশের পর অত্র কলেজ ভর্তি হলে তার লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ বহন করা হবে এবং পড়ালেখা শেষে তাকেও চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। তিনি আরও বলেন, বায়োজিদ আমাদের তথা নওগাঁ জেলার গর্ব। তাকে মানুষ আজীবন স্মরণ করবে। শহীদের পরিবারকে কলেজের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। শহীদ বায়েজিদ বোস্তামির ছোট বোন উম্মে সালমা রুমী বলেন, শহীদ বায়েজিদ উত্তরা আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে আশুলিয়া এলাকার একটি গার্মেন্টেস এ পারটাইম চাকরি করতেন। ঢাকার আশুলিয়ায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। এরপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্দেশে পুলিশ ভ্যানে আগুন দিয়ে তার লাশ পুড়িয়ে দেয়। আল ইত্তেহাদ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আব্দুল্লাহ বিন বেলাল বলেন, শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বায়েজিদের শিশু সন্তান রাফি আবদুল্লাহর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, গত ২৫ মে শহীদ বায়েজিদ বোস্তামির পরিবারকে ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে আরো ৭ শহীদ পরিবারের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের সকল সদস্যদের সবসময় সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আর এ ধারা অব্যাহত রাখা হবে। সূত্র: বাসস |