ঈদ মানে আনন্দ, নতুন পোশাকের হাসি। ঠিক এমনই একটি ছোট্ট চাওয়া ছিল আট বছরের মাহিমের—নতুন জামা। বাবার কাঁধে সে আবদার তুলে দিয়েছিল, ‘ঈদের আগে আমাকে শহর থেকে জামা কিনে দেবে, তাই না আব্বু?’ বাবা মোস্তফা ও মা সেলিনা আর না বলতে পারেননি। সন্তানকে খুশি করতে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনজনেই মোটরসাইকেলে রওনা হন ঝিনাইদহ শহরের দিকে।
কিন্তু আনন্দের সেই পথচলা থেমে গেল এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে।
বিকেল সাড়ে ৪টায় ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের শৈলকুপার ভাটই বাজার এলাকায় তাদের মোটরসাইকেলটিকে মুখোমুখি একটি দ্রুতগতির ট্রাক সজোরে ধাক্কা দেয়। মাহিম ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। আর বাবা মোস্তফা (৪৩) ও মা সেলিনা বেগম (৩৮) প্রাণপণ লড়লেও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মোস্তফা ছিলেন মাইলমারী গ্রামের বাসিন্দা, পিতার নাম বাবর আলী মণ্ডল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, তিনজনের মুখেই ছিল ঈদের প্রস্তুতির উচ্ছ্বাস। মুহূর্তেই সব ছারখার হয়ে যায়। ছোট্ট মাহিমের সেই এক টুকরো আবদার আজ নিঃসীম শূন্যতার প্রতীক।
ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। অনেকে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, “একটি শিশু শুধু তার জন্য নয়, মা-বাবার জন্যও ঈদের খুশি চেয়েছিল। সেই চাওয়া যেন অভিশাপ হয়ে এল।”
ঝিনাইদহ হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট মারুফ হোসেন জানান, “তিনটি মরদেহ বর্তমানে সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ট্রাকটিকে শনাক্ত করতে অভিযান চলছে।”
এই দুর্ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিলো—বাংলাদেশের মহাসড়ক কতটা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জন্য, বিশেষত ঈদ মৌসুমে। জীবন এখানে এতটাই অপ্রতিরোধযোগ্য যে একটি ঈদের জামাই হয়ে উঠতে পারে জীবনের শেষ গন্তব্যের টিকিট।
এসএকে/