বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী মাওলানা মতিউর রহমান রহ.
প্রকাশ:
০১ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:৪০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
মুফতি রেজাউল হক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ
“প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। [সূরা আলে ইমরান: ১৮৫] মৃত্যু মানব জীবনের অনিবার্য পরিণতি, চূড়ান্ত বাস্তবতা। তা সত্ত্বেও প্রিয়জনের বিদায় বেদনাদায়ক, হৃদয়বিদারক। এমনি এক গভীর শোকের মুহূর্তে আমরা আজ স্মরণ করছি আমাদের প্রিয় সহকর্মী, শ্রদ্ধেয় আলেমে দীন মাওলানা মতিউর রহমান (রহ.)-কে।
‘সেনপাড়া হুজুর’ নামে ছাত্র-শিক্ষক, এলাকাবাসী ও মুসুল্লিদের কাছে সুপরিচিত এই গুণী আলেম ২৯ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, মাগরিবের সময় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন, তাঁর বহুমুখী দ্বীনি খেদমত কবুল করেন এবং পরিবার-পরিজনকে ধৈর্যের সৌন্দর্যময় তৌফিক দান করেন। আমীন।
মাওলানা মতিউর রহমান (রহ.) ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালে জামিয়া ইসলামিয়া, ময়মনসিংহ থেকে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন। তিনি ছিলেন ঢাকার মিরপুর সেনপাড়ায় অবস্থিত বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব, দারুল উলূম ঢাকা-১৩ এর প্রবীণ শিক্ষক এবং একাধিক মাদরাসার পরিচালক ও পৃষ্ঠপোষক।
২০০৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় আমরা তাঁকে সহকর্মী হিসেবে কাছে পেয়েছি। তাঁর সৌজন্য, সহানুভূতি, পরামর্শ ও সহমর্মিতার ঋণ কখনো শোধ করা যাবে না।
মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহ. লেখেন, আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা তার প্রিয় বান্দাদের দুই পদ্ধতিতে ইসলাহ বা পরিশুদ্ধির মাধ্যমে তার আপন ও নৈকট্যশীল হবার সুযোগ করে দেন। এক. إصلاح بتجليات الصفات الجلالية দুই. إصلاح بتجليات الصفات الجمالية অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তার কতক বান্দাকে সুখী সমৃদ্ধ স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে তার ইবাদত বন্দেগী উপাসনা আরাধনার সুযোগ করে দিয়ে তার আপন করে নেন।
আবার কতক বান্দাকে আর্থিক অনটন, ব্যবসায়িক ক্ষতি, পারিবারিক কলহ, সামাজিক প্রত্যাশিত মর্যাদার অভাব ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা সংকট দেন। সাথে সাথে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দিয়ে সাওয়াব ও নেকী বহুগুণ বৃদ্ধি করে তার একান্ত আপন নৈকট্যশীল হবার সুযোগ করে দেন। দ্বিতীয় পদ্ধতি আল্লাহ তায়ালার অধিক প্রিয় হলেও এ পথ বড়ো কন্টকাকীর্ণ বন্ধুর দুর্বার ও ঝড় দুর্জেয়। কবি গুরুর ভাষায়- আমি বহু বাসনায় প্রাণপণে চাই, বঞ্চিত করে বাঁচালে মোরে। এ কৃপা কঠোর সঞ্চিত মোর জীবন ভ'রে।
আল্লাহ তার অশেষ মেহেরবানীতে আমাদের বন্ধু মাওলানা মতিউর রহমান রহ. দ্বিতীয় পদ্ধতিতে তার কাছের বান্দাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিলেন। তিনি ধৈর্য, সংযম, আল্লাহনির্ভরতা ও একান্ত ইখলাসের সঙ্গে জীবন কাটিয়েছেন। জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রে তিনি সফলতা ও সমৃদ্ধির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। শিক্ষা গ্রহণ করেছেন সমকালীন শীর্ষস্থানীয় উস্তাদদের সাহচর্যে।
কর্মজীবনে ছিলেন পরিপূর্ণ নিষ্কলুষ, দ্বীনি ও সামাজিক খেদমতে নিবেদিতপ্রাণ। পেয়েছেন একজন বিদূষী ও পরহেযগার জীবনসঙ্গিনী। তার সন্তানরাও আল্লাহর কালামের হাফেজ, আলেম ও মুফতী। এমন সফল ও গৌরবোজ্জ্বল জীবন ক'জনের ভাগ্যে জোটে? তিনি ছিলেন জ্ঞানগর্ভ, প্রাঞ্জল ভাষার অধিকারী এক সুবক্তা, অমায়িক আচরণে সবাইকে আপন করে নেওয়া একজন বিরল মানুষ। এলাকার সকল শ্রেণির মানুষের কাছে ছিলেন প্রিয়, শ্রদ্ধেয় ও নির্ভরতার প্রতীক। একজন আদর্শ ইমাম, আস্থা ও আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রবিন্দু।
আমার ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন একজন আপনজনের মতো, যিনি সুসময়ে পরামর্শদাতা এবং দুঃসময়ে সাহসদাতা ছিলেন। দারুল উলূম ঢাকার সাম্প্রতিক সংকটে তিনি পাশে দাঁড়িয়ে যে অকৃত্রিম সমর্থন ও শান্তনা দিয়েছেন, তা আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে যেমন সফল পার্থিব জীবন দান করেছেন, তেমনই পরকালীন জীবনকেও হর্ষোল্লাস ও নাজাতের মাধ্যমে শোভিত করুন- এই আমাদের প্রার্থনা।
আইএইচ/
|