জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু আগামীকাল
প্রকাশ: ০২ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:৩৬ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রোববার (৩ আগস্ট) সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করবে প্রসিকিউশন। একইসঙ্গে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণও হবে। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে রোববারের বিচারকাজ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

শনিবার (২ আগস্ট) প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য দুই আসামি হলেন– সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার শর্তে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে এ মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। পাশাপাশি আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়।

মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন– বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।

সেদিন আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। অপর আসামি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ গঠনের আগে ট্রাইব্যুনাল তাকে কথা বলার সুযোগ দেন। এসময় চৌধুরী মামুন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন। তিনি ট্রাইব্যুনালে বলেন, জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালীন আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই। এরপর ট্রাইব্যুনাল ৫টি অপরাধে অভিযোগ গঠন করে তিন আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ৭ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। এর মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। সেদিন অভিযোগ গঠনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের অব্যাহতির আবেদন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

মামলার আগের কার্যক্রম

গত ১ জুলাই এ মামলায় অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। সেদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৭ জুন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে পত্রিকায় এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ৭ দিনের মধ্যে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে বলে জানানো হয়।

গত ১ জুন জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে এ মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেদিন আদালতে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম। যা সব গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়।

এমএইচ/