ন্যায়ের শিরায় আজ বিষধারা প্রবাহিত
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:২২ সকাল
নিউজ ডেস্ক

আম্মার হোসাইন
দুর্নীতি আজ জাতির দেহে প্রবিষ্ট এক গভীর বিষরস। এর শিকড় সমাজের প্রতিটি স্তরে এমনভাবে প্রোথিত যে, সততা এখন পরিণত হয়েছে নির্বাসিত এক মহত্ত্বে। আমরা প্রতিদিন উচ্চারণ করি স্বচ্ছতার শপথ, জবাবদিহির আহ্বান, ন্যায়ের মন্ত্র— অথচ বাস্তবতার আয়নায় প্রতিফলিত হয় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র। ক্ষমতার আসনে বসে যারা নীতির ভাষণ দেন, তারাই প্রায়শ প্রথম ভঙ্গ করেন সেই নীতির শপথ।

রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো যেন আজ অদৃশ্য এক দখলে বন্দী। মেধা ও পরিশ্রমের মূল্য কমে গেছে; ঘুষ ও তদবিরের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভাষা। মানুষ ন্যায় চাইতে গিয়ে অন্যায়ের দরজায় নতজানু হয়। যেন এক অদ্ভুত সভ্যতা—যেখানে নীতিহীনতা নিয়মে পরিণত, আর নীতিবান হওয়া অপরাধের সমার্থক।

বিভিন্ন হৃদয়বিদারক ঘটনায় অন্তরের গহীনে জমে থাকা বেদনা যেন আবারও জেগে ওঠে। প্রশ্ন জাগে—কেমন দেশে আমি জন্মেছি! এ কেমন জনপদ, যেখানে মানুষের প্রাণ কেবল সংবাদপত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করে? পথের ধারে, রাস্তাঘাটে একের পর এক প্রাণ নিভে যাচ্ছে নিঃশব্দে; মৃত্যু যেন আমাদের প্রতিদিনের সহচর হয়ে উঠেছে। নেই জীবনের নিরাপত্তা, নেই সম্পদের নিশ্চয়তা। মানুষ সকালে বের হয় আশায়, সন্ধ্যায় ফিরে আসে সংবাদে। মৃত্যু যে অবধারিত, তা আমরা জানি; কিন্তু রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থার বলি হয়ে কেন মরতে হবে নিরীহ জনতাকে? প্রশাসনের প্রতিটি ভুল, প্রতিটি উদাসীনতা যেন নতুন এক কবর খুঁড়ে দেয় সাধারণ মানুষের জন্য।

তবু প্রশ্ন রয়ে যায়—এই অন্ধকার কতদিন? মানবতার শিরায় যে সামান্য সততার রক্ত এখনো প্রবহমান, সেটিই আমাদের আশার প্রদীপ। হয়তো একদিন নতুন প্রজন্ম এই বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলবে। যখন কলম বিক্রি হবে না, বিবেক নত হবে না, আর সত্যের কণ্ঠ রুদ্ধ হবে না—সেই দিনই হবে দুর্নীতির পতনের সূর্যোদয়।

দুর্নীতি কেবল প্রশাসনিক ব্যাধি নয়, এটি এক গভীর মানসিক অবক্ষয়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—প্রত্যেক অবক্ষয়েরই একদিন প্রলয় ঘটে। মানুষ যদি নিজ বিবেককে জাগিয়ে তোলে, তবে দুর্নীতির দুর্গও একদিন ধসে পড়বে, যেমন ভোরের আলো ভেদ করে রাত্রির আঁধার।
এই জাতির প্রভাত কবে আলোকিত হবে সেই মানবিকতায়—যেখানে জীবনের মূল্য আরেক জীবনের সমান হয়ে উঠবে? হয়তো তখনই এই মাটিই সত্যিকার অর্থে জন্মভূমি বলে পরিচিত হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়

এনএইচ/