ইসরায়েল সুরক্ষা জোট ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে ব্যর্থ
প্রকাশ:
১৫ জুন, ২০২৫, ০৯:৫৩ রাত
নিউজ ডেস্ক |
![]()
মুহাম্মাদ শোয়াইব বর্তমান ও পূর্ববর্তী ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষে ইসরায়েলের যে বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে, তা হলো—তারা আঞ্চলিক নানা সুবিধা ও চুক্তির উপর নির্ভর করে, যা তাদের ইরানি ভূখণ্ডে প্রবেশাধিকার দেয় এবং ইরান থেকে আসা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে সুরক্ষাও নিশ্চিত করে। এই বাস্তবতা আমাদের বাধ্য করে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর ধরন, এগুলো পরিচালনাকারী পক্ষসমূহ এবং এই ব্যবস্থাগুলোর পেছনে থাকা চুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করতে—যা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যে প্রতিফলিত হয়। প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করার প্রক্রিয়া গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তিগত সমন্বয়ের উপর নির্ভর করে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় উৎক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্য শনাক্ত ও ট্র্যাক করা থেকে, এরপর তার ধরন, গতি, উচ্চতা ও গতিপথ বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে উপযুক্ত প্রতিরোধ কৌশল ও সময় নির্ধারণ করা হয়, এবং শেষে সেগুলো ভূপাতিত করার চেষ্টা করা হয়। ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময়ের ঘটনার পর আমেরিকার কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে পরমাণু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জোনাথান প্যান্টার এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করতে একাধিক দেশের সামরিক বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করেছে—যাদের কাছে প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তি ও সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েল। তথ্য আদান-প্রদান হামলা শুরু হলে, উন্নত স্যাটেলাইট যেগুলো ইনফ্রারেড ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সেখান থেকে প্রাপ্ত সতর্কতা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়—প্রত্যেক সেকেন্ড তখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সময় মিত্রদের মধ্যে নির্দেশনা ও সংকেত আদান-প্রদানের সক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়, যাতে ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেমগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে। যদিও দায়িত্ব বণ্টন পূর্বনির্ধারিত হতে পারে, তবে বাস্তব প্রতিরোধমূলক হামলার সময় সিদ্ধান্ত নিতে হয় সম্মিলিতভাবে। প্যান্টার—যিনি পূর্বে মার্কিন নৌবাহিনীতে কর্মকর্তা ছিলেন—তিনি বলেন, ইসরায়েল ও তার মিত্ররা ইরানের নিক্ষিপ্ত ব্যালিস্টিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল ও ড্রোনের বিরুদ্ধে "বহুতল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা" (multi-layered defense) ব্যবহার করে থাকে। প্রতিরোধ কৌশল ইরান যেসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, সেগুলো সাধারণত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করা হয়। এগুলো শত শত কিলোমিটার উচ্চতায় উড়ে চলে এবং সাধারণত ইঞ্জিন ছাড়াই চলে—পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের উপর নির্ভর করে স্থানচ্যুতি ঘটায়। লক্ষ্যবস্তুর উপর দিয়ে যখন আবার বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন এদের গতি শব্দের গতির বহু গুণ বেশি হয়। এই ধরনের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যের কারণে শেষ ধাপে এই ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। আবার বাইরে, মহাকাশেই এদের ধ্বংস করাও জটিল, কারণ সেখানকার শূন্যতায় কোনও শকওয়েভ (explosive shock) তৈরি হয় না—কারণ সেখানে বায়ু নেই। ফলে ক্ষেপণাস্ত্রের কাছাকাছি একটি প্রতিরোধ ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণ ঘটালেই সেটিকে ধ্বংস করা সম্ভব হয় না, বরং সরাসরি আঘাত করতে হয়। এই প্রেক্ষাপটে, বিশেষজ্ঞ জোনাথান প্যান্টার ইসরায়েল ও তার মিত্রদের সামনে দীর্ঘমেয়াদি সংঘর্ষ হলে যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখা দেয়, তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হামলা যত দীর্ঘস্থায়ী হয়, প্রতিরক্ষা বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র তত দ্রুত ফুরিয়ে যেতে থাকে—কারণ প্রতিরোধ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে খরচ অনেক বেশি এবং প্রযুক্তিগতভাবে জটিল, যেখানে আক্রমণকারী তুলনামূলকভাবে কম খরচে বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে। চ্যালেঞ্জ আরও জটিল হয়ে ওঠে, কারণ একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে একাধিক প্রতিরোধ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে হয়, এবং যুদ্ধজাহাজ বা নৌবাহিনীর টহলজাহাজে সীমিত সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণের জায়গা থাকে। এই জটিলতা আরও বাড়িয়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি নতুন সংকট—সতত প্রতিরক্ষা জাহাজ মোতায়েন রাখতে হলে তা ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। আর যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল ইরান নয়, বরং চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো আরও প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে প্রতিরক্ষার অগ্রাধিকার ঠিক রাখতে হয়। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রাজনৈতিক ভিত্তি ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইরান থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে পাঠানো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিরোধে যেভাবে আঞ্চলিক সমন্বয় হয়েছে, তা ছিল এই ধরনের প্রথম প্রকাশ্য ও বিস্তৃত সমন্বিত প্রচেষ্টা। এর ভিত্তি তৈরি হয়েছিল আগের স্বীকৃতি-চুক্তি (normalization agreements) ও পরবর্তী নিরাপত্তা সমঝোতার মাধ্যমে, যার আওতায় ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য সামরিক কমান্ডের (CENTCOM) অধীন আনা হয়—যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য আঞ্চলিক মিত্ররাও রয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ১৫ এপ্রিল ২০২৪-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই আঞ্চলিক সমন্বয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়। তারা জানায়, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তারা এই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে جزئياً (আংশিকভাবে) আরব দেশগুলোর সহযোগিতার কারণে—যারা ইরানের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছে, যুদ্ধবিমান চলাচলের জন্য তাদের আকাশসীমা উন্মুক্ত করেছে, রাডার তথ্য শেয়ার করেছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ বাহিনীও অংশ নিয়েছে। পত্রিকাটি আরও জানায়, এই সহযোগিতা মূলত বহু বছরের মার্কিন প্রচেষ্টার ফল—যার লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানো। যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর মতন কোনও আনুষ্ঠানিক জোট তৈরি না করে বরং একটি নমনীয় ও আঞ্চলিক বিমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গড়ে তোলে, যাতে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ক্রমবর্ধমান হুমকি ঠেকানো যায়। সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ও গতি সঞ্চার মধ্যপ্রাচ্যে একটি সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা বহু দশক আগেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু বছরের পর বছর চেষ্টার পরও বাস্তব অগ্রগতি ছিল সীমিত ও ধীর। এই উদ্যোগ নতুন গতি পায় তখন, যখন ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ (Normalization) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২২ সালে পেন্টাগন (মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর) ইসরায়েলকে ইউরোপীয় কমান্ড (EUCOM) থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক সেন্টকম (CENTCOM)-এর অধীনে—যা পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই রদবদল ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ করার পথ খুলে দেয়, যা পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ডানা স্ট্রোল—যিনি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পেন্টাগনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রধান বেসামরিক কর্মকর্তা ছিলেন—তিনি বলেন, “ইসরায়েলের সেন্টকমে স্থানান্তর ছিল একটি গেম-চেঞ্জার। এতে করে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং আগাম সতর্কতা দেওয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে।” ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনুসারে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি ইসরায়েল ও আরব দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে আলোচনার বিষয় ছিল—ইরানের ক্রমবর্ধমান ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সক্ষমতার বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরক্ষা সমন্বয় কিভাবে গড়ে তোলা যায়। একজন উচ্চপদস্থ ইসরায়েলি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, “আব্রাহাম অ্যাকর্ড (চুক্তি) পুরো মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতাকে পাল্টে দিয়েছে। আর সেন্টকমে অন্তর্ভুক্তি আমাদের আরব সরকারগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার নতুন মাত্রা খুলে দিয়েছে।” এতে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন এই নতুন নিরাপত্তা কাঠামো একদিকে যেমন ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে দূরত্ব ঘোচাতে ভূমিকা রাখছে, তেমনি ইরানের সম্ভাব্য আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি যৌথ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও গড়ে তুলছে। প্রথম মুখোমুখি সংঘর্ষ ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ঘটে যাওয়া প্রথম সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের বিবরণে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে—যখন ইরানের ড্রোনগুলো ইসরায়েলের দিকে এগিয়ে আসছিল, তখন সেগুলোর বেশিরভাগই গুলি করে ভূপাতিত করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান। এছাড়া কিছু ড্রোন ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জর্ডানের যুদ্ধবিমান দ্বারা প্রতিহত হয়, তবে সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে কম। একপর্যায়ে আকাশে একসাথে ১০০টিরও বেশি ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল, যেগুলো ইসরায়েলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর কিছু নিজস্ব আকাশসীমায় এবং কিছু আকাশসীমার বাইরে ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানও বেশ কিছু ইরানি ড্রোন ধ্বংস করে। পাশাপাশি, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করা যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ক্ষেপণাস্ত্র-সজ্জিত ডেস্ট্রয়ার জাহাজ ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথেই প্রতিহত করে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ইরাকের কুর্দিস্তানের রাজধানী এরবিলের কাছে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে—যেটি ইসরায়েলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ সে সময় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের যুদ্ধবিমানগুলো ইরাক-সিরিয়া সীমান্তের আকাশে ইসরায়েলমুখী বেশ কিছু ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করে। বর্তমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যক্রম ইসরায়েল ও মিত্রদেশগুলোর নেতৃত্বে গঠিত আঞ্চলিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা যায়—এই ব্যবস্থাটি আগের মতো করেই কাজ করছে। তবে এতে জড়িত দেশগুলো সচেতনভাবে গণমাধ্যম বা জনগণের সামনে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকছে। এর কারণ হলো—এই ধরনের সহযোগিতা, বিশেষ করে যখন তা ইসরায়েলের জন্য, সাধারণ জনগণের মাঝে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে—বিশেষ করে গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে তারা বেশ কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী এই অঞ্চলে সক্রিয়ভাবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। এ বিষয়ে:
এছাড়া, এনবিসি নিউজ জানায়—যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় সম্ভাব্য ইরানি পাল্টা আক্রমণ মোকাবেলায় পূর্ব ভূমধ্যসাগরে নতুন নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার মোতায়েন করেছে। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের ভূমিকা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানান—ব্রিটেন যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাতে শুরু করেছে এবং ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে, ফ্রান্স জর্ডানের অনুরোধে জর্ডানি আকাশসীমায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করেছিল—যা আবারও দেখায় যে এই সহযোগিতা অনেকাংশেই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক সম্মতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। জর্দানের অবস্থান জর্দান সরকার তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে একটি স্পষ্ট ও রক্ষণশীল অবস্থান বজায় রেখেছে। সরকারি মিডিয়াগুলোর বরাতে জানা যায়—জর্দানের বিমানবাহিনী তাদের নিজস্ব আকাশসীমায় ঢুকে পড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করেছে। সরকারি বার্তা সংস্থা পেট্রা (Petra) এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তার বরাতে জানায়—এই প্রতিরক্ষা কার্যক্রম একটি সামরিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে, যা ইঙ্গিত করেছিল যে উড়ন্ত বস্তুগুলো (ক্ষেপণাস্ত্র/ড্রোন) জর্দানের ভূখণ্ডে, বিশেষ করে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়, পতিত হতে পারে এবং এতে বেসামরিকদের নিরাপত্তার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ঝুঁকি ছিল। যুক্তরাষ্ট্র–জর্দান প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রেক্ষাপট ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত যুক্তরাষ্ট্র-জর্দান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী জর্দানে মোতায়েন থাকলেও তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা বা সরাসরি প্রতিরোধমূলক আক্রমণের অধিকার স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়নি। তবে এই চুক্তির নির্দিষ্ট কিছু ধারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা তৎপরতার জন্য আইনি ব্যাখ্যার সুযোগ তৈরি করে:
এই অবস্থান জর্দানের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ—একদিকে তারা দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষা করছে, অন্যদিকে ইসরায়েলপন্থী পদক্ষেপের দায় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে, বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে আরব জনগণের প্রতিক্রিয়া মাথায় রেখে। অবিচল সমন্বয় এবং আঞ্চলিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল মুখোমুখি সংঘর্ষে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহতের ঘটনাগুলো থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতার যে রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি হয়েছে—তা এখন প্রতিনিয়ত সক্রিয় ও স্থায়ী রূপে কাজ করছে। এই কাঠামো মূলত ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর স্বাভাবিকীকরণ (তথা ‘নরমালাইজেশন’) ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা সমন্বয়ের অংশ। ইসরায়েলের কৌশল: আঞ্চলিক ঢাল গঠন ইসরায়েল এই আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তার প্যালেস্টাইন ও প্রতিবেশী অঞ্চলে আক্রমণাত্মক ও সম্প্রসারণমূলক নীতি চালিয়ে যেতে চায়। তাদের লক্ষ্য:
ইরানের পাল্টা বার্তা ও হুমকি অন্যদিকে, ইরান বারবার হুঁশিয়ারি ও হুমকি দিয়ে আসছে—যেসব রাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে বা আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অংশ নিচ্ছে, তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। ইরানের এই কৌশলের পেছনে তিনটি লক্ষ্য রয়েছে:
এমএইচ/ |