|| মো. মোসাব্বির রাহমান ||
সমাজের পরিবর্তনশীল ধারায় একক অভিভাবক পরিবার এখন আর অচেনা কোনো বাস্তবতা নয়। বিবাহ বিচ্ছেদ, মৃত্যু কিংবা ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতির কারণে অনেক শিশুই বাবা-মা দুজনের পরিবর্তে একজন অভিভাবকের স্নেহ-মমতা ও দায়িত্বে বড় হয়ে উঠছে। এ ধরনের পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুরা প্রায়শই নানা রকম মানসিক ও আবেগিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে দেখা যায়, একক অভিভাবক পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুদের মধ্যে ৬২ শতাংশ কোনো না কোনো সময় হতাশায় ভুগেছে এবং ৪৭ শতাংশ পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।
আবেগিক শূন্যতা ও নিরাপত্তাহীনতা
একক অভিভাবক পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরা অনেক সময় ‘অসম্পূর্ণতা’র অনুভূতি নিয়ে বড় হয়। তারা ভাবতে শুরু করে, কেন তাদের পরিবার অন্য সবার মতো নয়। বাবা-মা দুজনের সান্নিধ্যের অভাব তাদের ভেতরে এক ধরনের আবেগিক শূন্যতা তৈরি করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সামাজিক চাপ ও প্রশ্নবাণ, যা শিশুর মনে নিরাপত্তাহীনতা ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ
বেশির ভাগ একক অভিভাবক পরিবারেই অর্থনৈতিক চাপ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এর প্রভাব সরাসরি শিশুর জীবনযাপন, শিক্ষা ও বিনোদনের সুযোগে পড়ে। অন্যদিকে সমাজে এখনও একক অভিভাবক পরিবারকে নিয়ে নানা কটাক্ষ ও কুসংস্কার বিদ্যমান, যা শিশুর মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আচরণগত পরিবর্তন ও পড়াশোনায় প্রভাব
গবেষণা বলছে, একক অভিভাবক পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরা অনেক সময় রাগী, চঞ্চল বা অন্তর্মুখী হয়ে পড়ে। তারা স্কুলে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না, সহজে হতাশায় ভোগে কিংবা সহপাঠীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সমস্যায় পড়ে। এই আচরণগত পরিবর্তনগুলো আসলে তাদের ভেতরে জমে থাকা আবেগিক চাপের বহিঃপ্রকাশ।
ইতিবাচক দিকও রয়েছে
তবে সব কিছু নেতিবাচক নয়। একক অভিভাবক পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরা অনেক সময় অল্প বয়সেই দায়িত্বশীলতা শেখে। তারা কঠিন বাস্তবতা মেনে নিতে শিখে এবং জীবনের প্রতি দৃঢ় মনোভাব গড়ে তোলে। অনেকে জীবনে সফল হওয়ার প্রেরণাও খুঁজে পায় এই অভিজ্ঞতা থেকে।
করণীয়
শিশুর মানসিক বিকাশে অভিভাবকের আন্তরিকতা ও সঠিক দিকনির্দেশনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একক অভিভাবকের উচিত সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা, তাকে বোঝানো যে ভিন্ন পরিবার মানেই খারাপ নয়। বিদ্যালয় ও সমাজকেও শিশুদের মানসিক সুস্থতার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
একক অভিভাবক পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরা মানসিকভাবে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সামাজিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের জন্য সুস্থ ও স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। শিশু হলো সমাজের ভবিষ্যৎ তাদের বেড়ে ওঠা যেন কোনো শূন্যতা নয়, বরং দৃঢ় মানসিকতার ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়, সেটাই হোক আমাদের লক্ষ্য।
লেখক: মেন্টাল হেলথ অ্যাডভোকেট,
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী Easfaa Meditech
এমএম/