রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
পিআর সিস্টেমের নির্বাচন নিরাপদ নির্বাচন, আদর্শের নির্বাচন: শায়খে চরমোনাই মসজিদ নিয়ে দ্বন্দ্ব, সড়কে জুমা আদায় হেফাজতের চার রাহবার সিরাতে মুস্তাকিমের পথ প্রদর্শক ছিলেন: হেফাজত আমির শ্রীমঙ্গলে খেলাফত মজলিসের সিরাতুন্নবী (সা.) সম্মেলন ‘পেশীশক্তি ও কালো টাকার দৌরাত্ম বন্ধে পিআর পদ্ধতির বিকল্প নেই’ ডাকসু-জাকসুর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনেও পড়বে, আশা জামায়াত আমিরের জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক  শিক্ষার্থীদের সততার চর্চা করতে হবে: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ অদৃশ্য শক্তি ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিচ্ছে: তারেক রহমান সংবিধান সংশোধন ছাড়া নির্বাচন হলে সেটি প্রহসনের হবে : বুলবুল

আল্লাহু আকবার বলে জান্নাতের পথে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কাওসার আইয়ুব ৩৮ সাল। আমরা রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। মাসলামা বিন আব্দুল মালিক সেনা প্রধান। আমরা অনেক যুদ্ধ মাসলামার নেতৃত্বে করেছি। বিজয়ও হয়েছি। এ যুদ্ধে আমরা বসরা এবং জাজিরাতুল আরব এর মুজাহিদরা একসাথে লড়ব।

নিজেদের ঘরওয়া কাজ রান্নাবান্না এবং পাহারাদারি নিজেরাই করতাম। সাঈদ ইবনুল হারিস নামে এক যুবক ছিল। মধ্যমা গরনের আকৃতি। শান্ত মেজাজের। বেশ নেক আমল প্রিয়ো। দিনে রোজা রাখে রাতে যুদ্ধ করে।

এক সিজদায় রাত পার করে দেয়। শেষরাতে তাহাজ্জুদের জায়নামাযে বসে মন ভরে কান্না-কাটি ছিলো তার রীতিমতো অভ্যাস। কুরআন তেলাওয়াত, জিকির, এসব তার চব্বিশ ঘন্টাই আমল।

যেদিন সাথিদের রান্নাবান্না এবং পাহারাদারির দায়িত্ব তার একসাথে আসতো আমরা তাকে কাজ থেকে মুক্তি দিতাম। কিন্তু সে জোর করে নিজের দায়িত্ব সাচ্ছন্দে পালন করে। সে রিতিমত সকল কাজ পালন করে ইবাদাতও চালিয়ে যায়। কোন অজুহাতে তার ইবাদতে ঘাটতি হয় না।

যুদ্ধরত দিন রাত তার এমনই কাটছিলো। যুদ্ধের এক পরযায়ে আমরা রোমানদের দুর্গ অবরোধ করি। সে দিন সাঈদের সাথে আমিও একজন পাহারাদার। দুর্গ অবরোধ করে রাখতে বেশ ব্যগপুহাতে হচ্ছে আমাদের।

সারারাত সজাগ থেকে পাহারাদারি, দিনে যুদ্ধের সরান্জাম প্রস্তুত আবার সেনাদের সব বিষয় লক্ষ রাখা, বেশ পরিশ্রম ও ক্লান্ত সময় কাটছে আমার। কিন্তু পরিশ্রমী সাঈদ দিব্বি সব কিছু নিজ গতিতে করে যাচ্ছে। জেগে থেকে পাহারাদারি, তেলাওয়াত, জিকির, নামাজ, কান্নআকাটি সবকিছুই ঠিক ছিলো ওর।

সকাল হয়েছে। আমি সাঈদকে ডেকে বললাম, সাঈদ! তুমি নিজের শরিরের দিকে একটু তাকাও। এমনিতেই ঝির্ণশির্ণ হয়ে পরছো। এতো পরিশ্রম তোমার জন্য উচিত না। নিজের উপর একটু রহম করো। নিজেকে এত বেশি কষ্ট দিও না।

আমি তাকে রাসূলের একটি হাদিসও শুনালাম। বললাম, নবিজীতো বলেছেন প্রত্যেকে নিজ সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করো। উত্তরে সাঈদ বললো, হে আমার সংরামি ভাই! এ হাদিস তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা আখেরাতের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। যাদের জীবনে দীর্ঘ সময় এখনো বাকি আছে। আমিতো মৃত্যুর কাছাকাছি চলে এসেছি, মৃত্যু আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আমি কি আমার রবের সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য সব চেষ্টা চালিয়ে যাবো না!

সাঈদের কথা শুনে আমার চোখের কোনায় বিন্দু বিন্দু অশ্রু জমেছে। আমি তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। আল্লাহ যেন তাকে সাহায্য করেন এবং দ্বীনের উপর টিকিয়ে রাখেন।

তাকে বললাম তুমি তো সারারাত জেগে ছিলে এখন সকাল সকাল কিছুটা ঘুমিয়ে নাও। সামান্য বিশ্রাম করো। খানিক পরে যুদ্ধ শুরু হবে তখন বিশ্রামের সুযোগ পাবেন না। আজকের যুদ্ধ অনেকটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।
কথা শুনে সাঈদ তাবুর এক পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

শান্ত প্রকৃতি। সূর্যের আলোয় এখনো তেজ আসেনি। মুজাহিদরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ময়দানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের অস্ত্রগুলোকে হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিচ্ছি। তখন কারো গুঙ্গানো আওয়াজ আসছে। বারবার কানে বিদ্ব হচ্ছে। আছ করলাম আওয়াজটা তাবুর ভেতর থেকে আসছে। শোনে দ্রুত ভেতরে ছুটে গেলাম।

তাবুতে সাঈদ ছাড়া আর কেউ নেই। সে তো ঘুমিয়ে আছে, তাহলে আওয়াজটা কার হতে পারে? কিছুটা দুশ্চিন্তা চেপে বসলো মাথায়। ধারণা হলো অগোচরে কেউ তাবুতে ঢুকেছে।

দেখি, একপাশে শুধু সাঈদ শুয়ে আছে। ও ঘুমের ভেতর কিছু একটা আওড়াচ্ছে আর মুচকি হাসছে। আমি চুপিচুপি তার কাছে যাই। ঘুমন্ত সাঈদের কথাগুলি শুনতে চেষ্টা করলাম। মনে হচ্ছে সে ঘুমে থেকে কারও দিকে হাত বাড়াচ্ছে। কিছু একটা ছুতে চেষ্টা করছে। খানিক পর কোমল ভাবে হাতকে গুটিয়ে নিয়েছে। হেসে হেসে বলছে তাহলে রাতে দেখা হবে...।

কথা শেষ হতেই সাঈদ জেগে উঠলো। হাস্যউজ্জল চেহারায় কিছুটা চিৎকারের মতো লাফিয়ে উঠলো। আমি তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। তার ভেতরে কিছুটা ভয় ও আনন্দ কাজ করছে। খানিক পর সে শান্ত গলায় বললো, সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, অন্তর প্রশান্তির জন্য সে এ শব্দগুলো বলতে লাগলো। আমি তাকে জিঙ্ষ করলাম সাঈদ তোমার কী হয়েছে। ঘুমের ভেতর কেমন অসাভাবিক আচরণ করছিলে। কারো সাথে মনে হয় কথা বলছিলে। কী স্বপ্ন দেখেছ তুমি?

সাঈদ বললো, ভাই! আমাকে ক্ষমা করো এ ব্যাপারটি তোমাকে বলতে পারব না। স্বপ্নটি শুনার আগ্রহ আরো কয়েক গুন বেরে গেলো আমার। আমি বললাম তোমাকে আমি বন্ধুর অধিকারের দোহাই দিচ্ছি, তুমি ঘটনাটা আমাকে খুলে বলো। হতে পারে এই ঘটনার দ্বারা আল্লাহ কোন উপকার পৌঁছাবেন।

সাঈদ বলতে শুরু করে, আমি দেখি আমার কাছে দুজন সুদর্শন লোক আসছে। এত সুন্দর মানুষ আমি কখনো দেখিনি তারা এসে আমাকে বললো, হে সাঈদ! সুসংবাদ গ্রহণ করো। সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। তোমার চেষ্টা সফল হয়েছে। তোমার আমলগুলি আল্লাহপাকের কাছে কবুল হয়েছে। তোমার আহবানে আল্লাহ সাড়া দিয়েছেন।

জীবিত অবস্থায় তোমাকে সুসংবাদ দেয়া হচ্ছে, আমাদের সাথে চলো তোমাকে দেখিয়ে নিয়ে আসি, আল্লাহ তোমার জন্য কি প্রস্তুত করে রেখেছেন। তারা আমাকে একটি ঘোড়ায় আরোহন করালো। এমন ঘোড়া আমি আর দেখিনি। ঘোড়াটি তীব্র গতিতে ছুটছে। একটি বিশাল প্রাসাদের কাছে এসে দাঁড়ালো। প্রাসাদটি বিরাট বড়। এক চোখে পোরোটা দেখা যায় না। এক প্রন্ত থেকে আরেক প্রন্ত দেখা যায় না। নিচ থেকে ছাদের উচ্ছতা দেখতে রিতিমতই গাড়ের পিছন দিয়ে টুপি পরার মতো।

দরজার কাছাকাছি যেতেই আপনাআপনি দরজাটা খুলে গেলো। আমরা ভেতরে ঢুকি। মনোরম সুন্দর করে সাজানো প্রাসাদের ভেতর। অবর্ণনিয়। পেইন্টিকএর মতো সুন্দর দেখতে। চোখে ছবির মতো আটকে থাকে। খুব সুন্দর সুন্দর তরুণ বালকেরা গানে গানে আমাদেরকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। স্বাগত জানাচ্ছে।

আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটি মনোরম ঘরে ঢুকলাম। অনেকগুলো স্বর্ণ খচিত খাট বিছানো। প্রতিটা খাটে একজন করে সুন্দরী হুর বসে আছে। দুনিয়ার কোন সুন্দরএর সাথে তুলনা করা যায় না।

সকলের মাঝে এক সুন্দর তরুণী বসা। অন্যদের থেকে তার সৌন্দর্য তারকারাজির মাঝে চাঁদের সৌন্দর্যের মতো। তার উজ্জলতা পুরো প্রাসাদকে উজ্জলতায় ভাসিয়ে রেখেছে।

তার গ্রাণে পুরো প্রাসাদ সুবাসিত হচ্ছে। আমার সঙ্গের এক জন ডেকে বলল, হে সাঈদ! এরা সকলেই তোমার পরিবার। তোমার উপর তোমার প্রতিপালক খুবই সন্তুষ্ট হয়েছে। যাও তুমি তোমার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করো।

এ কথা বলে সঙ্গি দুজন চলে গেলো। বসে থাকা সুন্দরী তরুনিরা আমাকে ধরে ঐ প্রধান সুন্দরির কাছে নিয়ে গেলো আমি তার পাশে বসি। তারা বললো সে হচ্ছে আপনার স্ত্রী। বহুকাল ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি অনেকটা সংকুচ এবং আন্দদের মাঝে আছি। আমি তাকে জিঙ্জস করলাম, আমি এখন কোথায় আছি? বললো আপনি জান্নাতুল মাওয়া অছেন।

আমি তাকে আবারো জিঙ্জেস করলাম, তুমি কে উত্তরে সে বললো, আমি তোমার চিরস্থায়ী স্ত্রী। তার একথা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। আমি তার প্রতি পরিপুর্ণ দুর্বল হয়ে পরলাম। তাকে ছুতে হাত বাড়াই।

কিন্তু সে কুমল ভাবে হাতকে ফিরিয়ে দিলো। বললো এখনো সময় হয়নি। আজ আপনাকে দুনিয়াতে ফিরে যেতে হবে। ততক্ষনে আমি তার প্রেমে ডুবেগেছি। বললাম আমি দুনিয়াতে ফিরে যেতে চাই না। সে জোর গলায় বললো না, যেতে হবে। আরো তিনদিন আপনাকে দুনিয়াতে থাকতে হবে।

তিন দিন পর আপনি আমাদের সাথে ইফতার করবেন। আমি বললাম ঠিক আছে। তাহলে সে রাতে তোমার সাথে দেখা হবে।
একথা বলে সে মজলিস থেকে উঠে গেল। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এ হলো আমার স্বপ্ন।

হে আবু ওয়ালিদ আমি যতদি জীবিত থাকব তুমি কারো কাছে এ স্বপ্নের কথা বলবেনা আমাকে কথা দাও।

সুবাহানাল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা তোমার আমলের প্রতিদান তোমাকে দুনিয়াতেই দেখিয়ে দিয়েছে। আমি তার কথা রেখে বরসা দিয়ে বললাম অবশ্যই। হে সাঈদ একথা আমি কাউকে বলবো না।

সাঈদ জিঙ্জস করল। আমাদের বাকী মুজাহিদ ভায়েরা কোথায়। আমি বললাম সকলেই যুদ্ধে গেছেন। সে ভালো করে গোসল করে শরীরে সুগন্ধি মেখে সাজে সজ্জিত হয়ে গেছে যুদ্ধ করতে লাগলো। তীব্র গতিতে ঘোড়া চালিয়ে যুদ্ধ করছে।

মুজাহিদ সাথিরা এসে তার যুদ্ধের কথা বর্ণনা করে বলছে আমরা সাঈদকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে যুদ্ধ করতে দেখেছি। আমি তাদেরকে বললাম তোমরা যদি তার অন্তরের অবস্থা জানতে তাহলে তোমরা তার মতো শাহাদাতের নেশায় আরো বেশী ছুটতে। তার সাথে প্রতিযোগিতা করতে।
সন্ধ্যা নেমে এলো। ইফতার করে সারারাত ইবাদাতে কাটিয়ে দিলো সাঈদ। দ্বিতীয় দিন একইভাবে যুদ্ধের ময়দানে বিরত্বর সাথে যুদ্ধ করে। আজও অন্যান্য সাথিরা তার ব্যাপারে এ কথা বললো।

আজ তৃতীয় দিন। ময়দানে ছুটে গেলাম আমি। সাঈদকে নযরে রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। আজও সে বাহাদুরে মতো যুদ্ধ করছে। শত্রুদেরকে আতঙ্কিত করে তুলছে। তার বাহাদুরি দেখে শত্রুরা পিঠ প্রদর্শন করতে শুরু করছে। শাহাদাতের নেশায় মত্ত সাঈদ তুফানের মতো ছুটেছে। যেন কোনো শক্তি তাকে আটকাতে পারছে না।

এখনি সন্ধ্যা নেমে আসবে। দুর্গের উপর থেকে এক কাফেরের তীর ছুটে এসে তার গলায় বিদ্ধ হয়। সাঈদ আল্লাহু আকবার বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ