সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫ ।। ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ১৩ জিলহজ ১৪৪৬


ছুটি উদযাপন: তালিবুল ইলমের পদস্খলনের ভয়


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

|| মিযানুর রহমান জামীল ||

ছুটি আনন্দের, দোষের কিছু নয়; তবে অতি আনন্দে আত্মপরিচয় ভুলে ছুটির অপব্যবহার যেন আমাদের পতন ডেনে না আনে সে জন্য আছে বড়দের সতর্কবার্তা। মুফাক্কিরে ইসলাম সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেছেন— 'তালিবুল ইলমের ছুটি নেই, এটা সাময়িক অবসর-যাপন মাত্র। তারা তো ছুটি কাটাবে কবর জগতের দীর্ঘ সফরে।'

একেকটা ছুটি শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আতঙ্ক তৈরি করে, গুরুমনে অনাকাঙ্ক্ষিত হতাশার সঞ্চার করে। আমি সবসময় আমার স্নেহের ছাত্রদের বলে থাকি— প্রাতিষ্ঠানিক ছুটিকে মৃত্যুর মত ভয় করো; কারণ এ ছুটির অপব্যবহার একজন তালিবুল ইলমের জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়, নিজের অজান্তে পরিবার ও অভিভাবকের দৃষ্টির আড়ালে ডেকে আনে অনাকাঙ্ক্ষিত পদস্খলন।

কওমি মাদরাসাসহ দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে কুরবানির ছুটি শুরু হয়েছে। কেউ ঈদের দুই তিনদিন আগে আবার কেউ আজ ছুটি পেয়েছে। সে প্রেক্ষিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আপনারা (তালিবুল ইলম) একটা বিশেষ ছুটি পেয়েছেন। এটাকে বিশেষ ছুটি বলা হলেও এক সপ্তাহ বা দশদিন দীর্ঘ হওয়ায় এটা কিছুটা ভীতিরও।

অনেকে তো বলেছেন— এটা বিষাক্ত ছুটি; তবে এ ছুটির ভালো-খারাপ নির্ভর করছে আপনাদের ঈমান-আমল ধরে রাখার ওপর। কারণ মাদরাসায় উস্তাদের কোমল ছায়ায় আপনাদের ভোররাতগুলো ছিল তেলাওয়াতে কুরআনের সুরে ছন্দময়। ইলমের নূরে আলোকময়। সে বরকত কি থাকবে এখন? বাড়ি ঘরে আপনাদের সেই নূরানী ছন্দ এবং আলোর বিচ্ছুরণ থাকবে এখন?

স্নিগ্ধময় তালিবুল ইলম! 
জীবনে চলতে গিয়ে অনেকের সাথে অনেক কথা-বার্তা বা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তাই ছুটি পেয়ে বাড়ি থেকে আপনি আপনার ক্লাসের বন্ধু-সাথীদের কাছে ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিন। কারণ এ ছুটির ভেতর হয়তো আপনিও চিরদিনের ছুটি নিয়ে পাড়ি জমাতে পারেন পরজীবনে। হয়তো এটাই আপনার জীবন ও যৌবনের শেষ পাঠ। এমনকি আমার পক্ষ থেকেও আপনার প্রতি জীবনের শেষ বার্তা।

বাড়ি-ঘরে অবস্থান করছেন আপনি— মা বাবার খুব কাছাকাছি। আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি। আপনাদের নিয়ে ভয় হয়। কারণ তালিবুল ইলমের জন্য ছুটি কোনো আনন্দ বিনোদন বা সুখের নয়; এটা ভয়-আতঙ্ক, হতাশা এবং বেদনার। এমন ছুটিতে অনেক তালিবুল ইলমকে ছিটকে পড়তে হয় নববী ইলমের সোনালি পাঠ থেকে। মনে রাখবেন, এক দিক থেকে এটা কিন্তু ছুটি নয়; ইলম-আমলশূন্য ক্ষতিকর পরিবেশের কারণ এটাকে বিপদের পূর্বাভাসও বলা যায়।

তালিবুল ইলম!
উস্তাদগণ কাছে ডেকে বাড়ির কাজের বিষয়ে আপনাদের যে পরামর্শগুলো দিয়েছেন সেগুলো পরিপূর্ণ মেনে চলার চেষ্টা করা— সর্বাবস্থায় ওযুর সাথে থাকা। নামায কখনও কাজা না করা। ঘরে বসে কুরআন তিলাওয়াত করা। ভোর-রাতে তাহাজ্জুদ পড়া। বিশেষ প্রয়োজনে রোজা রাখা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। সুন্নাতগুলো সর্বদা আমলে রাখা। বেশি বেশি দুরুদ, ইস্তেগফার ও জিকির করা।।

তালিবুল ইলম!
আমাদের উস্তাদরা ছুটি উদযাপনে মাঝে মধ্যে পরামর্শ দিতেন—
'বাড়ি থেকে হাট-বাজার বা দোকানে বেশি বের না হওয়া, বাবা-মায়ের খেদমত করা, দীনি বিষয়গুলো নিয়ে সময়-বুঝে তাদের সাথে আলোচনা করা, কেয়ামতের পূর্বাভাসগুলো শুনিয়ে দেওয়া, নিজেরা কখনও গীবত, মিথ্যাচার, শেকায়েত বা কোনো হিংসা-বিদ্বেষে না জড়ানো, এলাকায় খারাপ ছেলেদের সঙ্গ না দেওয়া এবং বিশেষ কোনো প্রয়োজনে বাইরে গেলেও বাবা মায়ের সেবায় দ্রুত ঘরে ফিরে আসা।'

সুতরাং বুকভরা দরদ ও সাগর সমান ব্যথা নিয়ে আপনাদের জন্য আমরা সবসময় দোয়া করি। আপনাদের এ আলোকিত ইলমী জীবনটা সুন্দর ও সুখময় হোক। সোনালি হরফের জীবন নিয়ে নতুন করে পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখুন। ছুটি— অচেনা পাপের বিষাক্ত গন্তব্যে আপনাদের হারিয়ে যাওয়ার কারণ না হোক। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন!
লেখক: সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরাম,
সম্পাদক, কলমসৈনিক

এমএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ