মুহাররম মাসের মর্যাদা ও ফযীলত
প্রকাশ:
২৭ জুন, ২০২৫, ১০:২৮ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
|| ক্বারী মাওলানা হারুনুর রশীদ চতুলী ||
হিজরী বর্ষের সর্বপ্রথম মাস- মুহাররামুল হারাম তথা মুহাররম মাস। হাদীসের ভাষায়- শাহরুল্লাহ আলমুহাররাম। আল্লাহ তাআলা বছরের যে ক’টি মাসকে বিশেষ মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছেন মুহাররম তার অন্যতম। কুরআন মাজীদে আল্লাহ বলেন-
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ
আল্লাহ তা'আলা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই বারো মাসে বছর নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তন্মধ্যে চারটি (মাস) সম্মানিত।
আর এটাই সঠিক দ্বীন। (সূরা তাওবা)
এই মাস সমূহের মধ্যে প্রথম মাস হল মুহাররম মাস। মুহাররম মাসের সাথে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িত আছে। এই মাসে রয়েছে কিছু সুন্নাত ইবাদত। আবার এই মাসকে কেন্দ্র করে সমাজে কিছু কুসংস্কার ও সুন্নাহ বিরোধী আমল প্রচলিত আছে। আলোচ্য প্রবন্ধে এ বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
মুহাররম মাসের ফযীলত : ইসলামী শরী'আতের আলোকে মুহাররম মাসের অনেক ফযীলত রয়েছে।
১. এটা হারাম মাস : মহিমান্বিত ও সম্মানিত। আবূ বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেন,
الزَّمانُ قَدِ اسْتَدارَ كَهَيْئَتِهِ يَومَ خَلَقَ اللهُ السَّمَواتِ والأرْضَ، السَّنَةُ اثْنا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْها أرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاثَةٌ مُتَوالِياتٌ: ذُو القَعْدَةِ وذُو الحِجَّةِ والمُحَرَّمُ، ورَجَبُ مُضَرَ، الذي بيْنَ جُمادى وشَعْبانَ-
আল্লাহ যেদিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন হতে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। যুল-কা‘দাহ, যুল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। তিনটি মাস পরস্পর রয়েছে। আর একটি মাস হ’ল রজব-ই-মুযার,যা জুমাদা ও শা'বান মাসের মাঝে অবস্থিত।
২. এই মাসের সিয়াম রামাযানের পরে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ : আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
أفضَلُ الصِّيامِ بعدَ شَهرِ رمَضانَ شهرُ اللهِ المُحرَّمُ، وإنَّ أفضَلَ الصَّلاةِ بعد المفروضةِ صلاةٌ مِن اللَّيْلِ
রামাযান মাসের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের সিয়াম হচ্ছে সর্বোত্তম এবং ফরয সালাতের পর রাতের সালাতই সর্বোত্তম।
৩. এই মাস আল্লাহর মাস : বছরের সব মাস আল্লাহর হলেও মুহাররমকে আল্লাহ নিজের মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আশূরা কী?
আরবী ‘আশারা (عشر) শব্দ থেকে এসেছে আশূরা (عاشوراء)। আশারা অর্থ দশ আর আশূরা অর্থ দশম, মাসের দশম দিন। হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররমের দশ তারিখকে আশূরা বা আশূরায়ে মুহাররম বলা হয়।
আশূরার করণীয় :
আশূরাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে বিভিন্ন আমলের প্রচলন দেখা যায়। যার সবগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের আলোকে আশূরায় করণীয় হ’ল-
১. হারাম মাস হিসাবে এ মাসকে সম্মান করা : মুহাররম মাস বছরের চারটি হারাম মাসের অন্যতম। অন্যান্য হারাম মাসের ন্যায় এ মাসে বিভিন্ন নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থেকে এ মাসকে সম্মান করতে হবে।
২. সিয়াম পালন করা : এ মাসের অন্যতম কাজ হ’ল এ মাসের দশ তারিখে সিয়াম পালন করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কাতে অবস্থান কালে এ সিয়াম পালন করতেন। মক্কার কুরায়শরাও এই দিনকে সম্মান করত ও সিয়াম পালন করত। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَصُومُهُ قُرَيْشٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُهُ فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ صَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تَرَكَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَمَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ-
জাহেলী যুগে কুরায়শরা আশূরার সিয়াম পালন করত এবং আল্লাহর রাসূল (সা.)ও এ সিয়াম পালন করতেন। যখন তিনি মদীনায় আগমন করেন তখনও এ সিয়াম পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রামাযানের সিয়াম ফরয করা হল তখন আশূরার সিয়াম ছেড়ে দেয়া হল। যার ইচ্ছা সে পালন করবে, আর যার ইচ্ছা পালন করবে না।
মদীনায় হিজরতের পর তিনি এ সিয়াম পালন করতেন ও ছাহাবায়ে কেরামকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ فَرَأَى الْيَهُودَ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ مَا هَذَا قَالُوا هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوسَى قَالَ فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ-
নবী করীম (সা.) মদীনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইহুদীরা আশূরার দিনে সিয়াম পালন করে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার?
তোমরা এ দিনে সিয়াম পালন কর কেন? তারা বলল, এটি অতি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ তা'আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল হতে নাজাত দান করেছেন। ফলে এ দিনে মূসা (আঃ) সিয়াম পালন করতেন। রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিনে সিয়াম পালন করেন এবং লোকদেরকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন।
রামাযানের সিয়াম ফরয হওয়ার আগে রাসূলুল্লাহ (সা.) মুহাররম মাসের দশ তারিখে সিয়াম পালনে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। সাহাবীগণও আশূরার সিয়াম পালনের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতেন। রুবাইয়ি' বিনতু মুআবিবয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَرْسَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم غَدَاةَ عَاشُورَاءَ إِلَى قُرَى الأَنْصَارِ مَنْ أَصْبَحَ مُفْطِرًا فَلْيُتِمَّ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ وَمَنْ أَصْبَحَ صَائِمًا فَليَصُمْ
আশূরার সকালে আল্লাহর রাসূল (সা.) আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকী অংশ না খেয়ে থাকে। আর যার সিয়াম অবস্থায় সকাল যাপন করেছে তারা যেন রোজা পূর্ণ করে।
লেখক:সহকারী মহাসচিব জমিয়তে উলামা বাংলাদেশ
এমএম/
|