শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
খেলাফত মজলিস রিয়াদ মহানগরী শাখার তরবিয়তি মজলিস দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা তালেবান সরকারের নিষিদ্ধের তালিকায় মওদুদীর বই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা পর্তুগালের যাত্রাবাড়ীতে এসি বিস্ফোরণে একই পরিবারের দগ্ধ ৪ দালাল ধরে গিয়েছিলেন ইরাকে, ময়লার ভাগাড়ে তিন টুকরায় মিলল লাশ দক্ষ কর্মীদের ভিসা ফি ১,৫০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করলেন ট্রাম্প নোয়াখালীতে অটোরিকশা উল্টে প্রাণ গেল নারীর ,আহত-৪ ইসলামী ছাত্র মজলিস সিলেট মহানগর, জেলা ও শাবিপ্রবি’র সহযোগী সদস্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের সভাপতি নাসির উদ্দিন এডভোকেট এর ইন্তেকাল

তাবলিগের ব্যাপারে চার সিদ্ধান্ত; শীর্ষ আলেমদের বৈঠক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : আজ ঢাকার জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদে তাবলিগ জামাত ও তাবলিগের আমির মাওলানা সা’দ হাফিজাহুল্লাহ-এর ব্যাপারে জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরামর্শ সভায় অংশগ্রহণ করেন দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম। বৈঠকে আলেমগণ ৪টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তেও উপনীত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বৈঠকটি শেষ হয় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, শুরুতেই বৈঠকের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে বলা হয় তাবলিগ জামাত উলামায়ে দেওবান্দের পরিশ্রমের ফসল। হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. দারুল উলুম দেওবন্দেরই সন্তান। শুরু থেকে দেওবন্দি উলামাগণ তাবলিগ জামাতের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিভাবক হিসেবে কষ্ট করেছেন। ইলিয়াস রহ. তার বয়ান, বক্তৃতা ও তার প্রণীত মূলনীতিতে বলেছেন, আলেমগণের পরামর্শেই জামাত পরিচালিত হবে।

কিন্তু তাবলিগ জামাতের বর্তমান আমির মাওলানা সা’দের কিছু বক্তৃতা ও কাজের ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দ আপত্তি জানায় এবং এ ব্যাপারে মাওলানা সা’দ-এর কাছে ব্যাখ্যা দাবি করে। কিন্তু তিনি সন্তোষজনক কোনো উত্তর দেন নি এবং নিজের বক্তৃতা প্রত্যাহারও করেন নি। ফলে দারুল উলুম দেওবন্দ তার ব্যাপারে পূর্ব ঘোষিত ফতোয়া বহাল রাখে।

সে প্রেক্ষিতে গত বছর ইজতেমার পূর্বে আল্লামা আশরাফ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমদের একটি দল তাবলিগের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল যান এবং মাওলানা সা’দ-এর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ না করার আহবান জানান। তারা উলামায়ে কেরামকে মাওলানা সা’দকে না আনার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু মাওলানা সা’দকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে আনা হয় এবং তাকে ইজতেমায় একাধিক বয়ানের সুযোগ করে দেয়া হয়।

ইজতেমা পরবর্তীতে আলেমদের একটি প্রতিনিধি দল আবারও তাবলিগি মুরব্বিদের সঙ্গে বসেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে। তাদেরকে সঙ্গে চলমান সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।

তখন সিদ্ধান্ত হয় কাকরাইলের শুরা সদস্যগণ আলেমদের বক্তব্য জানার জন্য ‘ইস্তেফতা’ (ফতোয়া চাওয়া) করবে অর্থাৎ উলামায়ে কেরামের বক্তব্য ও তার যৌক্তিকতা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাইবে। এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তা তারা মেনে নিবেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কাকরাইল ইস্তেফতা করে নি।

তাদের ইস্তেফতার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং এ ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক করতেই আজকের এ জাতীয় পরামর্শ সভার আয়োজন বলে জানান আয়োজকগণ।

গুরুত্বপূর্ণ ৪ সিদ্ধান্ত
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একজন মুহাদ্দিস নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘ আলোচনার পর উলামাগণ ৪টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তাহলো,

চিঠি পাঠানো হবে কাকরাইলে
ক. কাকরাইলকে আবারও ইস্তেফতার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়া। এ লক্ষ্যে কাকরাইলে একটি চিঠি পাঠানো হবে। চিঠি লেখা ও পাঠানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদকে।

এ ব্যাপারে  তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘শীর্ষ আলেমদের সাথে পরামর্শ করেই চিঠির খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এরপর আজ উপস্থিত উলামায়ে কেরামকে তা পাঠ করে শোনা হয় এবং তাদের অনুমোদন নেয়া হয়। ইনশাআল্লাহ! দুয়েক দিনের মধ্যেই তাই কাকরাইলে পৌঁছানো হবে।

চরমোনাই তাবলিগবিরোধী নয়; আমরা কাউকে নিরুৎসাহিতও করি না: ফজলে বারী মাসউদ

‘তাবলিগ দেওবন্দেরই একটি অঙ্গ; এরসাথে একতা পোষণ ও অংশগ্রহণকে আরো জোরালো করা আলেমদের জন্য খুবই জরুরি’

বিশ্ব তাবলিগের মুরব্বি মাওলানা সা’দ সম্পর্কে দেওবন্দের বিশেষ ফতোয়া

চিঠির বিষয় বস্তু সম্পর্কে  তিনি বলেন, ‘আমরা বলতে চেয়েছি, তাবলিগ আমাদের জান-প্রাণ ও ভালোবাসার বস্তু। আমরা চাই অতীত উলামাদের রেখে যাওয়া এ আমানত সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছুক। তাবলিগের কাজে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কতিপয় পরিচালকদের মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসব সমস্যা দূর করতে হলে আলেমগণ ও তাবলিগি মুরব্বি উভয় দলকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আদেশ নয় তাদেরকে অনুরোধ করেছি। বলেছি উম্মাহর স্বার্থেই তাদের উচিৎ উলামায়ে কেরামের পরামর্শ গ্রহণ করা।’

ফতোয়া দিবেন যারা
খ. কাকরাইল ইস্তেফতা করলে তার উত্তর প্রদান করার জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যগণ হলেন, হাটহাজারি মাদরাসার মুফতি কেফায়াতুল্লাহ, মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, মুফতি আবদুল মালেক, মুফতি এনামুল হাসান।

লেখা হবে বই, লিখবেন যারা
গ. সারা দেশের আলেম ও সাধারণ মানুষকে সতর্ক করতে একটি পুস্তক রচনা করা হবে। পুস্তক রচনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, উপরুক্ত পাঁচজন সাথে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীসহ মোট ৮ জনকে।

ঘ. কাকরাইলের মুকিম (স্থায়ী সদস্য) মাওলানা আবদুল্লাহকে কাকরাইলের যাবতীয় দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়ার অনুরোধ করা হবে। মাওলানা আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে আলেমদের অভিযোগ তিনি তাবলিগি নন এমন আলেমদের অযৌক্তিক সমালোচনা করেন।

বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন যারা
বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন, আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমি, আল্লামা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা আতাউল্লাহ বিন হাফেজ্জি, অধ্যক্ষ মিযানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মোস্তফা আজাদ, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা শিব্বির আহমদ, মাওলানা লোকমান মাযহারী, মাওলানা মুহাম্মদ সালমান, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, কাকরাইল মুরব্বি মাওলানা আবুল ফজল-এর ভাই মাওলানা আনাস, মুফতি শাহরিয়ার মাহমুদ, মুফতি আকরাম হুসাইন, মাওলানা শামসুল হক প্রমুখ।

এছাড়াও সারা দেশের শীর্ষ মাদরাসার একাধিক প্রতিনিধিগণ এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।

যা বললেন তারা
বৈঠকে আলেমগণ বলেন, ‘দারুল উলুম দেওবন্দ আমাদের সূতিকাঘর। দেওবন্দ উপমহাদেশের ইসলাম ও মুসলমানের নিরাপদ আশ্রয়। দেওবন্দের বক্তব্যই আমাদের বক্তব্য। দেওবন্দ যদি তার ব্যাপারে কোনো আপত্তি না করে আমাদেরও আপত্তি থাকবে না।’

তাবলিগ জামাতকে বিভক্তি থেকে রক্ষা করুন

তারা বলেন, তাবলিগ আমাদের কষ্টের ফসল। তাবলিগের  ব্যাপারে আমাদের ক্ষেদ নেই। আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। তাবলিগের প্রতি আমাদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসার কোনো অভাব নেই। আমরা চাই তাবলিগ জামাত এমনভাবে পরিচালিত হোক যেনো যুগ যুগ ধরে মানুষ আস্থার সাথে এ মহান দীনি খেদমতের যুক্ত থাকতে পারে। যেহেতু বহু সংখ্যক সাধারণ মানুষ তাবলিগের সাথে যুক্ত তাই আলেমদের দায়িত্ব এ জামাতের কাজের প্রতি লক্ষ্য রাখা। খবরদারি নয়; আলেমগণ অভিভাবক হিসেবে এর সংশোধ চান।

আল্লামা আশরাফ আলী বলেন, ‘উলামায়ে কেরামের অভিভাবকত্ব ছাড়া ইসলামের কোনো সহিভাবে চলতে পারে না। সুতরাং উলামায়ে কেরামকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।’

মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, আমরা তাবলিগের কাজ যেনো সঠিক পথে পরিচালিত হয় সে চেষ্টাই করছি। আমরা চাই সঠিক পথে তাবলিগের কাজ পরিচালিত হোক এবং তা আরও জোরদার হোক।’

মাওলানা আতাউল্লাহ বিন হাফেজ্জি বলেন, ‘বাংলাদেশে হজরত হাফেজ্জি হুজুর রহ. ও মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. তাবলিগের কাজ নিয়ে আসেন। তারাই মাওলানা আবদুল আজিজ রহ.কে আমির বানিয়ে কাজের সূচনা করেন। এ কাজ আমাদের। আমরা চাই দীনের এ কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত হোক।’


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ