মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১৮ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনানী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ খুলনায় হাতপাখার সংসদ সদস্য প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির জরুরি বৈঠক সার্বিক উন্নয়ন ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই: হাফিজ ফখরুল ইসলাম ফরিদপুরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর প্রচারণার গেট ও ব্যানার ভাঙচুর  জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য নভেম্বরেই গণভোট দিতে হবে: এ টি এম মাছুম জামায়াত আমিরের আসনে বিএনপির প্রার্থী হলেন যিনি খালেদা জিয়াসহ ৯ নারী পেলেন বিএনপির মনোনয়ন ২৩৭ আসনে বিএনপির ধানের শীষ পেলেন যারা নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে মামলায় মতিউর রহমান আকন্দ নিন্দা বস্ত্রহীন ঘুমানোর হুকুম কী ?

বড়দের সম্মানিত রূপ নয়, সংগ্রামী অধ্যায় দেখুন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| ওলিউল্লাহ্ মুহাম্মাদ ||

মানুষ যখন শিখরে পৌঁছে, আলোতে ভাসে, সমাজের সম্মানের শীর্ষে অবস্থান করে, তখন সবাই তাকায় তার বর্তমানের দিকে। কেউ দেখে তার বিলাসবহুল গাড়ি, কেউ মুগ্ধ হয় তার সম্মানিত আসন দেখে, কেউবা হিংসায় জ্বলতে থাকে তার চলাফেরার আভিজাত্যে। কিন্তু খুব কম মানুষই আছে, যারা সেই ব্যক্তির অতীত ঘেঁটে দেখে—কীভাবে তিনি সেই আসনে এসেছেন। আজ যাকে দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হচ্ছি, একসময় সেই তিনিই ছিলেন নিরবে কাঁদা একজন মেহনতি, পরিশ্রমী, দরিদ্র ও ত্যাগী মানুষ।

আমরা যারা ছাত্র, মাদ্রাসার নির্জন কামরায় জীবন গড়ে চলেছি, মাঝেমধ্যে যখন কোনো বড় হুজুর, কোনো সম্মানিত আলেম বা প্রভাবশালী দ্বীনদার ব্যক্তিকে দেখি—তাদের মুখমণ্ডলে জ্ঞান ও নুরের ঝলকানি, চলনে-বলনে আত্মবিশ্বাস, সমাজে সুদৃঢ় অবস্থান—তখন আমাদের মনেও স্বপ্ন জাগে। ভাবি, “আমি যদি একদিন এমন হতে পারতাম!” কিন্তু আমরা ভুলে যাই, এই ‘একদিন’-এর পেছনে রয়েছে শত শত দিন-রাতের নিরব কান্না, অভাব-অনটনের জীবন, পরীক্ষার পর পরীক্ষা, মনের ভেতরে আত্মসংঘাতের ঝড় আর আল্লাহর রাহে নিঃশব্দ আত্মোৎসর্গ।

এই মানুষগুলো হঠাৎ করে বড় হয়ে ওঠেনি। এদেরও ছিল একটি ‘ছোটকাল’।

একটি নিভৃত অধ্যায়—যেখানে ছিল কষ্টের ঘাম, রাত্রির অশ্রু, উপোসের ক্লান্তি আর হুজুরের বকুনি খাওয়ার করুণ স্মৃতি। মাদ্রাসার ছোট খাট বালিশে মাথা রেখে দিনরাত ইলমের পাহাড় বই বয়ে বেড়িয়েছে তারা। কনকনে ঠাণ্ডায় অযু করে তাহাজ্জুদ আদায় করেছে, কাঠফাটা রোদে দাঁড়িয়ে দাওয়াত দিয়েছে। তাদের বড় কালটা সুন্দর হয়েছে, কারণ ছোটকালটা তারা সঁপে দিয়েছে আল্লাহর জন্য।

কিন্তু আফসোস! আমরা এখন কেবল ফল দেখতে চাই, গাছ বপনের কষ্ট সহ্য করতে চাই না। আমরা চাই সম্মান, চাই জনশ্রুতি, চাই বাহবা; অথচ চাই না সেই ত্যাগ, সাধনা আর আত্মনিবেদনের পথটুকু মাড়াতে। বড়দের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করি, কিন্তু তাদের পরিশ্রম ও সংগ্রামের জীবনটুকু অনুকরণ করতে চাই না।

এভাবে চিন্তা করলে, আমাদের ভবিষ্যৎ হবে কল্পনার বেলুন, বাস্তবতার এক ফুঁতেই উড়ে যাবে।

আমরা যদি বড়দের বড়কাল দেখে অনুপ্রাণিত হই, তাহলে আগে তাদের ছোটকালকে অনুসরণ করতে শিখি।

তাদের আত্মশুদ্ধির সময়, খালেস নিয়তের তপস্যা, ইলমের পথে অটল সাধনা—এসবই তাদের আজকের অবস্থান গড়ে তুলেছে। শুধু বাহ্যিক সাফল্য নয়, বরং সেই আধ্যাত্মিক ভিত আমাদের গড়তে হবে।

তাই তরুণদের বলছি, তুমি যদি বড়দের মতো হতে চাও, তবে এখনই শুরু করো—তোমার ছোটকালকে সোনালী করে তোলার মাধ্যমে।

তুমি এখনই ত্যাগে অভ্যস্ত হও, পরিশ্রমকে আপন করো, নিয়তকে খাঁটি করো।

তোমার এই সময়টাই একদিন ইতিহাস হবে। তোমার কষ্টের অশ্রুগুলো একদিন মানুষ স্বরণ করবে সম্মানের চোখে। আর তখন কেউ তোমাকে দেখে বলবে না—“সে ভাগ্যবান”, বরং বলবে, “সে পরিশ্রমী ছিল, তাই আজ এত বড় হয়েছে।”

সুতরাং, বড়দের বড়কাল নয়, তাদের ছোটকাল দেখো, বুঝো, অনুকরণ করো—সফলতা তোমার দরজায় কড়া নাড়বেই ইনশাআল্লাহ।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ