গাজায় তীব্র অপুষ্টিতে কাহিল ৭১ হাজার শিশু ও ১৭ হাজার মা
প্রকাশ: ২৫ মে, ২০২৫, ০২:৪৬ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংকট চরমে উঠেছে। নতুন করে সংঘাত বেড়ে যাওয়া, সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ থাকা এবং সব ধরনের মানবিক সহায়তায় বাধা দেওয়ার ফলে গাজাবাসী ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।

ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় সাহায্য প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। যার কারণে ক্ষুধা ও অপুষ্টি ভয়াবহভাবে বেড়েছে, এবং আগের যুদ্ধবিরতির সময় সহায়তার মাধ্যমে যে অগ্রগতি হয়েছিল, তা একেবারে স্থবির হয়ে গেছে।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের ১২ মে প্রকাশিত ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন’ (আইপিসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার অন্তত ৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ এখন চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে। গাজাবাসীর পুরো জনগোষ্ঠীই এখন মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। খবর আল-জাজিরা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭১ হাজার শিশু এবং ১৭ হাজারেরও বেশি মা বর্তমানে তীব্র অপুষ্টির শিকার। তাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন। অথচ বছরের শুরুতে এই সংখ্যা অনুমান করা হয়েছিল ৬০ হাজারে, যা ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে।

এই পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-এর নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন বলেন, গাজার পরিবারগুলো না খেয়ে আছে, অথচ তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সীমান্তে পড়ে আছে। আমরা সেই খাবার তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছি না, কারণ সহায়তার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হওয়ার পর যদি আমরা অপেক্ষা করি, তবে বহু মানুষের জন্য তা অনেক দেরি হয়ে যাবে।

আইপিসি অনুমান করছে, নতুন সামরিক অভিযানের ফলে এবং দীর্ঘ সময় ধরে চলা অবরোধের কারণে আগামী মাসগুলোতে খাদ্য সংকট আরও তীব্র হবে। মৃত্যুহারও বাড়তে পারে। গাজা, উত্তর গাজা ও রাফা গভর্নরেট এলাকায় অপুষ্টি ও মৃত্যুর হার দুর্ভিক্ষের সীমা ছুঁতে পারে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল সতর্ক করে বলেছেন, দুর্ভিক্ষ হঠাৎ আসে না। এটি তখনই দেখা দেয়, যখন মানুষের খাদ্যে প্রবেশাধিকার থাকে না, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং শিশুরা মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত হয়। তিনি আবারও সব পক্ষকে এই বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

গাজায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সীমান্ত বন্ধ থাকায়, খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে, যা বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। অথচ, ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি খাদ্য সহায়তা- যা ১০ লাখ মানুষকে চার মাস খাবার দিতে যথেষ্ট- সীমান্তে পড়ে আছে। একইসঙ্গে শত শত প্যালেটভর্তি পুষ্টিকর ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী আটকে আছে। প্যালেটভর্তি পুষ্টিকর ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী

এমন পরিস্থিতিতে ডব্লিউএফপি এবং ইউনিসেফ জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছাতে প্রস্তুত, কিন্তু সহায়তার করিডোরগুলো বন্ধ থাকায় তারা অচল হয়ে পড়েছে। গত ২৫ এপ্রিল ডব্লিউএফপি তাদের সর্বশেষ খাবার মজুত শেষ করেছে।

এক মাস আগে তাদের সব বেকারি বন্ধ হয়ে যায়, কারণ গমের আটা ও জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। ইউনিসেফ এখনো পানি ও পুষ্টি সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছে, তবে থেরাপিউটিক খাদ্যের মজুতও প্রায় শেষ।

এই অবস্থায় ইউনিসেফ ও ডব্লিউএফপি আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে, যেন বেসামরিক নাগরিকদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং অবিলম্বে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

এসএকে/