ফেসবুক-ইউটিউব, গুগল বন্ধ রেখে যেভাবে প্রযুক্তির সম্রাট হয়ে যাচ্ছে চীন
প্রকাশ:
২২ মে, ২০২৫, ১১:১৬ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
ভাবুন তো একবার—একটা দেশ, যেখানে নেই Facebook, নেই Google, নেই YouTube, নেই WhatsApp। কিন্তু তারপরও তারা পিছিয়ে নেই একটুও। বরং প্রযুক্তির দুনিয়ায় তারাই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে।
চীন অনেক আগেই বুঝে গেছে, যে জাতি নিজের নাগরিকদের তথ্য অন্য দেশের কোম্পানির হাতে তুলে দেয়, তারা একদিন সবকিছু হারায়। সেই উপলব্ধি থেকেই তারা বন্ধ করে দিয়েছে Google, Facebook, YouTube, WhatsApp, Instagram এমনকি Microsoft-এর Bing সার্চ ইঞ্জিনও। তবে তারা শুধু নিষেধাজ্ঞার পথ নেয়নি, বরং নিজেরাই গড়ে তুলেছে বিকল্প প্রযুক্তি অবকাঠামো। WhatsApp-এর পরিবর্তে WeChat YouTube-এর জায়গায় Youku Google Pay-এর বদলে Alipay Facebook-এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে Renren বা অন্যান্য দেশীয় সোশ্যাল মিডিয়া এইভাবে তারা নিজেদের তথ্য নিজেদের কাছেই রাখছে। চীনা জনগণের রাজনৈতিক মত, ব্যক্তিগত আলাপচারিতা, খাদ্যাভ্যাস, দৈনন্দিন জীবনচর্চা—সবই রক্ষা পাচ্ছে বাইরের চোখ থেকে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, চীন তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়তেও নিচ্ছে সচেতন পরিকল্পনা। TikTok-এর চাইনিজ ভার্সন Douyin-এ ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য রয়েছে সময়সীমা। রাত ১০টার পর অ্যাপ বন্ধ হয়ে যায়। কনটেন্ট হিসেবে দেখানো হয় বিজ্ঞান, ইতিহাস, দেশপ্রেমমূলক বিষয়বস্তু। বিপরীতে, আমাদের দেশের শিশুরা YouTube খুললেই পায় এডাল্ট বিজ্ঞাপন, অশালীন গানের ভিডিও, ফালতু কনটেন্ট। চীনের স্কুলগুলোতে শেখানো হয় রোবটিক্স, কোডিং, গণিত ও বাস্তবমুখী প্রযুক্তি শিক্ষা। আর আমাদের তরুণরা ব্যস্ত থাকে ফিল্টার দিয়ে ছবি তোলায়, রিল বানানোয়, নাচ-গানে—তথ্যের গভীরে নয়, বরং তার পৃষ্ঠদেশে ভেসে বেড়ায়। চীন জানে, ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির হাতেই। এবং সেই প্রযুক্তি যদি কারো নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে তথ্যের মাধ্যমেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়। Google, YouTube, ChatGPT—এদের অ্যালগরিদম তৈরি হয় আমাদের পোস্ট, কমেন্ট, সার্চ হিস্ট্রি এমনকি আমাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি বিশ্লেষণ করে। আমরা নিজেরাই নিজেদের তথ্য তুলে দিচ্ছি তাদের হাতে, বিনিময়ে পাচ্ছি বিনোদন, কিন্তু হারাচ্ছি নিয়ন্ত্রণ। চীন সেই ভুল করেনি। ওরা নিজেদের ডেটা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করে। বাইরের কেউ তাদের চিন্তা-চেতনায় প্রভাব ফেলতে পারে না। তাই আজ চীন প্রযুক্তির সুপার পাওয়ার। তারা খেলছে নিজেদের তৈরি নিয়মে। আর আমরা? আমরা এখনো ডিজিটাল উপনিবেশে বাস করছি—নিজেদের ঘরে বসে বিদেশীদের হাতে তুলে দিচ্ছি সব কথা, সব তথ্য। Google জানে আপনি কখন ঘুমান। Apple জানে আপনি কার সঙ্গে কথা বলেন। Facebook জানে আপনি কাকে ভালোবাসেন। আমরাও কি চীনের মতো নিজেদের তথ্য নিজেরা রক্ষা করতে পারব? নাকি তথ্যমুক্তির নামে তথ্য-দাসত্বই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ? এনএইচ/ |