ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয়: তীব্র নিন্দা ধর্মীয় নেতাদের
প্রকাশ: ০৩ জুলাই, ২০২৫, ০৮:২৬ রাত
নিউজ ডেস্ক

|| শাব্বির আহমাদ খান ||

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া। দেশের বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা একে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সামাজিক রীতিনীতির প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু হটকারিতা নয়, বরং এর মাধ্যমে সমকামিতা, অবাধ যৌনাচার এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা এদেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। তারা সরকারকে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন, নচেৎ জনরোষের মুখে কঠোর প্রতিবাদের হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, বিগত সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দেশের প্রচলিত আইনেই সম্ভব—এর জন্য প্রয়োজন কেবল প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সদিচ্ছা। এ প্রেক্ষাপটে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য একটি ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত।

তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষার নামে সমকামিতা ও অবাধ যৌনাচারকে উৎসাহ দেওয়া, মুসলিম পারিবারিক আইনবিরোধী অবস্থান নেওয়া কিংবা পার্বত্য অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশ্রয় দেওয়ার মতো অপতৎপরতা দেশপ্রেমিক জনগণ কখনো মেনে নেবে না। তদুপরি, জাতিসংঘের নতুন আবাসিক প্রতিনিধি হিসেবে এক সমকামী ব্যক্তির নিয়োগ বাংলাদেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য স্পষ্ট হুমকি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্তকে 'হটকারিতা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত দেশের আপামর ধর্মপ্রাণ জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। দেশের সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে এটি সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব দ্রুত এই ভুল সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে এবং দেশের মানুষের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। সাধারণ মানুষ, আলেম-ওলামা—সবারই ভাষা বোঝার চেষ্টা করা উচিত সরকারের। মানুষ এই ধরনের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নয়।”

জাতিসংঘ কর্তৃক একজন সমকামী দূত নিয়োগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এ ধরনের তামাশা এ দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ কখনোই গ্রহণ করবে না। এটি আমাদের পারিবারিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি স্পষ্ট অবমাননা। জাতিসংঘকে বুঝতে হবে, তারা কোথায়, কাদের কাছে প্রতিনিধিত্ব করছে।”

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি সরকার সময় থাকতে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে, যদি ধর্মপ্রাণ জনগণের ভাষা না বোঝে, তাহলে আমরা কঠোর প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হব। আমরা নীরব দর্শক হয়ে থাকব না।”

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের সাবেক সভাপতি, লেখক ও একটিভিস্ট রুহুল আমীন সাদী (সাইমুম সাদী) জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্তকে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং ধর্মপ্রাণ জনগণের জন্য হুমকি বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে জাতিসংঘের এই কার্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ আমাদের সামাজিক রীতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। বিশ্বের যেখানে-যেখানে এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে, সেখানে জনগণের ওপর এক ধরনের পরাধীনতার চাদর নেমে এসেছে।”

তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের নামে এসব ফাজলামি বাংলাদেশের মানুষ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আমরা শুনেছি, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যিনি নিয়োগ পেয়েছেন, তিনি কেবল একা নন—তার পার্টনারকেও সঙ্গে নিয়ে আসছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং জাতির জন্য অশনি সঙ্কেত। এই দেশের মানুষ যেমনই হোক, কেউই চায় না তার সন্তান, ভাই, বা বোন সমকামী হোক। এই সিদ্ধান্ত আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সরাসরি হুমকি।”

তিনি আরও মন্তব্য করেন, “সরকারের যারা পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন, তারা এদেশের সাধারণ আপামর জনগণের দাবিতে চেয়ারে বসেননি । তারা সময় শেষে নিরাপদে বিদেশে চলে যাবে, কিন্তু এই সমাজ ও দেশের ক্ষতি যারা করবে, তাদের দায়ভারও জনগণকেই বইতে হবে। তাই এই সিদ্ধান্তে তাদের কিছু যায় আসে না—কিন্তু আমাদের অনেক কিছুই আসে।”

রুলল আমীন দৃঢ়ভাবে বলেন, “সরকারকে এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। দেশের স্বার্থ, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই ভবিষ্যত পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় জনগণের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হতে সময় লাগবে না।”

এসএকে/