ইউরোপীয় ‘গুপ্তচর’ যিনি ইসলাম ধর্মের ছদ্মবেশে মক্কায় পৌঁছেছিলেন
প্রকাশ:
১৪ জুন, ২০২৫, ০৮:২৫ সকাল
নিউজ ডেস্ক |
![]()
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | OUR ISLAM ইতিহাসে এমন কিছু চরিত্র রয়েছেন, যাঁদের কাজ একদিকে ছিল গুপ্তচরবৃত্তি, অন্যদিকে সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও সংস্কৃতি বোঝার গভীর চেষ্টা। তেমনই একজন ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক স্যার রিচার্ড ফ্রান্সিস বার্টন (Sir Richard Francis Burton)। তাকে ইতিহাসের পাতায় ‘ইসলাম ধর্মের ছদ্মবেশে হজ পালনকারী প্রথম ইউরোপীয়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
কে ছিলেন স্যার রিচার্ড ফ্রান্সিস বার্টন? বার্টন ছিলেন একজন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা, ভাষাবিদ, সাহিত্যিক, অভিযাত্রী এবং ওরিয়েন্টাল স্কলার। ১৮২১ সালে ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি জীবনের একটা বড় সময় কাটান উপমহাদেশ ও আরবভূমিতে। ১৮৫৩ সালে, মুসলিমদের ছদ্মবেশ ধারণ করে তিনি মক্কা ও মদিনায় হজ পালনে যান। সে সময় অমুসলিমদের পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ ছিল দণ্ডনীয় অপরাধ, এবং মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হতো। ছদ্মনামে ‘মির্জা আব্দুল্লাহ’ আরবি, ফারসি, উর্দু ও তুর্কি ভাষায় দক্ষ বার্টন অত্যন্ত সচেতনভাবে নিজেকে একজন আফগান ডাক্তার ‘মির্জা আব্দুল্লাহ’ হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি মুসলমানের মতো পোশাক পরতেন, আরবি উচ্চারণে দোয়া করতেন এবং ইসলামী শরিয়ত সম্পর্কেও গভীর জ্ঞান রাখতেন। ফলে কারও সন্দেহ হয়নি যে, তিনি আদতে একজন ইউরোপীয় অমুসলিম। হজের অভিজ্ঞতা ও বই প্রকাশ বার্টন সফলভাবে মক্কায় হজ পালন করেন এবং মদিনাও সফর করেন। ফিরে এসে তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ: “Personal Narrative of a Pilgrimage to Al-Madinah and Meccah” এই বইতে তিনি কাবা শরিফ, হাজরে আসওয়াদ, মক্কার অলিগলি, মুসলিম সমাজের জীবনধারা ও হজের রীতি সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দেন—যা ছিল সেই যুগের ইউরোপিয়ানদের জন্য এক বিস্ময়কর জানালা। তিনি কি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন? এই প্রশ্ন বহুবার উঠেছে। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, তিনি প্রকৃতপক্ষে ইসলাম গ্রহণ করেননি। বরং ইসলাম ও মুসলমানদের জীবনধারা বোঝার জন্য এই বিপজ্জনক ও দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। তার অনেক লেখায় মুসলিমদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ফুটে উঠলেও ধর্মান্তরিত হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ঐতিহাসিক গুরুত্ব স্যার বার্টনের সফর কেবল একজন ‘গুপ্তচর’-এর ভ্রমণ নয়, বরং এটি ছিল একটি সভ্যতাগত অনুসন্ধান। তিনি ইসলামী সমাজকে বাইরের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, বরং ভেতর থেকে দেখে তা বিশ্লেষণ করার দুঃসাহস করেছিলেন। অনুরূপ আর কেউ? বার্টনের পর ইউরোপে বহু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করেন। উল্লেখযোগ্য হলেন: মারম্যাডুক পিকথল (Marmaduke Pickthall) – কুরআনের অন্যতম প্রভাবশালী ইংরেজি অনুবাদক লিওপোল্ড ওয়াইস (Muhammad Asad) – অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত এক সাংবাদিক যিনি পরবর্তীতে মুসলমান হন এবং ইসলামি রাষ্ট্রনীতি ও হাদিস ব্যাখ্যায় প্রভাব রাখেন। স্যার রিচার্ড ফ্রান্সিস বার্টনের হজযাত্রা ইতিহাসে বিরল ঘটনা। একজন অমুসলিম ইউরোপিয়ান যিনি মুসলমানের ছদ্মবেশে পবিত্র হজ পালন করেন, মুসলিম সমাজ ও সংস্কৃতিকে নিবিড়ভাবে বোঝার চেষ্টা করেন এবং তার অভিজ্ঞতাকে লিপিবদ্ধ করেন—এমন নজির ইতিহাসে হাতে গোনা।
সংগ্রহ ও সম্পাদনা: OUR ISLAM রিপোর্টিং ডেস্ক তথ্যসূত্র: Personal Narrative by R.F. Burton, Oxford Islamic Studies, British Library Archives এনএইচ/ |