আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লি ভেঙে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে 'অসাংবিধানিক' আখ্যা দিয়ে তা নাকচ করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি।
পরে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে এ আকস্মিক পদক্ষেপ নেন প্রেসিডেন্ট। বিষয়টি বেআইনি উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন বিরোধীরা। এখন হয় আদালতের সিদ্ধান্তে এ পার্লামেন্ট চলবে অথবা আগাম ভোটে সরকারপ্রধান নির্বাচিত হবেন। তবে পাকিস্তান যে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পেতে যাচ্ছে, গতকালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে তা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে।
এ পরিস্থিতিতে যিনিই এ পদে আসেন না কেন, তাকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। সংবাদমাধ্যম এএফপির এক প্রতিবেদনে সংকটগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
পাকিস্তান এখন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের পথে গেলে তা তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে; বা আদালতের মাধ্যমে হলেও একটা সমাধান আসতে পারে।
যাই হোক না কেন পরবর্তী নেতৃত্বকে দেশটির দুর্বল অর্থনীতি, জঙ্গিবাদের উত্থান ও পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে নড়বড়ে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
২২ কোটি জনসংখ্যার দেশটির সর্বোচ্চ নেতার আগামীর প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনীতি। ভঙ্গুর ঋণ, চলমান মুদ্রাস্ম্ফীতি ও দুর্বল মুদ্রা গত তিন বছরে উন্নয়নকে স্থবির করে রেখেছে। এগুলোর কারণে আগামীতে প্রকৃত প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও সামান্য।
ইসলামাবাদভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকসের (পিআইডিই) ভাইস চ্যান্সেলর নাদিম উল হক বলেন, এখন অর্থনীতির পুনরুত্থান ঘটাতে হলে নীতিগত আমূল পরিবর্তন করতে হবে। মুদ্রাস্ম্ফীতি এখন ১২ শতাংশের ওপরে। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন ডলার, যা জিডিপির ৪৩ শতাংশ। ডলারের তুলনায় রুপির মান নেমে এসেছে ১৮৫-তে।
দ্বিতীয়ত, আগামীর নেতৃত্বকে জঙ্গিবাদের উত্থান ভোগাতে পারে। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় যাওয়ার পর পাকিস্তানে তাদের আদর্শিক সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবানের জঙ্গিদের বেশ কয়েকটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইমরান খান এসব জঙ্গিদের রাজনীতির মূলধারায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিশ্নেষকরা বলছেন, আসন্ন সরকারের জন্য এগুলোর সহজ কোনো সমাধান নেই। নতুন সরকারের জন্য জঙ্গিবাদই বড় ও জটিল সংকট হিসেবে হাজির হবে।
দেশটির খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ ও সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। সম্প্রতি সেখানে সহিংসতাও বেড়েছে। এ অঞ্চলের জন্য দ্বিমুখী ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়েছেন কাকার। তিনি বলেন, বেলুচিস্তানে আস্থা নির্মাণ ও রাজনৈতিক পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ভবিষ্যতে পাকিস্তানের নেতৃত্বকে অবশ্যই বৈদেশিক সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাব তাকে ইমরান খান সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের 'ষড়যন্ত্র' হিসেবে দেখছেন; যা দুই দেশের সম্পর্ককে তলানিতে নিয়ে গেছে।
ইউক্রেনে হামলার মধ্যে মস্কোয় গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইমরান খান। এর আগে বেইজিংয়ে অলিম্পিকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। এ ছাড়া মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং চীনের 'মানবাধিকার লঙ্ঘনে'র বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের প্রতিবাদে অংশ না নিয়ে রাশিয়া ও চীনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ইমরান খান।
এসব কারণে ইমরানের ওপর ক্ষুব্ধ পশ্চিমা বিশ্ব। এমন প্রেক্ষাপটে তার সরকারকে উৎখাত চেষ্টার অভিযোগ করেছেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া এ প্রধানমন্ত্রী।
এরই মধ্যে দেশটির সেনাপ্রধান কামার জাবেদ বাজওয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক পাকিস্তানের এজেন্ডার ওপরের দিকে থাকবে। এ কথার মাধ্যমে সাম্প্রতিক বিরোধ হ্রাসের চেষ্টা করেন তিনি।
-এটি