আরিফ আজাদের বই: এক দাওয়াতি বিপ্লব
প্রকাশ: ২৯ জুলাই, ২০২৫, ১২:৫২ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

বর্তমান সময়ে তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ ধীরে ধীরে দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয়, ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, নেশার নীল জগৎ এবং আধুনিক জীবনের মোহ তরুণদের মনে দ্বীনের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে।ু জীবনের মূল উদ্দেশ্য ও আখিরাতের ভাবনা থেকে দূরে সরে গিয়ে তারা মগ্ন হয়ে পড়ছে পার্থিব আকর্ষণেই। সেই শক্ত ভিতের উপরই কুঠারাঘাত করেছেন এক হৃদয়বান সৃজনশীল তরুণ। আরিফ আজাদ নামের সেই তরুণ লেখনীর মাধ্যমে বিস্ময়করভাবে একের পর এক সংঘটিত করে চলেছেন তরুণদের দ্বীনে ফেরার বিপ্লব!

বর্তমান সময়ে ইসলামি সাহিত্য ও দাওয়াতি লেখালেখির জগতে আরিফ আজাদ এক অনন্য নাম। তাঁর লেখনীতে ইসলামের সৌন্দর্য যেমন উঠে আসে, তেমনি আধুনিক পাঠকের হৃদয়েও পৌঁছে যায় গভীর দাগ কাটার মতো করে। "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" বই দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা এখন এক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।

আরিফ আজাদের বইয়ের দর্শন: হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া যুক্তিনির্ভরতা

আরিফ আজাদের বইয়ের মূল দর্শন হলো—ইসলামের প্রতি পাঠকের ভালোবাসা ও বিশ্বাসকে যুক্তিনির্ভর ও আবেগময় ভাষায় পুনরুজ্জীবিত করা। তিনি তরুণদের দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনতে যুক্তিবাদ, কোরআনের ভাষ্য এবং মানবিক অনুভূতিকে মিলিয়ে গল্প বলেন। ইসলামের শাশ্বত সত্যকে তিনি এমনভাবে উপস্থাপন করেন, যাতে পাঠক মনে করেন—এই প্রশ্নগুলো তো তাঁরও ছিল, আর উত্তরগুলো যেন তারই জন্য।

তরুণদের ভালো লাগার কারণ

সহজ ভাষা ও গল্প বলার শৈলী: তিনি কঠিন বিষয়গুলো সহজ ও আকর্ষণীয় ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা বিশেষ করে তরুণদের মন ছুঁয়ে যায়।

আধুনিক চ্যালেঞ্জের উত্তর: বিজ্ঞান, দর্শন ও জীবনের জটিল প্রশ্নের জবাব বইতে পাওয়া যায়, যা চিন্তাশীল তরুণদের আকৃষ্ট করে।

দাওয়াতি আবেগ: বইগুলো কেবল তথ্য দেয় না, বরং অন্তর ছুঁয়ে দেয়—আত্মায় একটা নাড়া দিয়ে যায়।

আরিফ আজাদের বই আসলেই এক দাওয়াতি বিপ্লব

আরিফ আজাদের “সাজিদ” সিরিজ, “আরজ আলী সমীপে” কিংবা “বেলা ফুরাবার আগে” — প্রতিটি বই তরুণদের মাঝে এক অভূতপূর্ব দাওয়াতি জাগরণ তৈরি করেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন—ইসলামি বই মানেই পুরাতন ঢঙের ভাষা নয়, বরং চিত্তাকর্ষক কাঠামোতেও ইসলামের বাণী তুলে ধরা যায়।

বিশেষ করে যারা যুক্তিবাদ, সংশয় কিংবা অবিশ্বাসের পথে ছিল, তারা তার লেখার মাধ্যমে দ্বীনের প্রতি আগ্রহী হয়েছে। তরুণরা তার বই পড়ে দ্বীনের যুক্তিসম্মত ও হৃদয়গ্রাহী দিকগুলো আবিষ্কার করে দ্বীনের পথে ফিরে আসছে। অনেকেই বলে—“আরিফ আজাদের বই ছিল আমার ফেরার টার্নিং পয়েন্ট।”  অর্থাৎ, আরিফ আজাদের লেখনী তরুণদের দ্বীনের পথে ফেরার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।

মূলধারার বইয়ের সাথে ইসলামি বইয়ের চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের বইবাজারে এখনো ইসলামি বইকে 'মূলধারা'র বাইরে ভাবা হয়। যেখানে প্রেম, রহস্য বা রাজনৈতিক থ্রিলারে পাঠক ঢল নামে, সেখানে ইসলামি বইগুলো ‘আলাদা’ পাঠক শ্রেণির জন্য ধরে নেওয়া হয়। এই মানসিকতা ভাঙতে গিয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন আরিফ আজাদ। তাঁর বইগুলো ইসলামি ঘরানার হলেও পাঠকের কৌতূহল, মনন আর হৃদয়জুড়ে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে—এটাই তাঁর এবং ইসলামি সাহিত্যেরও সবচেয়ে বড় অর্জন।

আরিফ আজাদের বইগুলো শুধু সাহিত্য নয়, বরং একটি আন্দোলনের অংশ। যেখানে বিশ্বাস, যুক্তি ও আবেগ—তিনটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে তরুণদের অন্তরে ইসলামের সৌন্দর্য পৌঁছে দেওয়া হয়। মূলধারার বাজারে ইসলামি বইও যে জায়গা করে নিতে পারে, সেই পথপ্রদর্শক হিসেবে আরিফ আজাদ এখন এক উজ্জ্বল নাম।

 এনএইচ/