লন্ডনে বৈঠক নিয়ে ইসলামি দলগুলোর মিশ্র প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ:
১৫ জুন, ২০২৫, ০৭:০৮ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
![]()
|| শাব্বির আহমাদ খান || গত শুক্রবার (১৩ জুন) যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে একটি হাই-প্রোফাইল বৈঠক হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার এই বৈঠকের দিকে দৃষ্টি ছিল গোটা দেশবাসীর। সেই বৈঠকে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনাসহ রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচন প্রসঙ্গ ছাড়া অন্যান্য বিষয় প্রকাশ্যে না এলেও ধারণা করা হচ্ছে, বড় দল হিসেবে বিএনপির সঙ্গে অনেক বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বোঝাপড়া হয়েছে এই বৈঠকে। লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক এখন দেশের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই বৈঠক প্রসঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। এ ব্যাপারে প্রধান ইসলামি দলগুলোরও তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে। লন্ডন বৈঠক নিয়ে প্রথমে মার্জিত প্রতিক্রিয়া জানালেও পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামী কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই বৈঠকে একটি বিশেষ দলের (বিএনপি) প্রতি প্রধান উপদেষ্টার অনুরাগ হিসেবে দেখছে জামায়াত। শনিবার (১৪ জুন) বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, ‘তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বিগত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। তার এই ঘোষণার পর লন্ডনে সফরকালে একটি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এর মাধ্যমে তিনি একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ করেছে। আমরা মনে করি দেশে ফিরে এসে প্রধান উপদেষ্টা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে তার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।’ বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামী আরও বলেছে, ‘একটি দলের সাথে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি দেওয়ার কারণে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।’ এছাড়া দেশে 'অনেকগুলো রাজনৈতিক দল থাকার পরও একটি মাত্র রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ করে দেশের সামগ্রিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের' সমালোচনা করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। লন্ডন বৈঠক নিয়ে দলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। বৈঠকটিকে একটি ‘ইতিবাচক উদ্যোগ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপি নেতার এই আলোচনার রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে বলেই আমরা মনে করি।’ তবে এই বৈঠকের পর যৌথ যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে এর কড়া সমালোচনা করে গাজী আতাউর রহমান। একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সরকার এই ধরনের বিবৃতি দিতে পারে না বলে মনে করেন তিনি। এদিকে বৈঠককে ইতিবাচক উল্লেখ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেছেন, ‘নির্বাচনের সময়সীমাকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল এবং যার ফলে জনমনে শঙ্কা ও উদ্বেগ জন্ম নিয়েছিল— প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণার পর তা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে বলে আমরা আশা করি।’ মাওলানা আফেন্দী বলেন, ‘শুধু ঘোষণায় সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ সুনিশ্চিত করে একটি অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।’ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এই বৈঠক প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে বলেছে, কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে যৌথ বিবৃতি প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বার্তা পৌঁছে দেয়। তাই এ বিষয়ে সরকারকে আরও সতর্ক এবং ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করা জরুরি। যাতে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত হয়। শনিবার (১৪ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ এবং মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। তবে নির্বাচনকালীন প্রক্রিয়া, বিচারিক অগ্রগতি ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নিয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠককে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তারা। বিবৃতিতে তারা বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসন এবং একটি গ্রহণযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ তৈরিতে যেকোনও গঠনমূলক সংলাপ ও আলোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ এবং মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের এক বিবৃতিতে এই বৈঠক সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, লন্ডন সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে ‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রমজানের আগে, এমনকি আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে’ বলে যে অভিমত দিয়েছেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। বিশেষ করে মৌলিক সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি ফেব্রুয়ারির মধ্যে হওয়া প্রয়োজন—এই দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গঠনমূলক। তারা বলেন, এই ঘোষণা দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা দূর করতে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। পাশাপাশি নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। লেখক: সাব এডিটর, আওয়ার ইসলাম এমএইচ/ |