প্রযুক্তির প্রসারে বাজার এখন হাতের মুঠোয় 
প্রকাশ: ২৭ মে, ২০২৫, ১২:৪০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটার জনপ্রিয়তা গত এক দশকে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময় এটি এক নতুন মাত্রা পায়, যখন মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তার সাথে যোগ হয়েছে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, ইন্টারনেটের বিস্তার ও স্মার্টফোনের ব্যবহার। এসব কারণে দেশের এক বড় জনগোষ্ঠী এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। এবং সেটা উত্তরোত্তর বৃদ্ধিও পাচ্ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজারের আকার ছিল প্রায় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ধারণা করা হচ্ছে ২০২৭ সালের মধ্যে ১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

কিছুদিন আগে অনলাইনে কেনাকাটার এ সংস্কৃতি সীমাবদ্ধ ছিল রাজধানী ঢাকার মধ্যেই। সময়ের চাহিদাকে সামনে রেখে এখন শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট এমনকি জেলা শহরগুলোতেও অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন দারাজ, বিক্রয়, আজকেরডিল এবং ফেসবুকভিত্তিক হাজারো ছোট ব্যবসা গড়ে উঠেছে। অনলাইনে পোশাক, ইলেকট্রনিকস, গ্রোসারি এমনকি ওষুধও এখন ঘরে বসে কেনা সম্ভব। এমনকি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম একটি বিকল্প বিপণন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। অনলাইনে কেনাকাটার সুবিধার কারণে এখন একজন ব্যক্তিই হয়ে উঠছেন একটি আস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যারা পর‌যাপ্ত মূলধনের অভাবে এতদিন ব্যবসার স্বপ্ন শুধু লালনই করে গেছেন, অনলাইন ব্যবসার প্রসার তাদের জন্য খুলে দিয়েছে এক সম্ভানার দুয়ার!

শুধু ব্যস্ত মানুষজন অনলাইনে কেনা কাটার দিকে ঝুঁকছেন এমন নয়। বর্তমানে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির মানুষের মধ্যে অনলাইন কেনাকাটার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষার্থী, কর্মজীবী নারী, ব্যস্ত পেশাজীবী পুরুষ এবং গৃহিণীরা অনলাইনে পছন্দের পণ্য সহজেই অর্ডার করছেন ঘরে বা অফিসে বসেই। যা কিছুদিন আমাদের কাছে স্রেফ কল্পনা ছিল। এই অকল্পনীয় বিষয়টিই আজ চরম বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপকতায় শুধুযে ক্রেতা বিক্রেতারা লাভবান হচ্ছেন এমন নয়। ডেলিভারি সার্ভিস যেমন পাঠাও, রাইডার, সুন্দরবন কুরিয়ার কিংবা এসএ পরিবহন এই প্রসেসকে আরও সহজ ও সুলভ করেছে। দিন দিন এসব খাত হয়ে উঠছে কর্মসংস্থানের এক বিপুল সম্ভাবনার ক্ষেত্রও।

তবে এ খাতের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনলাইনে প্রতারণা, ভুল পণ্য ডেলিভারি, সময়মতো পণ্য না পাওয়া কিংবা মানসম্পন্ন পণ্য না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেক গ্রাহকের। কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও সামনে এসেছে, যা এই খাতের বিশ্বাসযোগ্যতা কিছুটা হলেও ক্ষুন্ন করেছে।

তবুও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক নীতিমালা ও নজরদারি থাকলে এই খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটি একদিকে যেমন উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে, তেমনি গ্রাহকদের সময় ও খরচ বাঁচিয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটা শুধু একটি আধুনিক সুবিধাই নয়, বরং এটি মানুষের জীবনধারায় বিপুল পরিবর্তন আনছে। প্রযুক্তিনির্ভর এই বাণিজ্য খাত আগামী দিনে দেশের অর্থনৈতিক গতিপথেও বড় প্রভাব ফেলবে, যদি এর নিরাপত্তা, মান ও সেবার মান ঠিকভাবে বজায় রাখা সম্ভব হয়।

এনএইচ/