নবীজি সা. এর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ: সুন্নত অনুসরণ ও বিদ'আত বর্জন
প্রকাশ:
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
মুহাম্মদ আরশাদ ইসলামের ইতিহাসে রবিউল আউয়াল মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। কারণ এ মাসে আল্লাহ তা'আলা সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই পৃথিবীর বুকে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআন পাকে এরশাদ করেন—‘নিশ্চয়ই আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি।’( সুরা আম্বিয়া: ১০৭) রহমত মানে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুরো জীবন মানব জাতির জন্য কল্যাণ ও হেদায়েতের উৎস। এজন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক মানুষের জন্য জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন—‘তোমাদের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে উত্তম আদর্শ।’(সুরা আহযাব:২১) তাই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্ত হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে একজন মুমিন প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত সকল বিধানকে নিজের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেনে চলা এবং মনগড়া কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ না করা অপরিহার্য বিষয়। সুতরাং বারই রবিউল আউয়াল নবীজির ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের জন্য জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা যাবে না। কেননা তা হচ্ছে বিদ'আত ও শরীয়ত পরিপন্থী নবআবিষ্কৃত প্রথা। কারণ এই ঈদে মিলাদুন নবী যদিও হিজরীর ষষ্ঠ শতাব্দীর পরে আবিষ্কৃত, কিন্তু জশনে জুলুস একেবারেই নবআবিষ্কৃত বিংশ শতাব্দীর সংযোজন। যা ভারতবর্ষে শিয়া সম্প্রদায়ের দেখা-দেখি মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ করেছে। যেমন কেফায়াতুল মুফতী তে এসেছে: শহরের মধ্যে জুলুস বের করা এবং মিলাদ পড়ে পড়ে রাস্তায় চলা ইত্যাদি আবশ্যকীয় ও দ্বীনের অংশ হিসেবে গণ্য করা বিদ'আত।" (১/১৪৯) আর প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের উৎপত্তির ব্যাপারে রাহে সুন্নাত কিতাবে এসেছে; এই বিদ'আত ৬০৪ হিজরীতে ইরাকের মুসিল শহরের বাদশাহ মুজাফফর উদ্দীনের নির্দেশে সর্বপ্রথম সূচনা হয়, যিনি দ্বীনের ব্যাপারে একজন উদাসীন ব্যক্তি ছিলেন। (রাহে সুন্নাত: ১৬২) আর ঈদে মিলাদুন নবী উদযাপন শুরু হয় খ্রিস্টানদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। যেমন মুফতী শফী (রহ.) তাফসিরে মা'আরিফুল কোরআন এ বলেছেন: এই উভয় ঈদের সম্পর্ক ইবাদতের সাথে, কোন নবী ও রাসূলের জন্ম কিংবা মৃত্যুর সাথে সম্পৃক্ত নয়। আর যদি নবীজীর জন্মকে কেন্দ্র করে কোন উৎসবের কথা থাকত, তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ঈদের সংখ্যা দুটি ঘোষণা না দিয়ে তিনটি করতেন। অথচ নবীজি নিজেই বছরে দুটি ঈদ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেমন হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে—‘আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনায় আগমন করলেন। সেখানে লোকদের দুটো দিন ছিল, যেদিন তারা খেলাধুলা করত। রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন: "এ দুটি দিন কী?" কোন সাহাবী, তাবেঈন, তাবেতাবেঈন, মুহাদ্দিস ও ফকীহ কিংবা কোনো পীর-মাশায়েখ ও বুজুর্গ এ ধরনের কোন আমল প্রমাণিত নয়। তাই এসব কিছু দ্বীনের নামে শরীয়তের মধ্যে নবআবিষ্কৃত আমল হওয়াই প্রত্যাখ্যানযোগ্য। (এলাউস সুনান: ১৭/৪৩০, আলমাদখাল লি ইবনিল হাজ্ব: ২/১০) অতএব নিজেদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ বাদ দিয়ে নবীজীর তরিকায় মিলাদুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করি। যেমন হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে—‘হযরত আবু ক্বতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল তিনি কেন সোমবারে রোজা রাখেন? উত্তরে নবীজি বললেন: "সোমবারে আমার জন্ম হয়েছে এবং কুরআনুল কারীম নাযিল হয়েছে। তাই আমি এই দিনে রোজা রাখি।’(সহীহ মুসলিম:১১৬২) উক্ত হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়— নবীজির জন্ম দিবস পালনের নিয়ম হলো সোমবারে রোজা রাখা, যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই রেখেছেন নিজের জন্ম দিবস পালনার্থে। কেননা তারিখ ভিত্তিক অর্থাৎ ১২ই রবিউল আউয়ালেই যদি শুধুমাত্র নবীজির মুহব্বতের বহিঃপ্রকাশের জন্য নির্ধারিত করা হয়, আর বাকি পুরো বছর নবীজির সুন্নতের কোন ইয়ত্তা না করা — নিশ্চয় তা ধোঁকাবাজির অন্তর্ভুক্ত হবে। আর ১২ই রবিউল আউয়াল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মতানৈক্য থাকলেও বারটি সোমবার ছিল তা নিশ্চিত। আর শরীয়তের মাসআলার দিকে লক্ষ্য করলেও বুঝা যায় বিদ'আতিদের কর্মকাণ্ড যেমন শরীয়ত পরিপন্থী, তেমনি বাস্তবতারও বিপরীত। কেননা হাদিস দ্বারা বুঝা যায় নবীজি নিজের জন্ম দিবসকে উপলক্ষ করে রোজা রেখেছেন, আর বিদ'আতিরা এ দিনকে সামনে রেখে ঈদ উদযাপন করে। অথচ ঈদ আর রোজা দুটি বিপরীতমুখী কাজ। শরীয়ত যে দিনসমূহে ঈদ পালনের কথা বলেছে, সেদিনসমূহে আবার রোজা হারাম করেছে। তাহলে দুই ঈদ ব্যতীত অন্য কোন ঈদ উদযাপন করা শরীয়ত সমর্থিত নয়। আসুন আমরা বিদ'আত মুক্ত জীবন গড়ি এবং সত্যিকার অর্থে সঠিক পদ্ধতিতে নবীজিকে ভালোবাসি। এসএকে/ |