একজন পরিশীলিত আলেম রাজনীতিবিদ মাওলানা মুহাম্মাদ আলী
প্রকাশ: ০৭ জুলাই, ২০২৫, ০৫:৫৮ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

মুফতী খন্দকার আজিজুল হক ইয়াকুবী

ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি দীনকে সর্বক্ষেত্রে বিজয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের পূর্বসূরিরা অবিরাম সংগ্রাম করে এসেছেন। তাদের সেই পথ ধরে এই সময়েও একঝাঁক আলেম ইলমি, দাওয়াতি ও সিয়াসতের লাইনে নিজেদের পুরোপুরি সোপর্দ করে দিয়েছেন। এই কাফেলারই একজন আলোকিত মানুষ মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ আলী। শিক্ষার বিস্তার, দাওয়াতের প্রসার এবং রাজনীতির ময়দানে একজন পরিশীলিত মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।

মাওলানা মুহাম্মাদ আলীর জন্ম ১৯৭৭ সালের ২ কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে। তার বাবার নামা মরহুম মুহাম্মাদ জংগু মিয়া, মা রহিমা খাতুন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ আলী প্রথমে দৌলতপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সবাহি মকতবে আরবি কায়দা পড়ার মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর মসজিদের পাশেই অবস্থিত দৌলতপুর ইসলামিয়া হাফিজিয়া মাদরাসায় (বর্তমানে দারুল উলুম দৌলতপুর) কুরআনে কারিমের সবক গ্রহণ করেন। শিশুকালে দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও পড়ালেখা করেছেন। দীনি শিক্ষার প্রতি তার এবং তাঁর মা-বাবার প্রবল আগ্রহে পুনরায় দৌলতপুর মাদরাসায় ভর্তি হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। পরে ভৈরব কমলপুর মাদরাসায় মিজান, নাহবেমীর ও হেদায়েতুন্নাহু জামাতের ক্লাস সম্পন্ন করেন।

এরপর ঢাকার জামিয়া দারুল উলুম মতিঝিলে ভর্তি হয়ে ধারাবাহিক পড়ালেখা করে ২০০১ সালে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। ফারাগাতের পর ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ‘তাখাসসুল ফিল ফিক্বহি ওয়াল আদব’ সম্পন্ন করেন। তিনি ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত উচ্চতর ইসলাম শিক্ষা ইনস্টিটিউটেও পড়ালেখা করেছেন। তিনি ২০০৬ সালে কর্মজীবন শুরু করেন।

মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনের শুরুতেই বাজিতপুরের বাহেরবালী মাদরাসাতে খেদমত করেন। নরসিংদী জামিয়া আমানিয়া রহমতপুর কাঙ্গালিয়া মাদরাসায় দীর্ঘদিন শিক্ষকতাসহ নাজিমে তালিমাতের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানেও তিনি কয়েকটি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করছেন। মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ আলী দেশ ও সমাজের কল্যাণকর কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে পছন্দ করেন। সেই লক্ষে তিনি ২০০০ সালে ছাত্র অবস্থাতেই প্রতিষ্ঠা করেন ‘দৌলতপুর কল্যাণ পরিষদ’ নামে একটি সমাজসেবামূলক সংগঠন। তিনি অত্যন্ত নম্র-ভদ্র, সহজ-সরল ও ভালো মনের মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত।

মুফতী মুহাম্মদ আলী ইসলাম ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বরে নিজের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রহিমা খাতুন মহিলা মাদরাসা’। দৌলতপুর গ্রামে নিজ পিতৃভিটায় প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটি বর্তমানে কয়েকশ ছাত্রী নিয়ে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। ছেলেদের জন্যও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জামিয়া মুহাম্মাদিয়া’ নামে একটি মাদরাসা।

বিশিষ্ট এই আলেমের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ১. জামিয়া মুহাম্মাদিয়া হিলচিয়া বাজার [২০২০] ২. জামিয়া রহিমা খাতুন মহিলা মাদরাসা হিলচিয়া বাজার (বাশ মহল), বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ [প্রতিষ্ঠা সন: ২০০৯] ৩. দৌলতপুর বায়তুল আমান মসজিদ ও মাদরাসা কমপ্লেক্স [২০১২] ৪. দৌলতপুর কল্যাণ পরিষদ [২০০০]। ৫. হালিমাতুস সা'দিয়া (রা.) মহিলা মাদরাসা গুরই, নিকলী, কিশোরগঞ্জ [২০২৩] মাওলানার রাজনৈতিক জীবন নরসিংদী রায়পুরা কাঙ্গালিয়া মাদরাসা পড়াশোনার সময় বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের মাধ্যমে রাজনীতিতে মাওলানা মুহাম্মদ আলীর হাতেখড়ি। যুব মজলিস নিয়ে তিনি কঠোর পরিশ্রম করে নিকলী বাজিতপুরসহ পুরো কিশোরগঞ্জ জেলায় অধিক পরিচিতি অর্জন করেন।

পরে কিশোরগঞ্জ জেলা যুব মজলিসের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। সাংগঠনিক কর্মদক্ষতা, কর্মকৌশল ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে তিনি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। বর্তমান আমির মাওলানা মামুনুল হক কারাবন্দী থাকাকালে তাঁর মুক্তির লক্ষে মাঠে-ময়দানে প্রতিবাদে সামনের সারিতে ছিলেন এই আলেম রাজনীতিবিদ। সংগঠনের জন্যে এখনো নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুফতী মুহাম্মদ আলীকে নিকলী-বাজিতপুর আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসরে পক্ষে রিকশা প্রতীকে তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেখতে চান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তিনি এ ব্যাপারে সবার দোয়া ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।