তালেবান সরকারের প্রতি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করেছে রাশিয়া। আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি একে ‘সাহসিক সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কাবুলে রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনোভের সঙ্গে বৈঠকের সময় এ স্বীকৃতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
বৈঠক শেষে আমির খান মুত্তাকি বলেন, "এটি দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গঠনমূলক সহযোগিতার এক নতুন অধ্যায়। এই সিদ্ধান্ত অন্যান্য দেশের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।"
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বিনিয়োগের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে তালেবান সরকার। এবার রাশিয়ার স্বীকৃতি তাদের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "আমরা বিশ্বাস করি, ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানের সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও বেগবান করবে।"
রাশিয়া আফগানিস্তানের জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি ও অবকাঠামো খাতে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বড় সম্ভাবনা দেখছে। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক পাচারের হুমকি মোকাবিলায় কাবুলকে সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে মস্কো।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পরও আফগানিস্তানে দূতাবাস চালু রাখা কয়েকটি দেশের মধ্যে রাশিয়া অন্যতম। রুশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কাবুলের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ সম্প্রসারণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগেও রাশিয়া আফগানিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল। ২০২২ সালে মস্কো প্রথম দেশ হিসেবে তালেবানের সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যার আওতায় আফগানিস্তানে তেল, গ্যাস ও গম সরবরাহের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
চলতি বছরের এপ্রিলে তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেয় রাশিয়া। এর আগে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তালেবানকে ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় মিত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এমনকি ২০১৮ সাল থেকে তালেবান প্রতিনিধিরা নিয়মিত মস্কো সফর করছেন।
তবে দুই দেশের ইতিহাস বেশ জটিল। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তানে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। প্রায় নয় বছরের যুদ্ধে ১৫ হাজার সোভিয়েত সেনা নিহত হয়। মার্কিন সহায়তায় গড়ে ওঠা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল তালেবান, যারা পরে সোভিয়েত বাহিনীকে পরাজিত করে। ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোভিয়েত সেনারা আফগানিস্তান থেকে সরে যায়।
অন্যদিকে, পশ্চিমা বিশ্ব ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তালেবান সরকারের কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। নারীদের শিক্ষা ও স্বাধীনতা খর্ব করা এবং কঠোর শরিয়া আইন বাস্তবায়নের অভিযোগ রয়েছে তালেবানের বিরুদ্ধে। এসব কারণে ২০২১ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আফগানিস্তানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার আওতায় প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করা হয়। এ অর্থ এখনও তালেবান সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও পাকিস্তান কাবুলে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। ভারতও কূটনৈতিক আলোচনা চালালেও তালেবান সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেনি।
এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল।
এনএইচ/