প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক সমাধান ছাড়া ড. ইউনুসের সাথে আলোচনা নেই
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৯ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

|| যুবায়ের আহমাদ ||

হেফাজত, জামায়াত, চরমোনাই, জমিয়ত, খেলাফত মজলিসসহ ইসলামী দলগুলোর নেতাদের কাছে আমার অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাওয়া, বছরের পর বছর নির্যাতন ভোগ করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমে যে সরকারকে ক্ষমতায় আনলেন, তাদের কাছ থেকে কী পেলেন? শুধু কি ইউনুসের ভবনে একটু প্রবেশাধিকার আর মাঝেমাঝে একটু ছবি তুলতে পারাই আপনাদের প্রত্যাশা ছিল? এতটুকুতেই কি আপনারা সন্তুষ্ট? নাকি আরো কিছুর প্রত্যাশায় জাতি আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে?

আমি বিশ্বাস করি, আপনারা এতেই সন্তুষ্ট নন, আরো প্রত্যাশা আছে, সে প্রত্যাশা পূরণে চেষ্টাও করেছেন, করছেন। কিন্তু প্রাপ্তি কতটুকু? ন্যূনতম প্রত্যাশাটুকুও যদি পূরণ করতে না পারেন তাহলে আজ যারা ড. ইউনুসের সঙ্গে আপনাদের ছবি দেখে মারহাবা বলে, তারাই একদিন আপনাদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। জাতির ধর্মীয় দাবিগুলোর তেমন কোনোটিই আদায় করতে পারেননি বলে নিজেরাও একদিন হতাশ হবেন। 

ইউনুস যখনই ক্ষমতায় থাকতে পারা নিয়ে শংকায় পড়ে যায়, তখনই আপনাদের ডেকে নেয়?

ক্ষমতায় টিকতে আপনাদের এতই যার দরকার সে-ই  আপনাদের চোখের সামনেই নারী সংস্কার কমিশনে ইসলামবিরোধী সব নীতি প্রতিষ্ঠা করার আয়োজন সম্পন্ন করল, নারী দিবসে রূপান্তরিতকে পুরস্কৃত করল, যেই শরীফ শরীফা ইস্যু তাদের ক্ষমতার পথ সুগম করেছিল সেই ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু প্রমৌট করল, সর্বশেষ জাতির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা প্রাইমারি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক না দিয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করল আপনারা এসবের পক্ষে আছেন কি না তা জানতে চেয়েছিল? কতবড় দুঃসাহস!

এখনই সময় আসেনি কী পেলেন হিসেবটা করার? দয়া করে কঠোর হোন! প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক ইস্যুর সমাধান না হলে ইউনুসের সাথে আর কোনো ছবি আমরা দেখতে চাই না।

ইস্যুটি খুবই যৌক্তিক। ৬৫ হাজার স্কুলে একজন করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ হলে এদেশের জেনারেল ধারায় পড়ুয়া কোমলমতি শিশুদের অন্তরে তাওহিদের বীজ বপন করে দেবার সুযোগ হবে। শিশুরা আল্লাহ-রাসুলের (সা.) পরিচয় জানবে, ইসলামের বিধিবিধান ও সৌন্দর্যের সাথে পরিচিত হবে। ২০ বছর পর এ শিশুরাই ইসলামের পক্ষে কথা বলবে। আবার ৬৫ হাজার দাওরায়ে হাদিস/কামিল পাস আলেমের সরকারি চাকরিও হবে৷ সব স্কুলেই ইসলাম শিক্ষা বই আছে, অনেক স্কুলে হিন্দু শিক্ষক ইসলাম শিক্ষা পড়ায়! কতটা লজ্জার!! ইসলাম শিক্ষা সাবজেক্ট আছে, তাহলে পড়ানোর জন্য কেন শিক্ষক দেবে না?

জাতির এতবড় ইস্যুটিতে দয়া করে আপনারা সর্বোচ্চ সিরিয়াস হোন! প্রথমত মুহতারাম হেফাজত আমীর/মহাসচিব, জামায়াত আমীর, আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, পীর সাহেব চরমোনাই, আল্লমা মামুনুল হক, বিএনপিরও প্রতিনিধি এবং সব ইসলামী দলের শীর্ষ নেতারা একটু সময় করে এক টেবিলে বসে ইউনুসকে দয়া করে কঠোর একটি ম্যাসেজ দিন! বারবার তো ড. ইউনুসের প্রয়োজনে গণভবনে গেছেন, তৌহিদি জনতার প্রাণের এ দাবি নিয়ে দয়া করে আরেকবার গণভবনে যান! 
মাত্র ১০% শিক্ষার্থী মাদরাসায় পড়ে, বাকি ৯০%কে দ্বীন শেখানোর ব্যবস্থা করার দায়িত্ব কে নেবে? ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ হলে একদিকে শিশুরা ইসলামের আলো পাবে, অন্যদিকে ৬৫ হাজার আলেমের কর্মসংস্থান! এতবড় একটি ইস্যুতেও কি আপনারা দয়া করে একটু সময় দেবেন না?

যমুনা বা গণভবনও কাজ না হলে সব দলের শীর্ষ নেতারা এক কঠোর কর্মসূচি দিন! ঢাকায় সর্বদলীয় মহাসমাবেশ। সেখানে বাইতুল মুকাররমের মুহতারাম খতিব, শাইখ আহমাদুল্লাহ, ড. মিজানুর রহমান আজহারী, ড. আসাদুল্লাহ আল গালিব, শাইখ হাসান জামীল, ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার, এনায়াতুল্লাহ আব্বাসীসহ সব ঘরানার শীর্ষ বক্তারা থাকবে। সব ইসলামী দলের প্রধান, সব শীর্ষ বক্তারা মাত্র একটি দিন এ ইস্যুতে ঢাকায় সমাবেত হয়ে প্রয়োজনে সে সমাবেশ থেকেই মার্চ টু যমুনা বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও!

আল্লাহর রহমতে ইনশাআল্লাহ একদিনেই কেল্লা ফতে। একদিনের কষ্ট, আপনার প্রজন্ম শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এর উপকার ভোগ করবে।

লেখক: কলামিস্ট, খতিব ও শিক্ষক

এমএইচ/