গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবার সরব হলেন ব্রিটেনের ৮০০ জনেরও বেশি আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ে স্টারমারের উদ্দেশ্যে পাঠানো একটি খোলা চিঠিতে তাঁরা ইসরাইল ও এর নেতাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছেন।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, গাজায় যা ঘটছে তা শুধুমাত্র একটি সশস্ত্র সংঘাত নয়—বরং তা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের এই নৃশংস ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্রও ক্ষুব্ধ
এক সময় ইসরাইল ছিল পশ্চিমা বিশ্বের নয়নের মণি। যুদ্ধের মাঝেও পশ্চিমা নেতারা চোখ বুজে সমর্থন জানিয়ে আসতেন তেলআভিভকে। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন সেই ব্রিটেনই ইসরাইলের বিরুদ্ধে এক কণ্ঠে কথা বলছে।
দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চিঠিটি শুধু আইনি মতামত নয়, বরং এটি ব্রিটিশ সমাজের একটি স্পষ্ট নৈতিক অবস্থান। চিঠিতে বলা হয়েছে,
"গাজায় বেসামরিক মানুষের ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চলছে তা কোনোভাবেই সভ্যতার পরিচয় হতে পারে না। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এসব কর্মকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।"
বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ ও সমর্থন
এই চিঠির প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, ইসরাইলের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন ক্রমেই কমে আসছে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সদর দফতরে প্রথমবারের মতো উত্তোলন করা হয়েছে ফিলিস্তিনি পতাকা। একইসঙ্গে ফ্রান্স ঘোষণা দিয়েছে, আগামী জুনে জাতিসংঘের এক সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ব্রিটেন ও কানাডাও এই উদ্যোগে অংশগ্রহণে আগ্রহ দেখিয়েছে।
২০২৪ সালের মে মাসে নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড এবং স্পেন একযোগে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর জবাবে ক্ষুব্ধ ইসরাইল তিন দেশের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে এবং পশ্চিম তীরে নতুন করে বসতি সম্প্রসারণের হুমকি দেয়। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের এসব হুমকি এখন আর কেউ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না।
নেতানিয়াহুর কূটনৈতিক ভরসা নেই
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এতদিন যে ভরসায় ছিলেন—সেটি ছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ইসরাইলের পক্ষ থেকে। পলিটিকো এক প্রতিবেদনে জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের আগ্রাসী নীতিতে অসন্তুষ্ট।
এর ফলে নেতানিয়াহু এখন কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছেন। ইউরোপের বড় বড় শক্তি যখন একে একে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তখন ইসরাইলের ঐতিহাসিক মিত্র ব্রিটেনের মধ্য থেকেই এই ধরনের তীব্র প্রতিবাদ ইসরাইলের কূটনৈতিক সংকটের গভীরতাই প্রকাশ করছে।
এনএইচ/