হাটহাজারী মাদরাসার গেইটে দৈনিক ১০ হাজার ‘খিলি পান’ বিক্রি হয়!
প্রকাশ:
২২ নভেম্বর, ২০২৩, ০৮:২৮ রাত
নিউজ ডেস্ক |
![]()
|| মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী || অনেক সময় লেখার ভাব উদয় হয় এবং স্বপ্ন-উদ্যানে লেখার পুষ্পকলি ফুটতে থাকে। যখন লেখার ভাব আসে তখন লেখতে মন চায়। লেখাও আসে, কলম দ্রুত গতিতে চলে। লেখার ভাব চলে গেলে মনের ভেতরে সেই ভাব আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কখনও ভাব আসে চাঁদের জোছনা দেখে, সূর্যের কিরণ, সাগরের ঢেউ দেখে, বাগানের ফুল-ফল দেখে, কখনও যাত্রাপথে কোনো দৃশ্য দেখে আবার কখনও অন্যের লেখা দেখে। আজ সকালে বাসা থেকে এসে জামিয়ার গেইটে ছাত্রদের লাইন ধরে পান ক্রয় করা এবং খাওয়ার দৃশ্য দেখে আমার এ লেখার ভাব উদয় হয়েছে। পান পাতাকেও পান বলা হয় আবার পান-চুন-সুপারি-জর্দা ও বিভিন্ন ধরনের মসলার সমষ্টিকেও পান অথবা পানের খিলি বলা হয়। পানের আরবি ‘তাম্বূল’। এই শব্দটি কুরআনের কোনো আয়াতে, রাসূলের কোনো হাদীসে আমার চোখে পড়েনি। দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার'সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পান খাওয়ার প্রচলন নেই বললেই চলে।এসব দেশে পান খাওয়া, পান বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কারো কাছে পান পাওয়া গেলে অনেক দেশে জেল-জরিমানার আইনও রয়েছে। পাক-ভারত-বাংলাদেশ-সহ এই ভূখন্ডে অতি মাত্রায় পান খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। ছোট কালের একটি উর্দূ স্লোগানের কথা মনে পড়ে– এই স্লোগান কাদের? কারাই বা এই স্লোগান উচ্চারণ করেছেন আমার জানা নেই। এখনও অনেকেই ধারণা করে বসে আছেন—পান খাওয়া সুন্নাত। এরই ভিত্তিতে তারা জোর গলায় বলে থাকেন—‘পান,ওলামা কা শান’। মূলত শুধু পান-পাতায় ক্ষতি নেই, বরং কোনো কোনো চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলে থাকেন— পান পাতা মানুষের হজমী শক্তি বৃদ্ধি করে। তবে পান, সুপারি, চুনা ইত্যাদি দ্বারা যে পানের খিলি তৈরী হয়, তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। জর্দায় তো ক্ষতি আর ক্ষতি। শরীয়তের দৃষ্টিতে জর্দা খাওয়ার বৈধতা কোনো অবস্থায় দেওয়া যায় না। খালি পেটেও জর্দাসহ অনেককেই পান চিবোতে দেখা যায়। রমযান মাসে পান দিয়ে ইফতার করেন, বাথরুমে বসে পান চিবান এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। পান না থাকার কারণে প্রায় সকল উলামায়ে কিরামের মুখমন্ডলে ছিল বিষন্নতা, সব কিছু আছে তার পরেও কী যেন একটা নেই। এমন অবস্থার পরিপেক্ষিতে শায়েখ বিষয়টি অনুভব করলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন ‘মৌ-মুশকিল?’—সেখানকার প্রচলিত ভাষা। অর্থাৎ শায়েখ জানতে চেয়েছেন কী সমস্যা? উত্তরে দু’একজন বল্লেন পান—পান। তখন শায়েখ বললেন– عفواً ما عندی فان ‘আফওয়ান মা ই’নদি ফান’। অর্থাৎ, মাফ করবেন আমার কাছে ফান নেই। আল্লামা সুলতান য্বাওক নদভী হাফি.সাথে সাথে বলে উঠলেন— ان لم یکن عندک الفان فعلیک ألفان ‘‘ইন লাম ইয়াকুন ইন’দাকাল ফান ফাআ’লাইকা আলফান’’ আল্লামা সুলতান য্বাওক নদভীর সাহিত্যমাখা বাক্য শুনে শায়েখ খুবই খুশি হলেন এবং ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে দেরহামের একটি নতুন বান্ডিল এনে পাঁচশো দেরহামের স্থলে প্রত্যেককে দু’হাজার দেরহাম করে বিতরণ করলেন। কেউ হয়তো মন্তব্য করবেন, এটিই তো পানের কারণে শায়খের অনুভূতি। না ভাই, পানের কারণে শায়েখের অনুভূতি নয়, য্বাওক সাহেব হুযুরের আরবী সাহিত্যের কেরামতি। গত কিছুদিন পূর্বে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একটি মাহফিলে জৈনক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেসা করা হয়েছিল—আজকে কয় খিলি খাওয়া হয়েছে?? অনেকের অবস্থা এমন যে, দুপুরে খাবার না খেয়ে পান খেলেই চলে। এতেই তার দেহ স্বতেজ এবং হৃদয়ে যেন স্বজীবতা পায়। ১৯৮৪ সনের কথা—আমার এলাকা মীরসরাই এ প্রখ্যাত মুফাস্সিরে কুরআন আল্লামা হাবীবুল্লাহ মিসবাহ রাহ. এক তাফসীরুল কুরআন মাহফিলে হাতে গুনে-গুনে পান খাওয়ার আটটি ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেছিলেন। অতিরিক্ত পান-খুরির কারণে অনেক সময় মুখে এমন অসহ্য দুর্গন্ধ তৈরী হয় যা অপরের কষ্টের কারণ হয়। সুতরাং স্বাস্থ্যের ক্ষতি এবং পরিবেশ নষ্টের দিক বিবেচনা করে অতিরিক্ত পান খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা থেকে বিরত থাকা জরুরি। হ্যাঁ, সকালে নাস্তার পর একটি, দুপুরে খাওয়ার পর একটি, রাতে খাওয়ার পর একটি খাওয়াতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আসুন, অতিরিক্ত পান-জর্দা খাওয়াসহ সকল বদ অভ্যাস আমরা ত্যাগ করি। বদ অভ্যাস দূরিভূত হোক, পরিবেশ সুন্দর হোক, আমাদের সকল বদ অভ্যাসের অবিসার হোক চির সুন্দরের দিকে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে। কেএল/ |