যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে নির্বাচনী ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি নির্বাচিত হয়েছেন শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে। এনবিসি নিউজের পূর্বাভাস অনুযায়ী তার জয় প্রগতিশীল ভোটারদের উজ্জীবিত করেছে এবং সমগ্র দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই ঐতিহাসিক জয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছে প্রগতিশীল শিবির, তবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, কিছু রিপাবলিকান নেতা এবং মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটরা।
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার। ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী মামদানি সহজ ব্যবধানে জিতেছেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে। কুয়োমো ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে পরাজিত হওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছেন। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস নির্বাচনের আগে কুয়োমোকে সমর্থন জানিয়েছেন। মামদানির জন্য এটি এক অবিস্মরণীয় উত্থান; এক বছরের মধ্যে তিনি একজন তুলনামূলক অখ্যাত স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান থেকে নিউইয়র্কের নেতৃত্বে পৌঁছেছেন।
মামদানির ঘোষিত কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করে ভাড়া নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটে ভাড়া বৃদ্ধিতে স্থগিতাদেশ, সার্বজনীন শিশুসেবা, বিনামূল্যে বাস চলাচল ব্যবস্থা এবং সিটি করপোরেশন পরিচালিত মুদি দোকান। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি প্রায় এক বছরের মধ্যে ১ শতাংশ সমর্থন থেকে শুরু করে বিশাল প্রভাবশালী ভোটে পৌঁছান। কুইন্সে সমাবেশে তিনি বলেন, “এমন মুহূর্ত যেন আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। তবে যখন প্রচারণা শুরু করেছিলাম, সেখানে একটিও ক্যামেরা ছিল না।”
এনবিসি নিউজের এক্সিট পোল অনুযায়ী, মামদানি নিউইয়র্কের বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর ভোট পেয়েছেন—শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো, এশিয়ানসহ। ৪৫ বছরের নিচের ভোটারদের মধ্যে তিনি ৪৩ পয়েন্টে কুয়োমোর থেকে এগিয়েছিলেন। তবে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে কুয়োমো সামান্য এগিয়েছিলেন। শিক্ষাগত পার্থক্য এবং নতুন ও জন্মসূত্রে নিউইয়র্কে থাকা ভোটারদের মধ্যে প্রভাবশালী ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে।
মামদানির মুসলিম পরিচয় ও ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান নির্বাচনের সময় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও ভোটাররা তাকে সমর্থন করেছেন। নির্বাচনের শেষ সপ্তাহগুলোতে মামদানি ও কুয়োমোর মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ হয়। কুয়োমো তাকে ‘নিউইয়র্কে বিভাজন সৃষ্টিকারী’ বলেন, অন্যদিকে মামদানি কুয়োমোকে ট্রাম্পের ‘কাঠপুতলি’ বলে সমালোচনা করেন। রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ৬১ শতাংশ কুয়োমোর পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
মামদানির জয় শুধু নিউইয়র্কে সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য নতুন দিক নির্দেশ করবে। তার নেতৃত্বে শহর সামাজিক ন্যায়, জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট মোকাবেলা এবং সকল সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করার দিকে এগোবে। নতুন মুসলিম মেয়রের এই ইতিহাস সারা দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক চেতনায় এক নতুন উদ্দীপনা যোগ করেছে। তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, এনবিসি নিউজ
এনএইচ/