সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭


ভালো ফলাফল পেতে দোয়া করবেন যে সময়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
প্রতীকি ছবি

মুহিউদ্দীন মাআয,

দোয়া ইবাদতের মূল। দোয়ার মাধ্যমে মানুষের ভাগ্যও পরিবর্তন হয়। হাদিসে এসেছে : রাসূল সা. বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি, হাদিস ২১৩৯)। দুনিয়ার কোনো মানুষের কাছে কিছু চাওয়া হলে সে রাগ করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের ওপর এত বেশি দয়ালু, তার কাছে কিছু চাইলে তিনি খুশি হন। এমনকি না চাইলে তিনি রাগ করেন।

হাদিসে এসেছে, রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগ হন।’ (তিরমিজি, হাদিস ৩২৯৫)। এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা নিজেই তার কাছে চাওয়ার জন্য এবং যা চাইব তা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’ (সূরা মুমিন, আয়াত ৬০)।

তিনি আরও বলেন, ‘হে রাসূল! যখন আমার বান্দা আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দিন- আমি বান্দার খুব কাছেই আছি। সে যখনই আমার কাছে দোয়া করে, আমি তার দোয়া কবুল করি।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)। দোয়া করা বড় উপকারী ইবাদত। কাজেই এই উপকারী ইবাদত তথা দোয়া কবুলের কিছু বিশেষ সময় রয়েছে। যেসব সময়ে দোয়া করলে দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়। দোয়া কবুলের উত্তম সময়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো:-

১. রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে কবুল হয়। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক দিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব সবচেয়ে নীচের আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো, আমাকে ডাকো; আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব। কে আছো, আমার কাছে চাও; আমি তোমাকে দান করবো। কে আছো? আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী; আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব।’ ( মুসলিম- ১২৬৩)।

২. জুমআর দিনের দোয়া। ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমআর দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোনো মুমিন নামাজ পড়া অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ অবশ্যই সে চাহিদা পূরণ করবেন। এবং তিনি তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়ের সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।’ (বুখারি)। সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় এসেছে , ‘আসর হতে মাগরিব পর্যন্ত।’ আবার সহিহ মুসলিম শরিফের বর্ণনায় পাওয়া যায়, ‘জুমার দিন দোয়া কবুলের চূড়ান্ত সময়, ইমামের মিম্বরে বসা হতে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত।’

৩. আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া। ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না।’ (আবু দাউদ)।

৪. সেজদা অবস্থায় দোয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে কাছে চলে যায়, তাহল সেজদার সময়। সুতরাং তোমরা তখন আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাও।’ (মুসলিম- ৭৪৪)।

৫. রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের সময়ের দোয়া : ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘৩ ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেয়া হয় না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে। ন্যায়পরায়ণ শাসক। নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযি)।

৬. কদরের রাতের দোয়া : ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তার আগের (জীবনের) সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (বুখারি)। 

৭. আরাফাতের দিনের দোয়া : ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া।’ (তিরমিযি)। 

৮. বৃষ্টির হওয়ার সময়ের দোয়া : ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি বর্ষণের সময়ের দোয়া।’ (আবু দাউদ-২১৭৮)।

৯. ফরজ নামাজের পরের দোয়া : ‘সাহাবি হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত (সা.)কে জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি বলেন, রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ নামাজের পরে।’ (তিরমিজি, ৩৪২১)।

এছাড়াও নির্যাতিত অবস্থায়, রোগে আক্রান্ত অবস্থায়, বিপদ-আপদের সময়, দূরবর্তী সফরের সময়, সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া খুব বেশি কবুল হয়। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত উল্লিখিত সময়সহ সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা ও আল্লাহকে স্মরণ করা।

লেখক: শিক্ষার্থী ও তরুণ লেখক

এমএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ