সোমবার, ০২ জুন ২০২৫ ।। ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ৬ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :
মে মাসে এলো সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স গাজায় একদিনে প্রাণ গেল ৩৭ ফিলিস্তিনির, নিহত ৫৪ হাজার ছাড়াল প্রতিদিন কিশমিশ খেলে নারীদের যে উপকার বিশুদ্ধ কুরবানী পালনে সচেতনতা জরুরি : জাতীয় মুফতী বোর্ড ফাউন্ডেশনের সেমিনারে বক্তারা যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলি সমাবেশে সন্ত্রাসী হামলা, বেশ কয়েকজন আহত হজমের সমস্যা কমাতে উপকারী যেসব পানীয় অনুমতিহীন ২ লাখ ৭০ হাজার হজযাত্রী ঢুকতে পারলেন না মক্কায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সংলাপে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চামড়া শিল্পের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করুন: ইসলামী ছাত্র আন্দোলন উপদেষ্টাদের প্রতি মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়ার আহ্বান

সবচেয়ে মারাত্মক খাদ্য সংকটে এখন ‘গাজা’ 

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইসরাইলের অব্যাহত হামলা ও অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট চলছে কয়েক মাস ধরে। শিশুরা ভুগছে অনাহার ও চরম অপুষ্টিতে। 

দিন যত যাচ্ছে, পরিস্থিতি তত ভয়াবহ হচ্ছে। এ অবস্থায় গাজা উপত্যকাকে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে খাদ্য সংকটপূর্ণ ও ক্ষুধার্ত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। সেখানে ২৩ লাখ মানুষই এখন ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধার’ মুখোমুখি। যা এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

পরিস্থিতি এখন এতটাই ভয়াবহ যে, এক ব্যাগ আটার জন্য সেখানকার ক্ষুধার্ত জনতা যা ইচ্ছে করতে পারে। খবর গার্ডিয়ান, আলজাজিরার।

ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় গাজার জনগণ এখন অনাহারের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এবং অবিলম্বে সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে রূপ নিতে পারে। সেখানে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়াও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গাজা উপত্যকায় এখন আর তেমন খাদ্যসামগ্রীও পৌঁছানো যাচ্ছে না। গুটিকয়েক ট্রাক সেখানে গেলেও তাতে যে পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী থাকে, তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। 

অধিকাংশ ফিলিস্তিনি বলছেন, তারা কোনো খাবার পাচ্ছেন না। কারণ ত্রাণের ট্রাকগুলোর খাদ্য বিতরণের কোনো নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারিত নেই। তারা বলছেন, এ অবস্থায় এক ব্যাগ আটা বা এক প্যাকেট খাবার পেতে তারা যে কোনো কিছু করতে পারেন।    

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, জর্ডানের আম্মানের গুদামে গাজার জন্য এক মাসের প্রয়োজনীয় খাদ্য, চিকিৎসা ও মানবিক উপকরণ মজুত রয়েছে। এসব ত্রাণ একবারে ২ লাখ মানুষের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সীমান্ত খুলে না দিলে তা পৌঁছানো সম্ভব নয়।

এদিকে শুক্রবার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ ও এর মানবিক অংশীদারদের কাছ থেকে ত্রাণবাহী পাঁচটি ট্রাক গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে, যা গত চার দিনের মধ্যে প্রথম প্রবেশ। 

একই চেকপয়েন্ট, কেরেম শালোম/কারেম আবু সালেম ক্রসিং থেকে আরও ৬০টি ট্রাককে ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এলাকায় তীব্র সংঘর্ষের কারণে ত্রাণের ট্রাকগুলোকে লোডিং জোনে ফিরে যেতে হয়েছিল।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের প্রধান মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ক্রসিংয়ের আশপাশের এলাকাটি এমন একটি এলাকা যেখানে প্রচুর সশস্ত্র দল কাজ করছে, বিশেষ করে নো ম্যানস ল্যান্ডে, যা ক্রসিং থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

তিনি বলেন, পাঁচটি ট্রাক চিকিৎসা সরঞ্জাম বহন করছিল, যা দেইর আল-বালাহের ফিল্ড হাসপাতালের জন্য ছিল এবং আজ (শুক্রবার) বেশির ভাগ সরবরাহ লুট করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজায় প্রায় ৮০ দিন ধরে খাবার, ওষুধ, পানি, জ্বালানিসহ সব ধরনের সরবরাহে ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার পর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন গাজা উপত্যকায় সবচেয়ে সীমিত পরিমাণে সাহায্য প্রবেশ করছে, যা ২৩ লাখ মানুষকে সহায়তার জন্য যথেষ্ট নয়।

ওসিএইচএ’র মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেছেন, গাজা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত এলাকা। এই ভুখণ্ড একমাত্র সংজ্ঞায়িত এলাকা- একটি দেশ বা একটি দেশের মধ্যে সংজ্ঞায়িত অঞ্চল- যেখানে পুরো জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। জনসংখ্যার একশ শতাংশ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

জেন্স লারকে গাজায় ত্রাণ সংকটের পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। ইসরাইলের সেনাবাহিনীর অবরোধের কারণে ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। অবরোধ সামান্য তুলে দেওয়ায় ৯০০ ট্রাক অপেক্ষা করছে। যার মধ্যে ৬০০ ট্রাক সীমান্ত এলাকায় যেতে পেরেছে। খুব সামান্য পরিমাণ ত্রাণ ভেতরে প্রবেশ করতে পেরেছে। 

তিনি জানান, বিশ্বের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ত্রাণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন বাধা পাওয়ার দৃষ্টান্ত নেই। লারকে বলেন, ‘ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করা মাত্র মানুষ তা ঘিরে ধরছে ত্রাণের জন্য।’

জাতিসংঘ ও একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা যৌথভাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজায় চরম খাদ্য সংকট এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে অনাহারে ২৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। যা এখন শতভাগে পৌঁছেছে।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ