ব্যথা হলেই ব্যথানাশক নয় 
প্রকাশ: ০৪ জুন, ২০২৫, ০৮:৪৮ রাত
নিউজ ডেস্ক

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান 

বেশির ভাগ মানুষ ব্যথা হলেই প্রধান অবলম্বন হিসেবে বেছে নেন ব্যথানাশক ওষুধ। শরীরের ব্যথা একটি সাধারণ উপসর্গ হলেও, আমরা অনেকেই এটিকে অবহেলা করি এবং তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়ার জন্য ব্যথানাশক ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, ব্যথা হলেই ব্যথানাশক খাওয়া কোনোভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়; বরং এটি হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগের সূচনা।

ব্যথা অসলে কি? ব্যথা কেন হয়? বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যথা কোনো রোগ নয়, এটি একটি লক্ষণ। মাংসপেশি, হাড়, নার্ভ কিংবা অভ্যন্তরীণ অঙ্গের সমস্যা ব্যথার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ব্যথানাশক সেবনে সেই লক্ষণ ঢেকে যায়, কিন্তু সমস্যাটি থেকে যায় অব্যাহতভাবে। ফলে তা ধীরে ধীরে আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। আর এই কাজটাই করেন এদেশের সিংহভাগ মানুষ।

নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ খেলে শরীরে কতটা ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে এটা আমাদের ধারণার বাইরে। দীর্ঘমেয়াদে ব্যথানাশক সেবনের ফলে দেখা দিতে পারে কিডনি ও লিভারের মারাত্মক ক্ষতি। আইবুপ্রোফেন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ নিয়মিত খেলে হজমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। অধিকাংশ ব্যথানাশকে নেশার উপাদান থাকায় এটি একসময় ওষুধ-নির্ভরতার দিকে ঠেলে দিতে পার। আমেরিকার কার্ডিয়াক সোসাইটি জানাচ্ছে, সবচে সহনশীল আইবুপ্রোফেনও হার্টঅ্যাটাকের জন্য দায়ী হতে পারে। অন্য শক্তিশালী ব্যথানাশক ঝুঁকি আর বাড়িয়ে দেয়। 

চিকিৎসকদের পরামর্শ, ব্যথা হলে আগে কারণ শনাক্ত করতে হবে। কখনোই নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। প্রয়োজন হলে রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। কিছু সাধারণ শারিরীক ও কিছু প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজেই ব্যথার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা সম্ভব। আর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে বেশিরভাগ শারিরীক ব্যথার চিকিৎসা ব্যথানাশক ওষুধ ছাড়াই সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্রাম, হালকা ব্যায়াম বা গরম পানির সেঁক গ্রহণ অনেক সময় কার্যকর হতে পারে।

শেষ কথা হচ্ছে, ব্যথা উপশমের চেয়ে বেশি জরুরি এর প্রকৃত কারণ জানা। অকারণে ব্যথানাশক সেবন নয়, বরং সঠিক চিকিৎসাই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার পথ।

এমএইচ/