|| মাওলানা মামুনুল হক ||
তাসনিম আর রানিম। দুরন্ত মায়াবি দুটি শিশু। সারাদিন এ ঘর থেকে ও ঘর ঘুরঘুর করে। খেলার সময় খেলে আর কল কল হাসিতে মুক্তো ঝরায়। ছবির ঘরটি তাদের খেলার ঘর।
মদিনা মুনাওয়ারার পবিত্র পরিবশে বেড়ে উঠছে শিশু দুটি। বাবা-মায়ের চোখের শীতলতা আর হৃদয়ের প্রশান্তি তারা। ডিজিটাল যুগের প্রাণঘাতী ডিজিটাল স্ক্রিনের বিষাক্ত আলোকছটা থেকে মুক্ত তাদের জীবন। সেই পুরনো দিনের শিশুদের মত হাড়ি-পাতিল আর ঘর-দোর নিয়ে খেলাধুলাতেই হয়ে যায় তাদের আনন্দ বিনোদন। কেননা তারা এমন এক ঘরে বেড়ে উঠছে যেখানে স্মার্টফোন নামক ধ্বংসাত্মক বিষাক্ত ডিভাইস অনুমোদিত নয়।
পবিত্র মদিনার সফরে এবার এই ঘরেই কিছু সময় আতিথেয়তা গ্রহণের সুযোগ হয়েছে আমাদের। প্রবাসী পরিবারের আর দশটি শিশুর মতো তাসনিম আর রানিমও খেলার সাথীর অভাব অনুভব করে তীব্রভাবে। মদিনা শরিফের জিয়ারতে আগত স্বদেশী মেহমানগণ তাদের বাড়িতে অতিথি হলে শিশু দুটির সরল অনুযোগ থাকে বাবা-মায়ের কাছে, সবাই শুধু বড়রা আসে কেন? বাবুদেরকে নিয়ে আসতে পারে না?
ক্ষণিকের অবস্থানে মায়া জন্মে যায় এই ঘরটির প্রতি। কথায় কথায় ঘরের কর্তা জানায়, বিয়ের সময় তার শ্বশুরের একটিই শর্ত ছিল। তার কন্যাকে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না।
তাই এই ঘরে সোশ্যাল মিডিয়া নামক সামাজবিধ্বংসী কোনো অ্যাপ ব্যবহার হয় না। আর দশটা ঘরের মতো এই ঘরের শিশুরা মোবাইলের বিষাক্ত দংশনেও নীল হয় না। তারা প্রাকৃত্রিক এনালগ যুগের খেলাধুলা করেই বেড়ে উঠছে।
আজকাল অনেক বাবা-মাকেই অভিযোগ করতে শোনা যায়, শিশুদেরকে মোবাইলের নাগালের বাইরে রাখা সম্ভব না। ঘরে বড়রা যদি সব সময় মোবাইল ব্যবহার করে। ছবি ভিডিও দেখতে থাকে। গেমস খেলতে থাকে। সেই ঘরের শিশুরা মোবাইলে আসক্ত হবেই। এর দায় কি নিষ্পাপ সরল শিশুদের? নাকি এই বিষাক্ত ডিভাইস ঘরে প্রবেশের জন্য দায়ী অভিভাবকদের?
শ্রদ্ধা জানাই সেই পিতাকে যিনি বিয়ের সময় তার হবু জামাতাকে এমন চমৎকার আদর্শ নির্দেশনা দিতে পারেন! সে ঘরের শিশুরা অন্য দশটি ঘরের শিশুদের চেয়ে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে এতে কোনো সন্দেহ নাই!
লেখক: আমির, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
এমএম/