আরাফাতের ময়দানে নিজ কাফেলার হাজিদের উদ্দেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক (ইবনে শাইখুল হাদিস) আরাফাতের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলাই আরাফাতের প্রকৃত শিক্ষা বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) পবিত্র হজের দিনে বাংলাদেশি হাজিদের উদ্দেশে নসিহত করতে গিয়ে মাওলানা মামুনুর হক বলেন, কুরআনে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি ও পালনকর্তা—এই সত্যের স্বীকৃতি তিনি আমাদের সৃষ্টির বহু পূর্বেই আমাদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। তিনি নিজে এই সত্যের সাক্ষী হয়েছেন এবং নবীগণকেও এর সাক্ষী করেছেন। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, এই সাক্ষ্যগ্রহণের ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল আরাফার এই পবিত্র ময়দানে।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, মানুষ পৃথিবীতে আগমনের আগেই আল্লাহ তায়ালা তার জীবনের যাবতীয় প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবস্থাপনার আয়োজন করে রাখেন। শুধু তাই নয়, মানুষকে ঘিরে থাকা বিপদ-আপদের মাঝেও আল্লাহ তাকে সুরক্ষা প্রদান করেন। এটিই হলো ‘রব’ শব্দের প্রকৃত অর্থ—তিনি সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও রক্ষাকর্তা। তবে ‘রব’ শব্দের সবচেয়ে গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হলো, আল্লাহ যেহেতু রব, তিনিই বিধানদাতা—সুতরাং তাঁর দেওয়া বিধান মেনে চলাই তাঁর রুবুবিয়াতের প্রকৃত স্বীকৃতি।
হাজিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মৃত্যু পরবর্তী সময়ে কবরের প্রশ্নোত্তরের সময় ফেরেশতাগণ প্রথমেই জিজ্ঞেস করবেন: ‘তোমার রব কে?’ এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর কেবল তারাই দিতে পারবে, যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করত। কেবল মুখে জানা থাকলেই চলবে না—যারা ইসলামের বিধান অনুসরণ করেনি, তারা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। এজন্য আমাদের উচিত, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা করা।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, হজের মূল শিক্ষা ও আরাফার ময়দানে একত্রিত হওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো—আল্লাহ তায়ালা যে আমাদের থেকে তাঁর রুবুবিয়াতের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন, তা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেওয়া। সুতরাং এই ময়দান থেকে প্রত্যেক মুসলমানের শিক্ষা নেওয়া উচিত—জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলাই আমাদের দায়িত্ব।
বিদায় হজের স্মৃতিচারণ করে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, এই আরাফার ময়দানেই আল্লাহ তাআলা ইসলামের পূর্ণতার ঘোষণা দিয়েছেন।
ঐতিহাসিক সেই ঘোষণায় আল্লাহ বলেন: ‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, আমার নেয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম।’
তিনি বলেন, হযরত উমর ফারুক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এক ইহুদির প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন: ‘ইহুদিরা তাদের ইচ্ছামতো শরিয়তে সংযোজন করে, যা তাদের ধ্বংসের কারণ হয়েছে। পক্ষান্তরে মুসলমানদের জীবনের প্রতিটি দিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়।’
তিনি আরও বলেন, এই আয়াতটি বিদায় হজের সময়, আরাফার ময়দানে, জুমার দিন, মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতিতে, হজের সর্বোচ্চ গুরুত্বের আমল আরাফাহ পালনের সময় নাজিল হয়। এটি ছিল নবীজীর জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন ও তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। এরকম মহিমান্বিত পরিবেশ আর কখনো সৃষ্টি হবে না।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, এই আরাফার ময়দান মুসলমানদের গৌরবের প্রতীক। এখান থেকেই ইসলামের পূর্ণতার ঘোষণা এসেছে। তাই এই ময়দান আমাদের শিক্ষা দেয়—ইসলাম কেবল কোনো ধর্ম নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামই শ্রেষ্ঠ জীবনধারা, এর চেয়ে উত্তম পথনির্দেশনা পৃথিবীতে আর নেই। এই বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করে আমাদেরকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণে অটল থাকতে হবে।
এমএইচ/