আজ থেকে প্রায় ১৮-২০ বছর আগেও মুসলিম শিশুদের দিনের শুরু হতো সুমধুর কণ্ঠে কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে। মক্তব ছিল শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার মূল ভিত্তি। এখানেই শিখানো হতো আদব-কায়দা, নামাজ, রোজা, মাসআলা-মাসায়েলসহ ইসলামী জীবনব্যবস্থার প্রাথমিক জ্ঞান। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ৭১১ সালে মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের পরপরই ভারতবর্ষে মক্তব ও মাদরাসা শিক্ষার প্রচলন শুরু হয়।
কিন্তু কালের পরিক্রমায়, ডিজিটাল যুগের চাপে সেই ঐতিহ্যবাহী মক্তব ব্যবস্থাটি আজ বিলুপ্তির পথে।
এক সময় মক্তবের পাঠক্রম শুরু হতো সূরা শিক্ষা দিয়ে। এরপর কায়দা, আমপারা এবং সবশেষে সম্পূর্ণ কুরআন শরিফ শিক্ষাদান হতো। প্রতিটি স্তর অতিক্রমের সময় ‘ছবক’ অনুষ্ঠান হতো, যেখানে রোল নম্বর অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হতো। পাশাপাশি শিখানো হতো নামাজ, হাদীস, রোজা, দোয়া-দরুদ, মিথ্যা বর্জন, গালাগাল না করা, এবং বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক বিষয়াবলি।
এই শিক্ষাব্যবস্থার সামাজিক প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। শিশুরা শৈশবেই গড়ে উঠত নৈতিকতা, ভদ্রতা ও ধর্মীয় আত্মচেতনায় বলীয়ান হয়ে।
আজকের বাস্তবতায় আমরা দেখি, অভিভাবকেরা সন্তানদের আধুনিক শিক্ষার পেছনে এতটাই ব্যস্ত যে, তাদের মক্তবে পাঠানোর সময়ই বের করতে পারেন না। অথচ মনে রাখতে হবে—
"কুরআন শেখাও ছেলে-মেয়েকে ও হে মুসলমান,
জান কবজের সময় তোমার হইবে রে আসান!"
শিশুদের যখন শেখানো হয় কিভাবে সালাম দিতে হয়, কিভাবে বড়দের সম্মান করতে হয়—তখনই তৈরি হয় একটি আদর্শ সমাজের ভিত। আর এই ভিত্তি স্থাপনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো মক্তব। পবিত্র কুরআন ও নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত একটি প্রজন্মই গড়ে তুলতে পারে নৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে সমৃদ্ধ একটি সমাজ।
তাই আসুন, আবার ফিরিয়ে আনি সেই মক্তব সংস্কৃতি—শিশুদের প্রথম পাঠশালা হোক কুরআন ও আদর্শ শিক্ষার উন্মেষভূমি।
এনএইচ/