সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

কুরবানির আসরে হারজিত কোথায়?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

‘ভাই, দাম কত?’ কুরবানির সময়ে রাস্তা-ঘাটে, পাড়া মহল্লায় এই প্রশ্নটা প্রায়শই ঘুরপাক খায়! ক্রেতা পশুর দাম বললে শুরু হয় আজিব এক গবেষণা--এই দাম দিয়ে পশুটা কিনে সে ঠকেছে নাকি জিতেছে! কেউ দাম জিজ্ঞেস করে ‘জিতেছেন’ বললে ক্রেতার মুখটা আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। যদি বলে, ‘না, ভাই, ঠকেছেন’, তখন মুখটা আক্ষরিক অর্থেই চুপসে যায়! খারাপ হয় মনও। আসলে আজ দাম এবং পশুর মধ্যেই আমরা নির্ধারণ করে ফেলেছি কুরবানির হারজিতের মানদন্ড! 

তাই কুরবানির মৌসুম এলেই আমাদের আলোচনা ঘোরে দাম, ওজন আর বাহারি গরু নিয়ে। কে কত টাকায় গরু কিনেছে, কে কেমন জাতের গরু আনলো—এসব হিসাব যেন কুরবানির মূল উদ্দেশ্যকে পেছনে ঠেলে দেয়। কখনো দেখা যায়, কেউ কম দামে বড়সড় গরু কিনে জয়ী, আর কেউ বেশি দামে ছোট গরু কিনে উপহাসের পাত্র! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—আল্লাহর কাছে আসল ‘হারজিত’ কোথায়? কুরবানির মাহাত্মতো কম দাম-বেশি দামে কেনার মধ্যে নয়! সেই ব্যাপারটা যেন আমরা ভুলেই যাচ্ছি!

ইসলামের দৃষ্টিতে কুরবানি কী?

আল্লাহ তায়ালা বলেন—  "তাদের মাংস ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।" (সূরা হজ: ৩৭)

এই আয়াত থেকেই পরিষ্কার বুঝা যায়, আল্লাহর দরবারে কুরবানির দামে নয়, ওজনে নয়, বাহারেও নয়—মূল বিচার হয় নিয়তের। কে কতটা ইখলাসের সঙ্গে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি দিল, সেটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।

সমাজে প্রচলিত ‘দাম বনাম মান’ ধারণা

আমাদের সমাজে কুরবানি যেন এক ধরনের প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। কে বেশি বড় গরু আনবে, কে কত টাকা খরচ করবে, সেটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে দাম দিয়ে সবচে বাহারি গরুটি এনে প্রদর্শনীও শুরু করে দেয়। তখন গর্বে তার মাটিতেও পা পড়ে না! অথচ রাসুল (সা.) বলতেন,  "আদম সন্তানের জন্য কুরবানির দিন যে আমলটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়, তা হলো কুরবানি।" (তিরমিযি)

হারজিতের প্রকৃত মানদণ্ড

যে ব্যক্তি সীমিত সাধ্যের মধ্যে অল্প টাকায় গরু কিনে কুরবানি করলো, কিন্তু করলো খাঁটি নিয়তে—সে সফল। আর কেউ যদি লাখ টাকার গরু নিয়েও লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কুরবানি করে, তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এখানেই আসল হারজিতের ফয়সালা।

কুরবানি আল্লাহর নির্দেশ পালন, আত্মত্যাগের প্রতীক এবং তাকওয়ার প্রমাণ। গরুর দাম বা বাহারি রঙ নয়, বরং অন্তরের ইখলাস ও শরিয়ত অনুযায়ী আমলই এখানে মুখ্য। আসুন, কুরবানির মূল দর্শনে ফিরে যাই, এবং হারজিতের মানদণ্ড ঠিক করি আল্লাহর সন্তুষ্টির ভিত্তিতে।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ