মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৬


শতবর্ষী আলেম ও হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর বিশিষ্ট খলিফা মাওলানা মুমিন উল্লাহর ইন্তেকাল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর অন্যতম খলিফা শতবর্ষী আলেম মাওলানা মুমিন উল্লাহ নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে মেয়ের বাসায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

আজ সোমবার রাত ১২টায় তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে সহ অসংখ্য ভক্ত-মরিদ, ছাত্র ও আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। মাওলানা মুমিন উল্লাহ দীর্ঘ সাত-আট মাস যাবৎ বার্ধক্য জনিত অসুস্থতায় শয্যাশায়ী ছিলেন। আজ বাদ জোহর নামাজে জানাজার পর লক্ষ্মীপুর পারিবারিক কবরে তাকে দাফন করা হয়।

হযরত মাওলানা মুমিন উল্লাহ রহ. ১৯২১ সালের জানুয়ারি মাসে, লক্ষ্মীপুর জেলার মান্দারী মোহাম্মাদুল্লাহ পাটোয়ারী বাড়িতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জনাব হাজী আব্দুল মজিদ ছিলেন এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ ব্যক্তি। হাজী আব্দুল মজিদ সাহেব হজের সফরে ইন্তেকাল করেন এবং তাকে জেদ্দায় দাফন করা হয়।

হযরত মাওলানা মুমিন উল্লাহ রহ. প্রাইমারি ও মক্তবের শিক্ষা নিজ এলাকাতেই সম্পন্ন করেন। পরে নোয়াখালী টুমচর সরকারী মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করার পর নোয়াখালী ইসলামিয়া আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে জামাতে উলা সম্পন্ন করার পর ২২ বছর বয়সে উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে ভারতের দেওবন্দ মাদরাসায় যান।

ধর্মীয় শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস তিনি দারুল উলুম দেওবন্দেই সম্পন্ন করেন। সেখানে তিনি বিশ্ববরেণ্য আলেম হযরত মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. ও আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ.-এর নিকট বোখারী শরীফসহ অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন।

দেশে ফিরে আসার পর তিনি বর্তমান চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত ওয়ারুক সরকারী মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এখানে ক্রমাগত ছয় বছর শিক্ষকতা করার পর তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত দ্বীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উজানী মাদরাসায় সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। পরে তিনি উজানীর পীর মাও. মোবারক করীম সাহেব রহ.-এর বোনের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন।

এর কিছুদিন পরই তিনি আমীরে শরীয়ত আল্লামা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর খেলাফত লাভ করেন। হাফেজ্জী হুজুর রহ: এর প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মীপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা-ই- ইশাআতুল উলুম লুধুয়ার প্রায় ২৪ বছর প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন।

পরে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদরাসা-মক্তব স্থাপনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ঢাকা মীরের বাগ, চৌমুহনীর বাটিয়া গ্রাম এবং চৌমুহনীর হাজীপুর, নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর, কাপাসিয়া, লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি কওমি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সত্তরটির বেশি নুরানী মক্তব এবং কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।

এদিকে মাওলানা মুমিন উল্লাহর ইন্তেকালে খেলাফত আন্দোলনের শোক প্রকাশ করেছেন। প্রবীণ আলেমে দ্বীন, হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা মাওলানা মুমিন উল্লাহ এর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান, আমীরে শরীয়ত মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ও মহাসচিব মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় নেতৃদ্বয় বলেন, মরহুম মাওলানা মুমিন উল্লাহ কুরআন-সুন্নাহর অনুসারী একজন মজবুত আলেম ও দ্বীনের একনিষ্ঠ খাদেম ছিলেন। তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় সত্তরটিরও বেশি নূরানী মক্তব প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন জেলায় কওমী মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের উপদেষ্টা হিসেবে দ্বীনের বহুমূখী খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। তাঁর ইন্তেকালে জাতি একজন দ্বীনদরদী আলেমকে হারালো।

নেতৃদ্বয় মহান আল্লাহ তা‘আলার দরবারে মরহুমের রূহের মাগফেরাত ও জান্নাতের উচ্চ মাকাম কামনা এবং তার শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ