সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার খুনিদের ভয়ে কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে পারি না ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিবের সঙ্গে ইরানি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ  ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আলেম-ওলামার সক্রিয় ভূমিকা ছিল’ ‘বসিলা আন্দোলন জমানোর পিছনে আমাদের মাদ্রাসার বড় ভূমিকা ছিল’ ১১ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১২১, আহত ৫ হাজারের বেশি: টিআইবি

লেবাসধারী পীররা নয়, উলামা-মাশাইখরাই প্রকৃত ওলী-আউলিয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মীযান হারুন

তাসাওউফকে দুনিয়া অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের কৌশল অতি পুরনো। প্রত্যেক যুগেই এক শ্রেণির লেবাসধারী ফকির-দরবেশ মানুষকে যুহদ ও আখেরাতের ওয়াজ করে নিজেরা বিত্ত-বৈভবে ডুবে থেকেছে। আজ তা আরও বেড়েছে। বরং বৈশ্বিক মন্দা ও অস্থিরতার এই যুগে পীর-মুরিদির মতো লাভজনক, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার শর্তহীন অথচ শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত এমন ব্যবসা পৃথিবীতে আর নেই। 

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও দীর্ঘ পারিবারিক সম্পর্কের সূত্রে আমার পর্যবেক্ষণ হলো, এখানে কেবল পীর পরিচয়ে যেসব পরিবার প্রসিদ্ধির শীর্ষে, জুহদ ও তাকওয়ার মানদণ্ডে তাদের অধিকাংশের অবস্থান নিম্ন থেকে নিম্নস্তরে। মানুষকে দুনিয়া-বিমুখতার বয়ান দেওয়া এসব লোকের দিন-রাতের সকল ব্যস্ততা দুনিয়া ঘিরে। নবীজির চাঁটাইয়ে শোয়ার গল্প বলে তারা তুলতুলে তোশক ছাড়া ঘুমাতে পারেন না। 

নবীজির ঘরে দুই মাস চুলা না জ্বলার ঘটনা বলা এসব লোকের ঘরের চুলা কখনো নেভে না। সুফফার দরিদ্র সাহাবিদের ইতিহাস বলে তারা গরিব শ্রোতাকে কাঁদান। সেই কাঁদানির পয়সা দিয়ে বিজনেস ক্লাসে দুনিয়া ঘোরেন আর আমোদ করেন। তাদের অভ্যন্তরীণ দীনদারির হালত অবর্ণনীয়। পারিবারিক তালিম-তরবিয়ত প্রচণ্ড রকমের শোচনীয়। 

আমি এক 'হক্কানী' পীর পরিবারের কথা প্রত্যক্ষদর্শিনী সূত্রে জানি, যাদের মেয়েরা সিগারেট খান। কেবল পিতৃ পরিচয়ের কারণে জাহেল, অকর্মা এমনকি আধা-পাগল পুত্রের পীর বয়ে যাওয়ার ঘটনাও অহরহ। বস্তুত তাদের প্রকৃত ও সার্বিক চিত্র সামনে এলে মুসলমানরা তাদের দিকে ফিরে থুথুও ফেলবে না। 

এই শ্রেণির লেবাসধারী পীর-ফকিরদের থেকে অবশ্যই আমাদেরকে ইলম ও জুহদের প্রকৃত ধারক-বাহক, নবীদের উত্তরসূরি প্রকৃত উলামায়ে কেরামকে আলাদা করতে হবে। বিশেষত তালিম ও তরবিয়তে যুক্ত, দাওয়াত ও ইসলাহের জন্য নিবেদিত মুখলিস উলামা-মাশাইখকে, যারা যুগে যুগে স্বেচ্ছায় দুনিয়ার ওপর দীনকে প্রাধান্য দিয়েছেন, ভোগবিলাসের পরিবর্তে জরুরত ও কানাআতের জীবন বেছে নিয়েছেন, তাসাওউফ ও পীর-মুরিদিকে যারা নিছক ইসলাহের একটি মুজাররাব পন্থা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। 

শাসক ও দুনিয়াদারদের দরবার থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে যারা দীন ও উম্মাহর কল্যাণে কাজ করে গেছেন। যারা পরিবারকে বিলাসিতা কিনে দিতে না পারলেও পৃথিবীর সবচেয়ে দামি তরবিয়ত দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিজ দীনের জন্য নির্বাচিত করেছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের বংশধররা দীন, ইলম ও দাওয়াহর আমানত বহনের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। বিপরীতে যুহদের লেবাসধারী দুনিয়াপূজারীরা বংশসুদ্ধ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 

লেবাসধারী পীররা নয়; এই উলামা-মাশাইখরাই প্রকৃত ওলী-আউলিয়া, আবেদ ও যাহেদ। তারাই দীনের মুহাফিজ। তারাই উম্মাহর আশার আলো। তারা যতদিন থাকবেন, ততদিন যুহদ, ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাত থাকবে। তাদের কারণেই পৃথিবী টিকে থাকবে। ইসলাহের জন্য লেবাসধারীদের ভিড়ে এই প্রকৃত মুসলিহদের খুঁজে নেওয়া আমাদেরই কর্তব্য।

লেখক: গবেষক, কলামিস্ট ও চিন্তক

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ