‘স্বতন্ত্রতা বজায় রেখেও কওমি সনদের স্বীকৃতি বাস্তবায়ন সম্ভব’
প্রকাশ: ১৫ মে, ২০২৫, ০৭:১০ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

দীর্ঘকাল ধরে কওমি মাদরাসাগুলো সাধারণ মানুষের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছে। কেবল ধর্মীয় জ্ঞান বিতরণই নয়, এ সকল প্রতিষ্ঠান গরিব, এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের আশ্রয়, আহার ও শিক্ষার দায়িত্বও নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। এ নিঃস্বার্থ মানবিক ও শিক্ষামূলক প্রচেষ্টা দেশের হাজার হাজার দরিদ্র মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হলেও দীর্ঘদিন তা ছিল সরকারি স্বীকৃতির বাইরে। 

২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস সনদকে ইসলামি শিক্ষা মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দেয় সরকার। স্বীকৃতি প্রদানের সাত বছর অতিক্রম করলেও এখনো এর বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই সনদ দিয়ে উচ্চশিক্ষা, চাকরি কিংবা সামাজিক মর্যাদায় কোনো বাস্তব সুবিধা পাচ্ছেন না। 

এই প্রেক্ষাপটে ‘আওয়ার ইসলাম’-এর আয়োজনে গতকাল বুধবার (১৪ মে) রাতে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান ‘সমকালীন আলাপ’। আওয়ার ইসলাম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুবের উপস্থাপনায় এতে অংশ নেন বিশিষ্ট আলেম, লেখক ও সাংবাদিক মাওলানা লিয়াকত আলী এবং মুফতি রেজাউল কারীম আবরার। 

আলোচনায় তাঁরা কওমি শিক্ষা কাঠামো, সনদের বাস্তবায়ন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। স্বতন্ত্রতা বজায় রেখেও কীভাবে কওমি স্বীকৃতি বাস্তবায়ন করা যায় সে ব্যাপারে তাঁরা আলোকপাত করেন।  

মাওলানা লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমি কওমি মাদরাসার সকল স্তরে স্বীকৃতি বাস্তবায়নের পক্ষে। তবে আমাদের স্বকীয়তা ও নিজস্ব অবস্থান রক্ষা করতে হবে নিজেদের উদ্যোগেই। সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে দায়িত্ব এড়ানো উচিত নয়।’

তিনি মনে করেন, স্বীকৃতির অর্থ এই নয় যে, কওমি ধারার স্বতন্ত্রতা বিসর্জন দিতে হবে; বরং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অবস্থান করে নিজেদের পরিচিতি ও অবদান দৃশ্যমান করতে হবে। 

অন্যদিকে মুফতি রেজাউল কারীম আবরার তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের হীনম্মন্যতার কোনো কারণ নেই। আমরা যে পথে আছি, সে পথেই থাকি। ইখলাসের সঙ্গে কাজ করলে আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন।’

তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেন এবং মনে করিয়ে দেন যে, কওমি ধারার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতা—এই দুই শক্তিই ভবিষ্যতের পথকে প্রশস্ত করতে পারে। 

কওমি মাদরাসা বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা, যা কেবল ধর্মীয় শিক্ষা নয় বরং মানবিক দায়িত্বও পালন করে চলেছে। ২০১৮ সালের সরকারি স্বীকৃতি স্বাগতযোগ্য হলেও বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতা এই ধারার শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। 

আলোচনায় উঠে এসেছে—স্বীকৃতি কার্যকর করতে হবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে, যাতে কওমি শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার পায়। পাশাপাশি স্বকীয়তা ও আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে কওমি সমাজকে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে। আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সম্মিলিত উদ্যোগই পারে কাঙ্ক্ষিত ফল নিশ্চিত করতে।

এসএকে/