জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তিসহ পাঁচ দাবিতে নেজামে ইসলাম পার্টির সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:১১ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পুরানা পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পরিস্থিতি ও জনগণের কল্যাণে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। পার্টি সভাস্থলে জুলাই সনদকে আইনিক ভিত্তি প্রদানসহ জরুরি অনুষঙ্গগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়।

পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার সংবাদ পাঠ করে জানান, তাদের দাবি দেশের সার্বভৌমত্ব, গণঅধিকার ও ন্যায়বিচার রক্ষার লক্ষ্যে প্রণীত—যা কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি নয় বরং জাতীয় স্বার্থের বিষয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজি। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, সংগঠন সচিব মাওলানা আবু তাহের খান, প্রচার সচিব মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ খান, দপ্তর সচিব মুফতি দ্বীনে আলম হারুনী, সহকারী অর্থ সচিব মাওলানা আনোয়ারুল কবীর, নির্বাহী সদস্য মুফতি আতিকুর রহমান সিদ্দিকী, মুফতি এহতেশামুল হক সাখী ও ইসলামী ছাত্রসমাজের সভাপতি আমীর জিহাদী। 

পার্টির উর্ধ্বতন নেতৃত্ব সংবাদকালে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবির মধ্যে রয়েছে-

প্রথম দাবি: জুলাই সনদের আইনিভিত্তি প্রদান:
জুলাই সনদ হলো ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে ছাত্রজনতার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের এক ঐতিহাসিক দলিল। এটি নিছক একটি কাগুজে ঘোষণাপত্র নয়; বরং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। তাই আমরা দাবি করি অবিলম্বে জুলাই সনদকে আইনিভিত্তি দিয়ে এর যথার্থ বাস্তবায়ন করা হোক এবং এ সনদের ভিত্তেতেই নির্বাচন করা হোক। অন্যথায় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে আমরা সাংবিধানিক আদেশ এবং গণভোটের প্রস্তাব করছি।

এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের রক্তের স্রোতধারায় ২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার উদগীরণ। অথচ ইতোপূর্বে ঘোষিত “জুলাই ঘোষণাপত্রে” শাপলা গণহত্যার উল্লেখ নেই। এর ঐতিহাসিক দায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই নিতে হবে। 

সুতরাং জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো জুলাই সনদও যেন কাগুজে ও  অকার্যকর হয়ে না যায় সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।  সর্বোপরি আমরা জুলাই সনদের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবী জানাই। 

দ্বিতীয় দাবি: আওয়ামী দোসর ও আধিপত্যবাদী ভারতীয় এজেন্ট জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ-
ইতোমধ্যে প্রতীয়মান হয়েছে যে, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল এদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের এজেন্ট এবং আওয়ামী লীগের দোসর। তারা ঘাপটি মেরে থেকে ২৪ এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে বহুমুখী ষড়যন্ত্র করছে। তারা ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৬ বছর ভারতীয় এজেন্ডায় স্বৈরাচারী হাসিনার সঙ্গ দিয়েছে। এখন আবার এদের ঘাড়ে ভর করে পলাতক আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় ফ্যাসিবাদের প্রধান সহযোগী জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী দোসরদের রাজনৈতিক কার্যক্রম অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

তৃতীয় দাবি: জুলাই ও শাপলাসহ সকল গণহত্যায় দায়ী এবং দুর্নীতিবাজদের বিচার নিশ্চিত করা-
২০২৪ সালের জুলাই- আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের গণহত্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ রক্তিম অধ্যায়। সেই সাথে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে সংঘটিত মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞও ইতিহাসের এক রক্তিম ট্র্যাজেডি। অবিলম্বে জুলাই ও শাপলাসহ ফ্যাসিবাদী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়  সংঘটিত যাবতীয় হত্যাযজ্ঞে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। এটি হবে শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান এবং জাতীয় ঐক্যের এক উজ্জ্বল মাইলফলক। 

সেই সাথে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জনগণের জানমাল লুন্ঠনে জড়িত চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদেরকেও অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যা রাষ্ট্র ও জনগণের আমানতের সুরক্ষায় আগামীতে এক ঐতিহাসিক সতর্কবার্তা হিসেবে কাজে আসবে। 

চতুর্থ দাবি: গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা-
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি মনে করে—ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও  জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের মাধ্যমেই আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা জরুরি ৷ এ লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার কোনই বিকল্প নেই। এজন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল দলের জন্য সমান সুযোগ- সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষতার সাথে  স্বক্রিয় রাখতে হবে।

পঞ্চম দাবি: দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
 
এসময় দাবিসমূহ আদায়ে পার্টির পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-
১৮ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় বিক্ষোভ।
১৯ সেপ্টেম্বর, বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ।
২৬ সেপ্টেম্বর, দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ।

এমএইচ/