এহসান সিরাজ
খতিব উবায়দুল হক রহ. জীবনে অসংখ্যবার হজ ওমরাহ করেছেন। কিন্তু জীবনের প্রথম যখন হজের নিয়ত করেন সেই স্মৃতি তাঁর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত জাগরুক হয়ে ছিল। আজিমপুর ফজুল উলুম মাদরাসার সাবেক মুহাদ্দিস মাওলানা জুবায়ের আহমদ আশরাফ সাহেবকে দেওয়া এক আত্মজৈবনিক সাক্ষাৎকারে খতিব বলেন-
'মানুষ কোনো কোনো সময় এমন অবস্থার সম্মুখীন হয় যা সে কখনো কল্পনাও করে না। কিন্তু তাতে তার জীবনধারা সম্পূর্ণ অন্যদিকে চলে যায়। পরবর্তীতে চিন্তা করলে নিজের কাছেই তা আশ্চর্যজনক বলে মনে হয়। আমার ক্ষুদ্র জীবনেও এরূপ ঘটনা ঘটেছে, যা আজো আমার স্মরণে ভাস্বর হয়ে রয়েছে। আমার বন্ধু-বান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের অবগতির জন্য তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
১৯৫০ সনের মাঝামাঝি সময়। তখন আমি দেওবন্দ মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিস ও তাফসির বিভাগে পড়া শেষ করে অবশিষ্ট ফুনূনের কিতাবাদি পড়ছি। এ সময় হঠাৎ আমার মুরব্বি হজরত মাওলানা আতহার আলী সাহেবের পক্ষ থেকে পত্র পাই যে, তোমাকে বড়কাটরা আশরাফুল উলুম মাদরাসায় উচ্চ শ্রেণির শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। পত্র পাওয়া মাত্র তুমি চলে এসো। এখানে পৌঁছার পর জানতে পারলাম যে, বড়কাটরা মাদরাসার মুরব্বিদের মধ্যে মাদরাসার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নিয়ে চরম মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। যে কারণে কোনো কোনো শিক্ষক শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রয়েছেন। এই মতবিরোধের পরিণতিতে হজরত সদর সাহেব মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ, মাওলানা আজিজুল হক প্রমুখ আলেমগণ মাদরাসার শুভাকাঙ্ক্ষী ও কিছুসংখ্যক অভিভাবকের মশওয়ারায় রমজানের পূর্বেই লালবাগ এসে জামেয়া কুরআনিয়া নামে শাহী মসজিদ সংলগ্ন নতুন মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বড়কাটরা মাদরাসা থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক চলে যাওয়ার কারণে আমাকে ছাড়াও নতুন আরো কয়েকজন শিক্ষককে নিয়োগ দান করা হয়।
বড়কাটরা মাদরাসায় অধ্যাপনার দায়িত্ব পালনসহ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টির কার্যক্রমের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জমিয়তের বিভিন্ন প্রোগ্রামে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শফী ও মাওলানা এহতেশামুল হক সাহেব থানবী প্রমুখ মুরব্বিগণ পূর্ব পাকিস্তানে আসা যাওয়া করতেন। ফলে তাঁদের সঙ্গে আমারও পরিচয় হয়।
এবার অন্য প্রসঙ্গে আলোচনা করি। প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে হজ ও জিয়ারতের আগ্রহ থাকে। আমার মনেও আগ্রহ ছিল; কিন্তু সামর্থ্য ছিল না। মাদরাসার চতুর্থ শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিকে (শাওয়াল জীকাদাহ-এর) কোন একদিন আমার নিজ গ্রামের একজন বিত্তশালী ব্যক্তি যিনি দূর সম্পর্কে আমার চাচাও হন, হঠাৎ মাদরাসায় এসে হাজির হন এবং বলেন, 'আমি হজে যাওয়ার উদ্দেশে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। কিন্তু বিমান বা স্টিমারের ফাস্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস কোন স্তরেই টিকেট পাইনি। তখন ভাবলাম যে, বোম্বাই চলে গেলে স্টিমারের ডেক ক্লাসের টিকেট সহজে পাওয়া যাবে। কিন্তু একে তো আমি বেশি লেখাপড়া জানি না, তা ছাড়া বোম্বাই সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। তাই আমি চিন্তা করলাম যে, তুমি যদি আমার সঙ্গে চল তবে এখান থেকে আমার স্টিমারের আপার ক্লাসে যা খরচ হবে তার দ্বারা আমরা দু'জন বোম্বাই হয়ে ডেক ক্লাসে সহজে হজ আদায় করে ফিরে আসতে পারবো।' আমি তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে প্রস্তুত হয়ে গেলাম। অবশ্য যখন মাদরাসার মুহতামিম পীরজি হুজুরের কাছে অনুমতির জন্য গেলাম, তখন তিনি বাধাও দিলেন না এবং এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে যাওয়াও তিনি পছন্দ করলেন না।
১৯৫৩ সাল। তখন ইন্ডিয়া পাকিস্তানের মধ্যে নতুন নতুন পাসপোর্ট চালু হয়েছে। আমাদের বাড়ি পূর্ব বর্ডারের অতি নিকটবর্তী। পাসপোর্ট ব্যতীতই উভয় দেশে অহরহ যাতায়াত চলত। আমার এবং উল্লিখিত চাচা উভয়ের শ্বশুরালয় ওপারের বর্ডারের খুবই নিকটবর্তী করিমগঞ্জ এলাকায়। কাজেই সেখানকার ঠিকানা ব্যবহার করে আমরা বোম্বাই চলে গেলাম। সাবু সিদ্দীক মুসাফিরখানা- যেখানে হজ মওসুমে হজযাত্রিগণ অবস্থান করতেন, আমরাও সেখানে গিয়ে একটি কক্ষে জায়গা করে নিলাম।
পরদিন বোম্বাই হজ অফিসে যাওয়ার পর হজ কমিটির বিশেষ সদস্য দেওবন্দের মুহতামিম কারি তায়্যিব সাহেবের জামাতা মাওলানা হামিদুল আনসারি গাজী সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তিনি দেওবন্দে পড়ার জীবনে আমাকে চিনতেন। তিনি আমাদের হজের যাবতীয় ব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়ে নিলেন এবং জরুরি কাগজপত্র প্রস্তুত করার ব্যবস্থা করে দিলেন। এতে চার পাঁচদিন অতিবাহিত হয়। এরপর একদিন বললেন, 'আপনারা আগামীকাল স্টিমারের ভাড়া নিয়ে অফিসে উপস্থিত হবেন এবং টিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে যাবেন। এর পরবর্তী দিন জেদ্দার পথে স্টিমার ছাড়বে।' আমরা খুব আনন্দিত হয়ে মুসাফিরখানায় ফিরলাম। আর আল্লাহর শোকর আদায় করতে লাগলাম যে, খুব সহজে সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
সেই দিন আসরের পর আমরা উভয়েই কিছু কেনাকাটার জন্য নিকটবর্তী মার্কেটের দিকে পৃথক পৃথকভাবে বের হয়ে গেলাম। মাগরিবের পর আমি আগে ফিরে এসে চাচা সাহেবের অপেক্ষা করতে লাগলাম। তিনি অতি বিলম্বে এশার নামাজের সময় ফিরলেন। তাঁর চেহারা খুব মলিন। মুখে কথাবার্তা নেই। জিজ্ঞাসা করলেও কিছু বলতে চাননি। অবশেষে বড়ই আক্ষেপের সাথে বললেন, 'বড়ই দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে।' আমাদের উভয়ের সম্পূর্ণ টাকা পয়সা তাঁরই কাছে ছিল। তিনি বললেন, আমি টাকাগুলো দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছিলাম। অর্ধেক টাকা (প্রায় চৌদ্দ হাজার) কোমরে বাঁধা ছিল এবং অন্য অর্ধেক বুকের মধ্যে ঝুলানো ব্যাগে ছিল। মার্কেটে চলাফেরার সময় কোমরের টাকা পকেট মাররা কেটে নিয়ে গেছে। এখন আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছি যে, বাকি অর্ধেক টাকা দ্বারা তো দু'জনে হজ করতে পারব না। আমি তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম যে, আপনি চিন্তা করবেন না। আল্লাহর শোকর, অর্ধেক টাকা রক্ষা পেয়েছে। তাতে একজন সচ্ছলভাবে হজ ও জিয়ারত করতে পারবে। আমার ওপর তো হজ ফরজ নয়; আপনার ওপর ফরজ। কাজেই আপনি চলে যান। আমি থেকে যাব। যখন আল্লাহ তাআলার হুকুম হয় তখন যাব।
পরদিন তাঁকে নিয়ে আমি হজ অফিসে যাই এবং তাঁর নামে স্টিমার টিকেটের টাকা জমা দিয়ে টিকেট ও সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করি। এর পরদিন অশ্রুসিক্ত অবস্থায় তাঁকে স্টিমারে আরোহণ করিয়ে বিদায় দিই।
তিনি যে ঘটনার উল্লেখ করেছেন, তা হয়তো যথার্থ। অথবা তা হয়তো তার একা যাওয়ার ফন্দি! বোম্বাইতে গিয়ে টিকেট সংগ্রহ করা পর্যন্ত আমার সাহায্যের দরকার ছিল। স্টিমারে আরোহণ করার পর জেদ্দায় পাড়ি দিলেই দেশের বহু লোক পাওয়া যাবে। তাদের সহায়তায় সহজেই হজ আদায় করা যাবে। তখন আর আমার সাহায্যের কোনো প্রয়োজন হবে না। এরই প্রেক্ষিতে হয়তো আমার সাথে তিনি এই প্রতারণা করেছেন।
যাই হোক, এ ঘটনায় আমি মনে প্রচণ্ড আঘাত পাই। চিন্তায় পড়ে যাই যে, এখন কী করব। হজ না করে সরাসরি দেশে ফিরে আসতে অত্যন্ত লজ্জা অনুভব করি। আরো দু'এক দিন সেখানে থাকার পর চিন্তা করলাম যে, আপাতত নিজের মূল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দে চলে যাই। সেখানে শায়খুল ইসলাম কুতবুল আলম হজরত মাওলানা সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্য উস্তাদদের সাহচর্যে এক দু'মাস কাটিয়ে হজ মওসুমের পর দেশে ফিরব।
দেওবন্দ পৌঁছার পর হজরত শায়খ মাদানি, শায়খুল আদব হজরত মাওলানা এজাজ আলী প্রমুখ আসাতেযায়ে কেরামের নিকট উক্ত ঘটনার উল্লেখ করলাম না। তাঁদেরকে শুধু এতটুকু অবহিত করলাম যে, কিছু দিনের জন্য দেওবন্দে এসেছি। তাঁরা আমাকে অত্যধিক আদর আপ্যায়ন করলেন।
ইতোমধ্যে দারুল উলুম দেওবন্দের এক নতুন শিক্ষক মাওলানা ফয়েজ আলী শাহ হাজরাভি সাহেব যিনি অধ্যয়ন যুগে আমার সাথী ছিলেন- তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি ছাত্র জীবনের মত আমার সাথে অতি আপনজনের ন্যায় ব্যবহার করেন এবং প্রতিদিন মাদরাসায় অবস্থিত তাঁর থাকার কক্ষে চা নাশতায় শামিল থাকার আহ্বান জানান। আমি তাঁকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে বলি যে, বিশেষ কোন কারণে এখন আর ঢাকা বড় কাটরা মাদরাসায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে না। এ অঞ্চলে কোন জায়গায় আমার জন্য শিক্ষকতার ব্যবস্থা করে দিন। তিনি বললেন, 'একজন পাকিস্তানি হিসাবে তোমার জন্য এ দেশে থাকা সমীচীন নয়। পাকিস্তানের মুফতিয়ে আজম হজরত মুফতি মুহাম্মদ শফি করাচিতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা দারুল উলুমে আমাকে শিক্ষক হিসাবে যাওয়ার জন্য ডেকেছেন। আমি দেওবন্দ ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক নই। তুমি যদি সম্মত হও, তবে তোমার পরিচয় দিয়ে আমি তাঁর কাছে পত্র লিখি। আমি তাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজি হলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে মুফতি সাহেবের কাছে পত্র পাঠালেন।
ইতোমধ্যে আমার প্রতি বিশেষ মেহেরবান উস্তাদ শায়খুল আদব হজরত মাওলানা এজাজ আলি সাহেব আমার ঢাকায় ফিরে না আসার মনোভাব জানতে পারেন। তিনি হজরত শায়খ মাদানির অনুমতি নিয়ে আমাকে শাহজাহানপুরে অবস্থিত মধ্যম পর্যায়ের এক মাদরাসায় পাঠিয়ে দিতে চাইলেন। অবশ্য হজরত শায়খ বললেন, তোমার জন্য এ দেশের পরিবর্তে পাকিস্তানেরই কোন এলাকায় খেদমত করা ভাল হবে। মুফতি শফি সাহেবের উত্তর বিলম্বিত হওয়ার কারণে আমি আপাতত শাহজাহানপুর গিয়ে উক্ত মাদরাসায় শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করতে শুরু করি।
আমি চলে যাওয়ার দুই তিন সপ্তাহ পরই মুফতী সাহেবের পত্র আসে। তিনি পত্রে লিখেন, 'আমি তাকে চিনি। আপনি তাকে অতি সত্বর পাঠিয়ে দিন। দারুল উলুম করাচীতে তাকে সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হবে।' হজরত শায়খুল আদব লোক পাঠিয়ে অবিলম্বে আমাকে দেওবন্দ ফিরে আসতে খবর পাঠান। হজরত শায়খ মাদানির তো পূর্ব থেকেই মত ছিল, আমি যেন পাকিস্তানেরই কোন এলাকায় দায়িত্ব পালন করি।
যাই হোক, আমি তাঁদের দোয়া ও অনুমতি নিয়ে মুহাজিরদের জন্য খোলা পথ সিন্ধের খুকরুপাত হয়ে করাচি পৌঁছে মুফতি সাহেবের মাদরাসায় যোগদান করি। তখন আমার মনে এই বাসনাও ছিল যে, এখানে থেকে সহজে আগামী বছর হজ আদায় করা যাবে। এই মাদরাসার নাজিম ছিলেন মুফতি সাহেবেরই জামাতা মাওলানা নূর আহমদ আকইয়াবি। তিনি ছিলেন বড়ই কর্মঠ ব্যক্তি। করাচী নানকওয়ারায় প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম মাদরাসার অভ্যন্তরীণ যাবতীয় কাজকর্ম তাঁর উপরই ন্যস্ত ছিল। আমাকে প্রথম অবস্থায় আবু দাউদ শরিফ, হেদায়া, শরহে জামী ইত্যাদি পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। আল্লাহর শোকর, অল্প দিনেই ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে বিশেষ সুনামও অর্জিত হয়। বুখারী শরীফের দরস হযরত মুফতী সাহেব (র)-এর জিম্মায় ছিল। তিনি তখনকার রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্নমুখী কাজে অতি ব্যস্ততার কারণে দরসের জন্য বেশী সময় দিতে পারতেন না। তাই তিনি বছরের শেষের দিকে বুখারি শরিফের কিছু অংশ পড়ানোও আমার জিম্মায় দিয়ে দিলেন।
এ দিকে পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্টের ইলেকশনের তৎপরতার সময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে আমাকে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য প্রচার সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। এভাবে মাদরাসার অধ্যাপনার পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক গড়ে উঠে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত দৈনিক জং, নওয়ায়ে ওয়াক্ত ইত্যাদি উর্দু পত্রিকাগুলোতে পূর্ব পাকিস্তানের ইসলামী রাজনীতি সম্পর্কে মাঝেমধ্যে বিবৃতি দিতে থাকি। যার ফলে পশ্চিম পাকিস্তানেও নেজামে ইসলাম পার্টির একটি পরিবেশ গড়ে উঠে।
মাদরাসায়ে দারুল উলুমের সাথে আমার আন্তরিক সম্পর্ক এবং মুফতি শফি সাহেবের মত মুরব্বির আমার প্রতি সুদৃষ্টি থাকার কারণে আমি স্থায়ীভাবে সেখানে থাকাটাই স্থির করে নিয়েছিলাম। তখন পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আতহার আলী সাহেবের নেতৃত্বে কয়েকজন সদস্য মন্ত্রিপরিষদে যোগদান করেন। তন্মধ্যে কুমিল্লার আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী সাহেব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি অভিজাত হোটেলে শানদার সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি জোর দিয়ে বলেন, তুমি দেশে এসে পড়। নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। তন্মধ্যে কোন একটির দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে। হজরত মাওলানা আতহার আলী সাহেবও এই মর্মে আমার কাছে পত্র পাঠালেন।
অপরদিকে পর পর দুইবার হজের জন্য দরখাস্ত করার পরও লটারিতে আমার নাম উঠলো না। এ অবস্থায় মাদরাসার শিক্ষাবর্ষ সমাপ্তির পর শাবান মাসের শেষ দিকে ছুটিতে আমি দেশে এসে পড়ি। রমজান মাসে হজরত মুফতি শফি সাহেব বিশেষ প্রোগ্রামে পূর্ব পাকিস্তান আসেন। সেই সময় মাওলানা আতহার আলী সাহেব মাদরাসা দারুল উলুম করাচী থেকে আমাকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য মুফতি সাহেবের নিকট অনুরোধ করেন। মুফতি সাহেবও অগত্যা তাঁর আবদারে রাজি হয়ে যান।' রহিমাহুমুল্লাহ!
(সংক্ষেপিত)
এসএকে/